মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনায় পরিপূর্ণ ঋদ্ধ বর্তমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেশকে অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে নিয়ে বিশ্বপরিমন্ডলে অনন্য উচ্চতায় সমাসীন করেছেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ইতিমধ্যে করোনা যুদ্ধজয়ের আপতিক গৌরবগাঁথায় দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। চলমান বৈশ্বিক মহামন্দা অতিক্রান্তে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি সচলতায় বিভিন্ন কার্যকর–সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ৫০ বৎসরের অধিক অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কর্মযজ্ঞকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রায় সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিক্রমা তথা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নের রোড়ম্যাপে অগ্রসরমান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, লিঙ্গ সমতা, দরিদ্রতার হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শ্রমঘন রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও রাজস্ব উন্নয়ন, পোশাক ও ঔষধ শিল্পকে রপ্তানিমুখীকরণ ইত্যাদি আজ দেশের সামগ্রিক মানচিত্রে যুগান্তকারী অভিধায় সমুজ্জ্বল। অন্যদিকে ভৌত অবকাঠামো, যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, পদ্মাসেতু, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীরসমুদ্র বন্দর, মেট্রোরেল, পরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয়–ব্যবহার যোগ্য পানি প্রকল্প ও সুয়ারেজ প্রকল্পের বাস্তবায়নসহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট–১ উৎক্ষেপণের মত সফলতা–সক্ষমতা অর্জন বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃত।
আমদানি–রপ্তানি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বন্দরের সক্ষমতা অর্জনে বর্তমান সরকার কনটেইনার টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠাসহ বে–টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কৃষির আধুনিকায়ন, নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং সার উৎপাদন–আমদানিতে সরকারি ভর্তুকি দেওয়ার ফলে দেশ কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বে ধান, সবজি ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ যথাক্রমে তৃতীয় ও ১ম অবস্থানে রয়েছে। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে চার বার সারের দাম কমানো, ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাব খোলা, সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের ব্যাংক হিসাবে জমাদান ও ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকদের মাঝে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণের মতো যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে কৃষিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শিল্পায়নের অপরিহার্য উপাদান বিদ্যুৎ–গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধিতে সরকারের সবিশেষ প্রাধান্য আরোপের ফলশ্রুতিতে বিরাজিত জ্বালানি সঙ্কটের পূর্বে ২৫ হাজার ২৩৫ মেঘাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছিল। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী ও মাতারবাড়িতে আরও ৭ হাজার ৮০০ মেঘাওয়াট এবং ২ হাজার ৪০০ মেঘাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।
জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির প্রণয়ন বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জন। বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। উপজেলা ও জেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুযোগ–সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। হৃদরোগ, কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, নিউরো, চক্ষু, বার্ণ, নাক–কান–গলাসহ বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় ন্যূনতম একটি করে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সব হাসপাতালে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতসহ সামাজিক খাতসমূহে অধিক বিনিয়োগের অপরিহার্যতায় সরকার সংশ্লিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করেছে। দেশী–বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস নির্মাণসহ দেশের প্রতিটি জেলা–উপজেলায় পর্যায়ক্রমে ৫৬০টি মডেল মসজিদ কাম ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে।
টানা তিন দফায় পরিচালিত সরকারের নারী উন্নয়নে অভূতপূর্ব অর্জন শুধু দেশে নয় বিশ্বপরিমন্ডলেও উচুমাত্রিকতায় সমাদৃত। একান্ত নিজস্ব ব্যক্তিত্ব–বৈশিষ্ট্যে অত্যুজ্জ্বল দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের অদম্য উন্নয়ন অগ্রগতি পরিক্রমায় নারী উন্নয়নে প্রণিধানযোগ্য গুরুত্বারোপ অব্যাহত রেখেছেন। সৃজনশীল মেধাকর্ম হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহ–ভূমহীন পরিবারের নারীদের সামাজিক নিরাপত্তায় বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিভাত। সর্বক্ষেত্রে সন্তানের পরিচয় ও নিবন্ধনে বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম যুক্ত করা এবং শিক্ষার বিনিময়ে ছাত্রছাত্রীদের সরকারি উপবৃত্তির টাকা মায়ের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থাও উল্লেখযোগ্য। সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীসহ সামরিক বাহিনীতে নারীদের অধিক অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ–উচ্চ পদগুলোতে নারীদের নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ বিশ্বস্বীকৃত। অতিসম্প্রতি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক এবং ৩৯টি জেলায় একযোগে ১৫০টি সেতু ও ১৪টি ওভারপাসের উদ্বোধন দেশের যোগাযোগ উন্নয়নে নতুন মাত্রিকতা পেয়েছে।
দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেক নবতর স্মারক চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে দেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তির উদ্দেশ্যে এই টানেল নির্মাণ যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে দীর্ঘতম টানেল। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও চীনের মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। চীনের সাংহাইয়ের আদলে নদীর দুই তীরকে একই বন্ধনে আবদ্ধ করবে দৃষ্টিনন্দন এই টানেল। প্রকল্প প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার দুটি টিউব দিয়ে যান চলাচল করবে। প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং টিউবগুলোর দূরত্ব প্রায় ১২ মিটার। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে রয়েছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের ওভারব্রিজ। বাংলাদেশ ও চীন সরকার ‘জি টু জি’ অর্থায়নে এই টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম–দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর মতো বঙ্গবন্ধু টানেলের ইতিবাচক–গুরুত্বপূর্ণ উপমা স্থাপনের বিষয়টি সহজেই অনুমেয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিকশিত হবে কর্ণফুলির দক্ষিণপাড় আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পায়ন এবং বদলে যাবে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের দৃশ্যপট। টানেলকে ঘিরে মিরসরাই থেকে কঙবাজার পর্যন্ত রয়েছে বিনিয়োগের বিশাল সম্ভবানা। টানেল ব্যবহার করে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সারা দেশের কারখানার পণ্য দ্রুত সময়ে কঙবাজারের মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে আনা–নেওয়া সম্ভব হবে চট্টগ্রাম শহর এড়িয়ে যোগাযোগ সুবিধার কারণে টানেলের মাধ্যমে শিল্পকারখানার কাঁচামাল যেমন সহজে স্থানান্তর করা যাবে, তেমনি প্রস্তুত পণ্যও সারা দেশে নির্বিঘ্নে নেওয়া যাবে। তবে মিরসরাই থেকে টানেল হয়ে কঙবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ হলে বহুবিস্তৃত উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে মিরসরাই থেকে কঙবাজার পর্যন্ত সাগর উপকূল ধরে মেরিন ড্রাইভের আশপাশের দীর্ঘ এলাকা দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প করিডোরে রূপ নেবে। টানেল ব্যবহারে শুধু অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিস্তৃত হবে না, টানেলকে ঘিরে উদ্ভাসিত হবে চট্টগ্রাম–কঙবাজার–টেকনাফ–সেন্টমার্টিন–পার্বত্য অঞ্চলের সমুদয় পর্যটনশিল্প। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি–দারিদ্র্য দূরীকরণসহ নানাবিধ কর্মকান্ডের ব্যাপক পরিবর্তনের অভূতপূর্ব আশা–প্রত্যাশা বিপুলভাবে অনুভূত। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু টানেল পূর্ণাঙ্গ চালু হলে ফিনান্সিয়াল ও ইকোনোমিক ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন (আইআরআর) এর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৬ দশমিক ১৯ ও ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এছাড়া ফিনান্সিয়াল ও ইকোনোমিক বেনিফিট কস্ট রেশিও এর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ১ দশমিক শূন্য ৫ ও ১ দশমিক ৫। বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই টানেল ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করবে চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়ককে। একইভাবে চট্টগ্রামের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও সহজ এবং চট্টগ্রাম শহর–বন্দর ও বিমানবন্দরের সাথে উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপিত হবে। এছাড়াও প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা–চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়ককে টানেলে যুক্ত করলে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরত্ব কমে যাবে। কর্ণফুলি টানেল শুধু দেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে না; দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে কঙবাজার–সেন্টমার্টিন–বান্দরবান ভ্রমনকারী দেশি–বিদেশি পর্যটকদের সহজতর যোগাযোগব্যবস্থার ক্ষেত্রেও মূখ্য ভূমিকা রাখবে। মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল ও মিরসরাই বন্দরের সাথে বঙ্গবন্ধু টানেল যুক্ত হলে সহজ যোগাযোগ গড়ে উঠবে। সমীক্ষা অনুসারে টানেল পুরোদমে চালু হলে প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার গাড়ি চলাচল করবে। প্রতি বছর ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে যান চলাচল। এ হিসাবে ২০৩০ সালে চলাচল করবে ৩৮ হাজার। ২০৪০ সালে তা বেড়ে হবে ৬২ হাজার এবং ২০৬০ সালে দৈনিক গড়ে যান চলাচল করবে ১ লাখ ৩০ হাজার।
বঙ্গবন্ধু টানেলের বদৌলতে বৃহত্তর চট্টগ্রামে অপার সম্ভাবনার হাতছানি নিগূঢ় পরিলক্ষিত। ইতোমধ্যে এলাকায় রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ, বহু বাণিজ্যিক–আবাসিক বহুতল ভবন নির্মাণ, নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন–পুরাতন কারখানা সম্প্রসারণ ও ভবিষ্যতে কারখানা গড়ে তোলার জন্য দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের অগ্রিম জমি ক্রয়সহ নানামুখী উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ অতিশয় দৃশ্যমান। গণমাধ্যমে প্রকাশিত চট্টগ্রাম চেম্বারের তথ্যানুসারে, ব্যবসায়ীরা আগামী চার বছরে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে গার্মেন্ট, জাহাজ নির্মাণ, ভোজ্যতেল, মাছ প্রক্রিয়াকরণ, ইস্পাত, সিমেন্টসহ অন্তত একশ শিল্প কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চায়না ইকোনমিক জোনে দেশি–বিদেশি প্রায় ১৫টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। কোরিয়ান ইপিজেডেও শুরু হয়েছে ৪টি নতুন কারখানার কাজ। টানেল থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে একটি কোম্পানির ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এছাড়া কক্সবাজারে চারটি ও চট্টগ্রামে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগগুলোও বঙ্গবন্ধু টানেলের সুফল ভোগ করবে। এটি সুস্পষ্ট যে, এই নব নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল উন্নয়নের নবযুগে পদার্পণে শুধু অন্যন্য সাধারণ প্রতীক হিসেবে নয়; চট্টগ্রামসহ পুরোদেশের এবং সামগ্রিক অর্থে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসা–বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অচিরেই এই টানেলের উপযোগিতা সকল ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হবে। মূলতঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে টানেলের নামাকরণ নতুন সার্থকতায় পুরো বাঙালি জাতিকে নবতর পরিচয়ে অত্যুজ্জ্বল করবেই।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়