প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংটা ভাল ছিল কিন্তু বোলিংটা হয়নি। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটে–বলে কোনটিই হয়নি। তৃতীয় ম্যাচে আবার ব্যাটিং হলো। কিন্তু বোলিং একেবারে জিরো। আর এমন পরিস্থিতিতে হারটাইতো অবশ্যম্ভাবী। তিনশর বেশি রান করেও হারল বাংলাদেশ। সে সাথে হলো হোয়াইটওয়াশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে নিজেদের রেকর্ড ৩২১ রান করে বাংলাদেশ। কিন্তু অভিষিক্ত আমির জাঙ্গুর সেঞ্চুরি এবং কেসি কার্টি ও গুডাকেশ মোটিদের ঝড়ে যথেষ্ট হয়নি তা। সেন্ট কিটসে রান তাড়ার নতুন রেকর্ড গড়ে ২৫ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২৯৫ রানের লক্ষ্য সফলভাবে তাড়া করে রেকর্ড গড়েছিল তারা। এবার সেটিই নতুন করে লিখেছে স্বাগতিকরা। শেষ ম্যাচে ৪ উইকেটের জয়ে দশ বছর পর ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর আগের দুই সিরিজেই ক্যারিবিয়ানদের কোনো ম্যাচ জিততে দেয়নি বাংলাদেশ। এর আগে ২০২১ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশড হয়েছিল বাংলাদেশ। সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ও ১৫ সিরিজ পর আবার এই তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো তাদের। এই ম্যাচেও টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরেন তানজিদ তামিম এবং লিটন দাশ।
তানজিদ হাসান, লিটন কুমার দাসের। ৯ রানে নেই দুই উইকেট। এরপর হাল ধরেন সৌম্য এবং মিরাজ। দুজন দলকে টানেন বেশ ভালভাবেই। দুজনই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ৩টি করে চার–ছক্কায় ৫৮ বলে ফিফটি করেন সৌম্য। একই ওভারে পঞ্চাশে পা রাখা মিরাজের লাগে ৫৬ বল। দলকে দেড়শর কাছে রেখে বিদায় নেন সৌম্য। তার বিদায়ে ভাঙে ১২৭ বলে ১৩৬ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। ৭৩ বলে ৬ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কায় ৭৩ রান করেন বাঁহাতি সৌম্য। এরপর আফিফকে নিয়ে ২৬ রান যোগ করেন মিরাজ। পরপর দুই ওভারে ফিরেন দুজন। চলতি সিরিজে দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ৭৭ রান করে ফিরেন মিরাজ।
৬ চার ও ২ ছক্কায় ৭৩ বলের ইনিংস সাজান বাংলাদেশ অধিনায়ক। আর ১৫ রান করতে ২৯ বল খেলেন আফিফ। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের। তবে শেষ দশ ওভারে ঝড় তুলে ১০৪ রান যোগ করেন তারা। এ দুজনের কল্যানে ৩২১ রানের পাহাড়ে উঠে বাংলাদেশ। এর আগে ওয়েস্টইন্ডিজের মাঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৩০১ রান। মাহমুদউল্লাহ ৮৪ আর জাকের ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভুলে যাওয়ার মতো ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। দ্বিতীয় ওভারে আলিক আথানেজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন ব্র্যান্ডন কিং। নাসুমের পরের ওভারে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন আথানেজ।
পঞ্চম ওভারে শেই হোপকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেন হাসান মাহমুদ। ৩১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন বিপদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুর ধাক্কা সামলে চতুর্থ উইকেটে ৫৫ রানের জুটি গড়েন কার্টি ও শেরফেইন রাদারফোর্ড। দলকে একশর কাছে নিয়ে গিয়ে ৩৩ বলে ৩০ রান করে ফিরেন রাদারফোর্ড। এরপর অভিষিক্ত জাঙ্গুকে নিয়ে এগোতে থাকেন কার্টি। দুজনের জুটি পঞ্চাশ পূর্ণ করার পর নাসুমের বলে আম্পায়ার্স কলের সৌজন্যে বেঁচে যান তিনি। এর বাইরে বাংলাদেশের বোলারদের তেমন কোনো সুযোগই দেননি দুই ব্যাটসম্যান। কার্টি ফিফটি করেন ৪৮ বলে। আর অভিষেকে পঞ্চাশ ছুঁতে জাঙ্গু খেলেন ৪৫ বল।
শেষ পর্যন্ত সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন ৯৫ রান করা কার্টি। কার্টির বিদায়ে ভাঙে ১১৫ বলে ১৩২ রানের জুটি। রোস্টন চেইস ফিরেন ১৯ বলে ১২ রান করে। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে ফেরান রিশাদ। চার ওভারের মধ্যে দুই উইকেট নিয়ে তখন ম্যাচে ফেরার আশায় বাংলাদেশ। কিন্তু গুডাকেশ মোটিকে নিয়ে ৫৩ বলে ৯১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলের সহজ করে দেন জাঙ্গু। আফিফ হোসেনের বলে লং দিয়ে ছক্কা মেরে মাত্র ৭৯ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জাঙ্গু। পরের ওভারে রিশাদের বল জোড়া ছক্কায় উড়িয়ে ম্যাচ শেষ করেন মোটি। ৮৩ বলের ইনিংসে ৬ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মারেন জাঙ্গু। ৩টি করে চার–ছক্কায় ৩১ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন মোটি।