আদালতে দু–দুটি জাল কাবিননামা দাখিলের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার নাম মো. মাহবুবুল আলম। তিনি বন্দর থানাধীন দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের বাসিন্দা। গতকাল সন্ধ্যায় বন্দর থানার মাইলের মাথা এলাকা থেকে বন্দর থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোহাম্মদ সুলতান আহসান উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ওয়ারেন্টমূলে আমরা মাহবুবকে গ্রেপ্তার করেছি। আগামীকাল তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
আদালত সূত্র জানায়, আদালতে দু–দুটি জাল কাবিননামা দাখিলের অভিযোগে গত ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা নিজে বাদী হয়ে মাহবুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকী দুই আসামি হলেন, নগরীর নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী জাহাঙ্গীর আলম হেলালী ও কাজী জামাল উদ্দিন। মামলার এজাহারে বলা হয়, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে ২০২১ সালে মাহবুবের স্ত্রী তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১১(গ) ধারায় একটি মামলা করেন। মামলাটি আপোষযোগ্য হওয়ায় বিচারকালে ট্রাইব্যুনাল উভয়পক্ষকে আপোষের পরামর্শ দিলে বাদী বিবাহের দেনমোহর ৮ লাখ টাকা দাবি করেন এবং এ ৮ লাখ টাকা দেনমোহর পরিশোধ করলে তিনি আপোষ করতে রাজী আছেন মর্মে ট্রাইব্যুনালকে জানান। অপরদিকে ১ লাখ ১ টাকা দেনমোহর ধার্যে বিয়ে হয়েছিল দাবি করে দেনমোহর বাবদ ১ লাখ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে আপোষে রাজী আছেন মর্মে আসামি মাহবুব আলম ট্রাইব্যুনালকে জানান। সে প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল উভয়পক্ষকে নিজ নিজ দাবিকৃত বিবাহের কাবিননামা দাখিল করতে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ১৬ মার্চ ফিরিস্তি যোগে কাজী মৌলানা জামাল উদ্দিনের স্বাক্ষরযুক্ত ১ লাখ ১ টাকা দেনমোহরযুক্ত বিবাহের কাবিননামার একটি সত্যায়িত প্রতিলিপি দাখিল করেন মাহবুব। অপরদিকে বাদী ফিরিস্তি মূলে ৮ লাখ টাকা দেনমোহরযুক্ত কাবিননামার সত্যায়িত অনুলিপি দাখিল করেন। বাদী ও আসামিপক্ষের ভিন্নধর্মী কাবিননামার কোনটি সঠিক তা নিরুপণের পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মাহবুব একই বছরের ৩০ জুন ফিরিস্তিমূলে পুনরায় একই বিবাহ সংক্রান্ত ৩ লাখ টাকা দেনমোহরযুক্ত অপর একটি কাবিননামার সত্যায়িত অনুলিপি দাখিল করেন।
এজাহারে বলা হয়, মামলাটি বিচারকালে উক্ত কাবিননামা ৩ টির সঠিকতা যাচাই বিষয়ে পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রোকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পিবিআই পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন আসামির দাখিলকৃত উভয় কাবিননামা জাল মর্মে রিপোর্ট প্রদান করেন। এজাহারে আরো বলা হয়, মাহবুব কর্তৃক দাখিলকৃত ১ লাখ ১ টাকা দেনমোহরযুক্ত কাজী মৌলানা জামাল উদ্দীনের যোগসাজসে এবং ৩ লাখ টাকা দেনমোহরযুক্ত কাবিননামাটি কাজী মৌলানা জাহাঙ্গীর আলম হেলালীর যোগসাজসে জাল জালিয়াতিমূলে সৃজন করা হয়েছে এবং মাহবুব আলম বাদীকে কম দেনমোহর প্রদান করে অনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে উক্ত জাল কাবিননামা দুইটি আদালতে দাখিল করেছেন।