বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রীসহ যে কেউ যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে সেই ব্যবস্থা দলের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করার কথা তুলে ধরেছেন তারেক রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীতে এক সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে কী করবে সেটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই, সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমাদের আগামীর বাংলাদেশে আর কোনো ব্যক্তি এমনকি প্রধানমন্ত্রীও স্বৈরাচারী হয়ে যেন ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে বা পারবে না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের প্রতিটি লেভেলে চেষ্টা করা হবে কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মতামত স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা মানবাধিকার, মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী ও সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। খবর বিডিনিউজের।
সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা তুলে ধরে তারেক বলেন, আমাদের লক্ষ্য এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা যেখানে ইউটিউব, ফেসবুক এবং অনলাইন প্লাটফর্মে নিজের ভাবনা প্রকাশের কারণে কিংবা প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিষয়ে মন্তব্যের দায়ে কাউকে যেন হেনস্তা করা না হয়। সত্য গোপন করতে মেইন স্ট্রিম অ্যান্ড সোশ্যাল মিডিয়া যেন বাধ্য না হয়। এমনকি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেটি প্রচারেও সরকার কাউকে চাপ দেবে না। তবে দেশ গঠনের দায়িত্ব সবার। আমরা মিডিয়ার নিউট্রাল ও অবজেক্টিভ রোল প্রত্যাশা করি। গত ১৬ বছরে গুম ও খুনের মাধ্যমে দেশে ভয়ের যে সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে তা বিএনপি নির্মূল করবে বলেও অঙ্গীকার করেন তারেক। গুলশানে লেকশোর হোটেলের মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।
সেমিনারে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের রূপরেখার পটভূমি তুলে ধরেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ। এরপর দলের তৈরি একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা দেওয়া হয়। পরে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে বিএনপি সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে চায় যাতে কেউ পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন। আমরা আইন–বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে চাই। রাষ্ট্র পরিচালনায় সমাজের জ্ঞানী–গুণীদের প্রতিনিধিত্ব এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দ্বি–কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট সিস্টেম প্রবর্তন করতে চাই। তিনি তরুণ বেকারদের কর্মসংস্থান ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরে বেকার ভাতা চালুর কথা বলেন।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে শামা ওবায়েদ ও ফারজানা শারমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামীর রফিকুল ইসলাম খান, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান ও অ্যাডভোকেটে এলিনা খান বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতের হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নুরুল আমিন বেপারি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।