চট্টগ্রামের সাথে ভারতের সীমান্ত সংযোগ ছিল এতকাল অনেক ঘুরপথে। এখন আর কোনো দূরের পথে নয়। রামগড় স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে ভারত থেকে সড়ক পথে পণ্য রপ্তানি আমদানির জন্য ৩৮ কিলোমিটারের বারইয়ারহাট–হেঁয়াকো–রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। মীরসরাই উপজেলা দিয়ে এর বৃহত্তর অংশে সড়কটি লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাস থেকে ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়। রামগড়ে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু হলেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টায় পণ্য যাবে ভারতে। উত্তর চট্টগ্রামের লোকজন চাইলে সকাল–বিকাল বৈধ প্রক্রিয়ায় ভারতে যাওয়া আসা করতে পারবে। পূর্বের সকল সময়ের চেয়ে গতিশীল হবে অর্থনীতির চাকা।
২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল দিল্লিতে এ বিষয়ে দুদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে এর কাজ চলমান। ইতিমধ্যে দুদেশের আমদানি রপ্তানির লক্ষ্যে ইমিগ্রেশন কাস্টমস হোম নির্মাণ কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা মাত্র। আনুষ্ঠানিকতাই অবশিষ্ট শুধু।
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের বারইয়ারহাট–হেঁয়াকো–রামগড় সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ভারত সরকারের এলওসি–৩ এবং বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১শ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার দেবে ৫শত ১৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে ৫শ ৯৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ঋণ দেবে ভারত সরকার। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ২৪৯.২০ মিটারের ৯টি সেতু ও ১০৮ মিটারের ২৩টি কালভার্ট ও ৩৮ ফুট প্রস্থের ৩৮ কিলোমিটার সড়ক। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরত্বে রামগড় স্থলবন্দরটি ব্যবহার করে মাত্র ৩ ঘণ্টায় পণ্য যাবে ভারতে। এর আগে অন্য একটি প্রকল্পে বারইয়ারহাট–হেঁয়াকো–রামগড় সড়কে ২৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকার অর্থায়নে রামগড় থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত ১৬টি ব্রিজ ও কালভার্টের কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিপিসিএল। ব্রিজ ছাড়াও ব্রিজের পাশে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করে তারা।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জুলফিকার আহম্মদ জানান, সিপিসিএলের পাওয়া ১৬টি ব্রিজ কালভার্ট ও এপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ করে চলতি বছরের এপ্রিলে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ মে বারইয়ারহাট–হেঁয়াকো–রামগড় সড়ক প্রশস্থকরণের কাজ ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর পর জুন মাসে ব্রিজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তবে জুলাই– আগস্টে কিছুটা বৃষ্টি থাকায় কাজের অগ্রগতি কিছুটা ধীর। দেড় বছর মেয়াদের এই প্রকল্পে কাজ শেষ হবে আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বরে। সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে রামগড়ের যোগাযোগ আরো সহজ হবে।
মীরসরাই–সোনাগাজী ও সীতাকুন্ডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে উৎপাদিত পণ্য খুব সহজে ভারতে রপ্তানি করা যাবে। সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ পেয়েছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অশোকা বিল্ডকন লিমিটেড। রামগড়ের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে ইতোমধ্যে মীরসরাই–ফটিকছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রামের সড়ক ব্যবস্থাপনায় এসেছে বৈপ্লবিক উন্নয়ন। এছাড়া মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের নানা কর্মকাণ্ডে বারইয়ারহাট–হেঁয়াকো–রামগড় সড়ক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র পরিচালক ও ক্লিফটন গ্রুপের সিইও মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়িক ও ভৌগলিক কারণে এটি পজেটিভ দিক। সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যের জন্য এটি দরকার। বাণিজ্য বাড়বে ব্যবসা বাড়বে। ওই এলাকাগুলো পর্যটনের আওতায় আসবে। কারণ কানেক্টিভিটি পেলে এখান থেকে পণ্য যাবে ও আসবে।
সরেজমিনে মীরসরাইয়ের বারইয়ারহাট ও করেরহাট অংশে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য সড়কের পাশে থাকা গাছ ও স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সড়ক ও জনপথের জায়গা থেকে যারা এখনো স্থাপনা সরিয়ে নেয়নি তাদের দ্রুত সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। এক দিকে বৃষ্টি অন্যদিকে পাহাড়ি জনপথ হওয়ায় দেড় বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয় ।
জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, চলতি বছরের জুন মাসে বারইয়ারহাট–হেঁয়াকো–রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে জুন–জুলাইয়ে বৃষ্টি থাকায় কাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি। ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সকল কাজ শেষ হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এই বিষয়ে রামগড় স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক মো. সরোয়ার আলম বলেন, রামগড়–সাব্রুম স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালুর প্রস্তুুতি দেখার জন্য ভারতীয় প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছে। ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করার জন্য রামগড় ইমিগ্রেশন ভবন পুরোপুরি প্রস্তুত। আশা করা যাচ্ছে শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী ইমিগ্রেশন কার্যক্রম উদ্বোধনের দিন ও তারিখ ঠিক করবেন।