২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এই উপমহাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস একই সূত্রে গ্রথিত। এদেশের মানুষের ভালবাসায় সিক্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের প্রতিটি বাঁক পরিবর্তনকারী সংগ্রামে যুগান্তকারী নেতৃত্ব দিয়েছে। আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অভিন্ন সত্তা। এই সংগঠনের বর্তমান সভানেত্রী বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত, বাংলাদেশের তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল আজ আরোও বেশি সুসংগঠিত। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ একটি সক্ষম দলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রয়েছে বর্ণাঢ্য ইতিহাস। জন্মলগ্ন থেকে এই সংগঠন নিপীড়িত বাঙালি জাতির প্রতিনিধিত্ব করছে। পথ চলার বাঁকে বাঁকে বঞ্চিত মানুষের অধিকার ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবিরত। গ্রহণযোগ্য কর্মসূচী, নির্বাচন ও জনসম্পৃক্ত নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রকৃত অর্থেই জনগণের দলে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে আওয়ামী লীগের মত এমন পরিপূর্ণ রাজনৈতিক দল বিরল। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাঙালি অর্জন করেছে ভাষার অধিকার, বাঙালির জন্য একটি রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বাঙালির যা কিছু অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে একটি উন্নত দেশ অর্জনের পথে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে শেখ হাসিনা পর্যন্ত এক নিরবচ্ছিন্ন আদর্শ চর্চা এবং একটি অঙ্গীকারের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
অনেক রক্তমাখা পথ পাড়ি দিয়ে এই দলটি দীর্ঘ ৭৩ বছর অত করেছে গৌরবের সাথে। এই সংগঠনের অগ্রযাত্রার সাথে মিশে আছে বহু প্রাণের আত্মদান। দলের পতাকা উড্ডীন রাখতে নেতাকর্মীদের দিতে হয়েছে জীবন যৌবন। সুতরাং আওয়ামী লীগ একটি শুধু রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি গভীর অনুভূতির নাম। দেশ ও জাতির প্রতি আওয়ামী লীগের রয়েছে সুদৃঢ় কমিটমেন্ট। দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিরাপদ করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতন্দ্র প্রহরী। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যর রূপকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাঙালির স্বতন্ত্র জাতি পরিচয় ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুমহান কৃতিত্ব রয়েছে আওয়ামী লীগের। এদেশের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন। ১৯৪৭ সালের এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়।
স্বাধীন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পাকিস্তানের প্রথম প্রকৃত বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। জন্মলগ্নে এই দলের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। ১৯৫৫ সালে এই দল ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। দলের পুনঃ নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিস্মরণীয় নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একটি জাতীয়তাবাদী দলের চরিত্র গ্রহণ করে এবং নিজেদের মর্যাদার লড়াই শুরু করে। এরই পরিমায় ১৯৭১–এ মহান মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টি আওয়ামী লীগের অনন্য ঐতিহাসিক অবদান। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ইতিহাসের নটরাজ বিশ্বাস ঘাতকদের ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে প্রগতির চলমান অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার বারংবার চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের হত্যা করে কূ–ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রাকে বার বার থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্ঠায় লিপ্ত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র পরাজিত করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যখনই আঘাত এসেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ততবারই উজ্জীবিত হয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্রই আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে পারেনি। ১৯৮১ সালে ১৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনা এই দলের সভানেত্রী হয়ে বাংলাদেশে আগমনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যেন নতুন জীবন ফিরে পায়। শেখ হাসিনার সাহসী ও সময় উপযোগী নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা নবউদ্যোমে দলকে সংগঠিত করার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ সত্যিকার অর্থেই একটি অগ্রগামী রাষ্ট্রের চিন্তার ধারক ও বাহক। এই দলের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রাণান্ত চেষ্ঠায় বাংলাদেশ এখন বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের মুহুর্মুহু আμমণের মধ্যেও তিনি দৃঢ়তার সাথে একটি মহান ভিশন নিয়ে বাংলাদেশকে সৃমদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র মুজিব কন্যার সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের স্বাক্ষর মূর্তমান হচ্ছে। একজন যর্থাথ রাষ্টনায়ক হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা দূরদর্শিতার সাথে লড়াই করছেন। শেখ হাসিনার হাত ধরেই আগামী ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ নির্মিত হবে। শেখ হাসিনার ভিশনের পথ ধরেই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ কায়েম হবে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত মিলোনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল্ড (এমডিজি) বাস্তবায়ন করে স্যানিটেশন ও নারীর ক্ষমতায়নসহ পাঁচটি বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ কর্তৃক এ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। জাতিসংঘ প্রণিত সার্সটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল্ড (এসডিজি) বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশ। একটি দলের ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিয়ে অনেকেই গবেষণা করেছেন। রচিত হয়েছে পিএইচডি অভিসন্দর্ভ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন–শ্যামলী ঘোষ। ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি– The East Pakistan Awami League, ১৯৫৮–১৯৭১ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করেন। শ্যামলী ঘোষের এই অভিসন্দর্ভটি পরে ঞযব অধিসর খবধমঁব, ১৯৪৯–১৯৭১ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ ইউপিএল ১৯৯০ সালে গ্রন্থটির বঙ্গানুবাদ ‘আওয়ামী লীগ, ১৯৪৯–১৯৭১’ নামে প্রকাশ করে। ৩৪৬ পৃষ্ঠায় এই গ্রন্থটিও শেষ হয়েছে ১৯৭১ সালে।
প্রসঙ্গত এখানে দু’একজন পূর্বসূরির কথা স্মরণ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস রচনায় পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন জনাব আবু আল সাঈদ। ১৯৯৩ সালে আবু আল সাঈদ প্রণীত ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস’ [১৯৪৯–১৯৭১] প্রকাশ করে ‘সাহিত্য প্রকাশ’। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার একান্ত আগ্রহ এবং উদ্যোগে নতুন প্রজন্মের দলীয় নেতাকর্মীদের জানা–বোঝা এবং অনুসিন্ধৎসু পাঠক, ইতিহাসবিদ, গবেষকদের সুবিধার জন্য ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও নির্বাচিত দলিল রচিত ও উৎথাপিত হয়। যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও নির্বাচিত দলিল (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড) ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়। রচনা, গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ–উল–আলম লেলিন। এই ইতিহাসই হচ্ছে বাঙালির ঐতিহাসিক দলিল। জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে অসামান্য দলিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস। শিক্ষা, জ্ঞান–বিজ্ঞানের চর্চা ব্যতীত কোনো দল বা জাতি সফলতা অর্জন করতে পারে না।
তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে সময় ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যেভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেভাবে দলকে এগিয়ে নিতে আমাদের নেতাকর্মীদের প্রজ্ঞাবান হওয়া দরকার। মেধা ও যুক্তি নির্ভর আদর্শিক রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া আদর্শ আমাদের পাথেয়, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সংগ্রামের প্রেরণা। বাংলাদেশ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জেগে থাকবে, আমরা জেগে থাকব।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।