অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, প্রবীণ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, অসংখ্য আত্মীয়–স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে তার ছেলে মোয়াজ আরিফ গণমাধ্যমকে জানান। ল্যাবএইডের জনসংযোগ কর্মকর্তা চৌধুরী মেহের এ খোদা জানান, বিকাল ৩টার দিকে পরিবারের সদস্যরা উপদেষ্টা হাসান আরিফকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। স্বজনরা বলেছেন, উনি ভাত খাচ্ছিলেন, তার মধ্যেই পড়ে যান। এখানে আনা হলে পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর তিনটা ৩৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আসলে তাকে আমরা মৃত অবস্থাতেই পেয়েছি। তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল।
হাসান আরিফের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই প্রবীণ আইনজীবীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এবং উপদেষ্টা পরিষদে হাসান আরিফের সহকর্মীরাও। এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি এই শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
মিশরে ডি–এইট সম্মেলন শেষে দেশে ফেরার পর বিকালে হাসান আরিফের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রয়াত উপদেষ্টার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দর থেকেই তিনি ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে ছুটে যান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও হাসান আরিফের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাসপাতালে যান।
মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে মন্ত্রী মর্যাদায় ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন এ এফ হাসান আরিফ। বাংলাদেশের সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল বিভিন্ন মামলায় মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী হিসেবেও আদালতে দাঁড়িয়েছেন।
গত ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রথমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছিলেন হাসান আরিফ। পরে তাকে ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
হাসান আরিফ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তিনি ১৯৭০ সাল থেকে আইন পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন।
এর আগে হাসান আরিফ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে আছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এঙচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম স্টক এঙচেঞ্জ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং গ্রামীণফোন বাংলাদেশ।
মেয়ে দেশে ফিরলে দাফনের সিদ্ধান্ত : মেয়ে দেশে ফেরার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত তার মেয়ে দেশে ফেরার পর দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তার মেয়ে রোববার রাত সাড়ে ১০টায় দেশে পৌঁছাবেন।
এদিকে মরহুম হাসান আরিফের প্রথম নামাজে জানাজা গতকাল শুক্রবার বাদ এশা ধানমন্ডি ৭ নম্বর জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় জানাজা আজ সকাল ১১টায় হাইকোর্ট চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে হাসান আরিফকে দাফন করা হবে।
চট্টগ্রামে শোক : অর্ন্তবর্তী সরকারের ভূমি এবং বেসরকারি বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা, দেশের খ্যাতনামা আইনজীবী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান ও চট্টগ্রাম মহানগর জামাতের আমীর শাহজাহান চৌধুরী।