চট্টগ্রামে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ৯৫০ পিস বেশি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সাড়ে তিন লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। তবে এ বছর সংগ্রহ হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৫০ পিস চামড়া। এরমধ্যে গরুর চামড়া সংগ্রহ করা হয় দুই লাখ ৯৭ হাজার ১৫০ পিস, মহিষের চামড়া ১২ হাজার ২০০ পিস এবং ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৬০০ পিস। অপরদিকে করোনাকালে মৃতদেহ দাফন–সৎকার কার্যক্রমে আলোচনায় আসা গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা গত বছরের মতো এবারও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন।
আড়তদাররা বলছেন, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা চট্টগ্রাম নগরী ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাকে ট্রাকে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। এর অধিকাংশই বিনামূল্যে। এর ফলে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সুবিধা করতে পারেনি। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার আজাদীকে বলেন, গাউসিয়া কমিটি চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর–দক্ষিণ থেকে ট্রাকে ট্রাকে এক লাখ পিসের মতো চামড়া সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত চামড়ার একটি বড় অংশ নিজেদের ব্যবস্থাপনায় লবণযুক্ত করে সংরক্ষণ করেছি। অন্যদিকে আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী মো. ইমরান বলেন, আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে আমাদের এ বছর প্রচুর পরিমাণে লোকসান দিতে হয়েছে। গত বছর ১০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম। এ বছর যে চামড়া ৬০০–৭০০ টাকায় কিনেছি, সেগুলো বিক্রি করতে হয়েছে গড়ে ৩০০ টাকায়। আড়তদাররা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেধে দেওয়া দরে চামড়া কিনেননি।
এই ব্যাপারে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, নগরীতে আমরা যেসব চামড়া সংরক্ষণ করেছি তার বাইরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা বিশেষ করে আমিরাবাদ, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, রাঙ্গুনিয়া–কাপ্তাই, হাটহাজারী–নাজিরহাট, ফটিকছড়ি ও রাউজানে অনেক চামড়া লবণ দিয়ে মজুত করে রাখা হয়েছে। এগুলো আস্তে আস্তে আমাদের আড়তে আসবে। এখানে গাউসিয়া কমিটিও ২০ হাজারের মতো চামড়া সংগ্রহ করেছে। সেগুলো আমাদের সমিতির সদস্য মো. আলীর কাছে বিক্রি করেছে।
মো. মুসলিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আমরা ন্যায্য দামেই চামড়া সংগ্রহ করেছি। আমাদের যতটুকু ধারণ ক্ষমতা বরং তারা চেয়ে বেশি চামড়া আমরা কিনেছি। বর্তমানে চট্টগ্রামে আড়তদারের সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ জন। তাদের অনেকের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার পরও চামড়া সংগ্রহ করেছেন। আমাদেরকে প্রশাসন থেকে বারবার বলা হয়েছে যাতে চামড়া নষ্ট না হয়। সেজন্য আমরা অনেকেই ধার দেনা করে অতিরিক্ত চামড়া সংগ্রহ করেছি।
মুসলিম উদ্দিন বলেন, সরকার নির্ধারিত যে মূল্য থাকে, সেই দরে ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কিনেন। কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সেটা না বুঝে তাদের ‘ইচ্ছেমত’ দামে চামড়া কিনেছেন। পরে আড়তে বিক্রি করতে গিয়ে চাহিদামত দাম না পাওয়ায় অভিযোগ তুলছেন। এবার কোনো চামড়া নষ্ট হয়নি বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, এ বছর সরকার ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ৫০–৫৫ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম এ বছর ২০–২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮–২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।