কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলে ‘সুইসাইড নোট’ লিখে আত্মহত্যা করেছেন মো. কাওসার আলম (৪১) নামে এক পর্যটক। সুইসাইড নোটে তার আত্মহননের জন্য এক নারীকে দায়ী করে যান তিনি। গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে শহরের একটি হোটেল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
আত্মহননকারী মো. কাওসার আলম (৪১) জয়পুরহাট সদর উপজেলার হানাইল ইউনিয়নের দিঘিপাড়ার মো. মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। আগের দিন সোমবার রাতেও একইভাবে আত্মহননকারী এক পর্যটকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রশ্ন ওঠেছে, কক্সবাজারের হোটেলগুলো কি আত্মহত্যাকারীদের জন্য নিরাপদস্থল হয়ে ওঠেছে? কক্সবাজার পর্যটন পুলিশের অতিরিক্ত সুপার মো. রেজাউল করিম হোটেল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বলেন, আত্মহননকারী পর্যটক কাওসার সোমবার বেলা ১২টার দিকে ‘হোটেল দি আলমের’ ৪০৬ নং কক্ষে ওঠেন। তার সঙ্গে আর কেউ ছিলেন না। মঙ্গলবার সকালে হোটেলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তার কোনো সাড়া না পেয়ে বিষয়টি হোটেলের দায়িত্বশীল লোকজনকে জানায়। সন্ধ্যার দিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আবারও কক্ষ পরিষ্কার করতে গেলে তখনও কাওসারের সাড়াশব্দ পায়নি। এতে হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে তারা পুলিশকে খবর দেয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ গিয়ে কক্ষটির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পায়। এরপর দরজা ভেঙে কাওসারকে খাটের ওপর শোয়া অবস্থায় দেখতে পায় পুলিশ সদস্যরা। তার মুখ থেকে বিষজাতীয় কোনো কিছুর গন্ধ পাওয়া গেছে। বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ ধারনা করছে।
তিনি আরো জানান, মৃতদেহের পাশে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। এতে কাওসার তার মৃত্যুর জন্য নওগাঁ জেলার শাহাপুর এলাকার এক নারীকে দায়ী করেন। ওই নারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জিও আছে সুইসাইড নোটে। তাকে ‘বাজে মেয়ে’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন কাওসার। তবে তার আত্মহননের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেননি। এমনকি ওই নারীর সঙ্গে তার কী সম্পর্ক, সেই বিষয়েও সুসাইড নোটে উল্লেখ নেই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, কাওসার সুইসাইড নোটে লিখেছেন ‘আমি তাকে (ওই নারী) আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে গেলাম।’ তাছাড়া এক ব্যক্তি কাওসারকে ‘১০ মিনিটের মধ্যে গুম করতে পারে’ এমন হুমকি দিয়েছেন বলেও সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেছেন তিনি। পুলিশ সুপার জানান, সুইসাইড নোটে নিজের নাম-পরিচয়ের পাশাপাশি ওই নারীর নাম-পরিচয়ও উল্লেখ করেছেন কাওসার। তবে তার পেশাগত পরিচয় সম্পর্কে ওই নোটে কিছু উল্লেখ নেই।
পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর পর বুধবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রাতে তার স্বজনরা কক্সবাজারে এসে পৌঁছালে প্রয়োজনীয় আইনানুগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেরদিন গত সোমবার রাতে কলাতলী এলাকার একটি হোটেল কক্ষ থেকে সৌরভ সিকদার নামের এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করা হয়। সৌরভ ঢাকার পান্থপথ এলাকার বাসিন্দা। পরিবারের অমতে বিয়ে করে স্ত্রী আনিকা তাসনিমকে নিয়ে গত ১৬ জুলাই থেকে তিনি কক্সবাজারে হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তার পরিবার এই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন বলে জানায় পুলিশ।