সিদ্দিক বাজারে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৯ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সময় তখন আনুমানিক পৌনে পাঁচটা। অন্য সময়ের মতই যানজটে ঠাসা গুলিস্তানের সড়ক। বাসরিকশার পাশাপাশি প্রাইভেটকার ও ঠেলাগাড়ি গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এসময় হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে সবকিছু, ধোঁয়ায় কয়েক হাত দূরেও জিনিসও দৃষ্টিসামীর বাইরে চলে যায়। গত মঙ্গলবার বিকালে বিকট সেই শব্দের ঘোর কাটতে না কাটতেই উবারের গাড়ি চালক আনোয়ার হোসেন দেখলেন, তার গাড়ির উপর উড়ে এসে পড়েছেন পায়জামা পাঞ্জাবি পরা এক লোক; ভেতর থেকে দেখলেন লোকটার মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন আনোয়ার। পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারের নর্থ সাউথ রোডে সাত তলা ভবনে বিকট বিস্ফোরণের পর কিছু অংশ ধসে পড়ার সময় আশেপাশে উপস্থিত আনোয়ারের মত অনেকই হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন; চারিদিক ধুলোয় ঢেকে যাওয়ায় অজানা আতঙ্ক পেয়ে বসেছিল তাদের মধ্যে। বিস্ফোরণে ভবনটির দেয়াল ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেতরের জিনিসপত্র ছিটকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। ভাঙা টুকরোর আঘাতে আহত হয়েছেন পথচারী ও আশেপাশের মানুষ।

বিডিনিউজ জানায় : মঙ্গলবার ওই বিস্ফোরণের পর রাতে মোট ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। স্বজনরা মোট তিনজন নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়েছিলেন। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাফে কুইন ভবনে গতকাল আরও দুইজনের মরদেহ পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। গতকাল রাতে মৃত্যু হয়েছে আহত একজনের। এ নিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হলো। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ভেতরে আর কারও মৃতদেহ আছে কি না, তা আমরা জানার চেষ্টা করছি।’ ১৭ জনের মরদেহ পরিবারের সদস্যরা বুঝে পেয়েছেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত মোট ৬৫ জনকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ জন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ১০ জন ভর্তি রয়েছেন। যারা দগ্ধ হয়েছেন, তাদের অবস্থাও ভালো নয়।

বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাফে কুইন ভবন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ভবনটি কবে তৈরি, সরকারের নিয়মকানুন মেনে বানানো হয়েছে কি নাএসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একজন পরিচালক। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, শবে বরাতের ছুটি শেষে অফিস খুললে সব দেখে বলতে পারবেন। স্থানীয় এক বাসিন্দার ভাষ্য, ভবনটি তৈরি হয় চার দশক আগে। শুরুতে ছিল তিন তলা। পরে তা আরও চার তলা বাড়ানো হয়। যার হাত ধরে ভবনটি তৈরি হয়, তিনি মারা গেছেন এক দশক হল। এখন তার ছেলেদের মালিকানায় রয়েছে ভবনটি। ভবনের নিচের দুটি ফ্লোরে ছিল মূলত স্যানিটারি সামগ্রীর দোকান ও গুদাম, তৃতীয় তলায় ছিল ‘ক্যাফে কুইন’ নামে একটি রেস্তোরাঁ, যেটি বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ। বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই খাবারের দোকানের কারণেই সাত তলা দালানটি ‘ক্যাফে কুইন ভবন’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এর ওপরের কয়েকটি ফ্লোর ছিল আবাসিক। সেখানে কিছু ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়, কিছু ফ্ল্যাটে মালিকদের পরিবার থাকত। তবে দুর্ঘটনার পর তাদের পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার বিকেলে যখন সরগরম কেনাবেচা চলছিল, তখন বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে ভবনের নিচের অংশে। তাতে নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ নম্বর হোল্ডিংযে ওই ভবনের নিচের দুটি ফ্লোরের ছাদের একাংশ ধসে বেজমেন্টে পড়ে। গতকাল ভবনটি পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজউকের পরিচালক হামিদুর রহমান। সাততলা ভবনটি আইন কানুন মেনে গড়ে তোলা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আজ অফিস বন্ধ। তাই ভবনটি বৈধ না অবৈধ, বা কখন অনুমতি নিয়েছে, তা জানা সম্ভব নয়।’

ভবনটি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিতাসের পরিচালক সেলিম মিয়া। তার মতে, পাইপলাইনের গ্যাস এই বিস্ফোরণের কারণ নয়। এই সিদ্ধান্তে আসার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ‘নিচে একটি রাইজার পাওয়া গেছে। তবে রাইজারটি অক্ষত ছিল। কাজেই বিস্ফোরণ অন্য কোনো গ্যাস থেকে হতে পারে।’ বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে আছে অন্যান্য সংস্থাও। র‌্যাবের বম ডিসপোজাল ইউনিটের উপপরিচালক মেজর মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা সাবধানতা অবলম্বন করে ভবনটির নিচে ঢুকেছিলাম। তবে কোনো অগ্নিকাণ্ড নয়, এখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ঘটনাটি গ্যাস লাইন লিকেজ বা অন্য কোনো কারণে ঘটতে পারে। তবে বিস্ফোরণের মাত্রাটা অনেক বড় ছিল।’ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এই ঘটনার জন্য দায়ী কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই আশঙ্কা কম। একটা সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করছি। আমরা এখানে নমুনা সংগ্রহ করেছি এবং সেগুলো পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি। পরীক্ষানিরীক্ষার পর আমরা জানাতে পারব।’ ভবনটিতে কেউ আটকা পড়ে আছে কি না, সেটি অনুসন্ধানে কাজে লেগেছে ডগ স্কোয়াডও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসালিশে চাচার হামলায় ভাতিজা নিহত
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু হয়