রেকর্ডের সোনালি পাতায় লিটন-মুশফিক

ক্রীড়া প্রতিবেদক | মঙ্গলবার , ২৪ মে, ২০২২ at ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

টেস্ট ক্রিকেটে ২০ কিংবা ২৫ রানে ৫ উইকেট হারানোর ঘটনা অনেক রয়েছে। বাংলাদেশের বেলায়ও এমন ঘটনা ঘটেছে অনেকবার। খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। এই সিরিজের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই শতরানের নিচে অল আউট হয়েছে বাংলাদেশ। সে সিরিজের ডারবান টেস্টে ১৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সে অবস্থা থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। শুধু বাংলাদেশ নয়, এমন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর নজির খুব কম।

আজ থেকে ৬৩ বছর আগে সেরকম অবস্থা থেকে খানিকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যান ওয়ালিস মাথিয়াস ও সুজাউদ্দিন। ১৯৫৯ সালে বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ২২ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর এই দুই পাকিস্তানী গড়েছিলেন ৮৬ রানের জুটি। যা এতকাল ছিল বিশ্ব রেকর্ড। এর আগে এমন পরিস্থিতি থেকে শতরানের জুটি গড়ার রেকর্ডও নেই কোন দলের। তবে এবারে শুধু শতরানের জুটি গড়ার রেকর্ডই নয়, রীতিমত রানের পাহাড় গড়ে ফেললেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান লিটন দাশ এবং মুশফিকুর রহিম। শ্রীলংকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য লজ্জার। সকালের আধ ঘন্টাতেই ২৪ রানে নেই ৫ উইকেট। সামপ্রতিক সময়ে এমন ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে সৌধ রচনা করতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং ধসের টানে ইনিংস ৪৩, ৫৩ কিংবা ৮০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার উদাহরণ আছে। কিন্তু লিটন এবং মুশফিক দেখালেন দৃঢ়তা কাকে বলে। কিভাবে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে রেকর্ড গড়তে হয়। আর তাই এই ঢাকাতেই ৬৩ বছর আগে গড়া রেকর্ড ভেঙে গড়লেন নতুন ইতিহাস। যে ইতিহাস বাংলাদেশ শুধু নয় বিশ্বের কোন দলই গড়তে পারেনি।

ধ্বংসস্তুপ থেকে দলকে টেনে টেনে নিয়ে গেলেন দিনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০ করে লিটন এবং মুশফিক ২৫০ রানে নিয়ে গেলেন নিজেদের জুটিটাকে। অথচ এমন বাজে শুরুর পর ষষ্ঠ উইকেটে এর আগে কখনও ২০ পার করতে পারেনি বাংলাদেশ। কদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ডারবান টেস্টে দল ১৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর নাজমুল হোসেন শান্ত ও ইয়াসির আলি চৌধুরি যোগ করতে পেরেছিলেন কেবল ১০ রান। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগা টেস্টে ১৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে লিটন যোগ করেছিলেন ১৬ রান। এবার দলের ভীষণ বাজে শুরুর পর মুশফিক ও লিটনের স্বপ্নময় জুটি পেরিয়ে গেছে যেন সব সীমানা। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এর আগে কোনো জুটি যা করতে পারেনি তাই করে দেখিয়েছেন এই দুই জনে।

তাদের হাত ধরে টেস্ট ক্রিকেট ষষ্ঠ উইকেটে দেখল প্রথম শতরানের জুটি, দেড়শ কিংবা দুইশ, আড়াইশ রানের জুটি। যেখানে প্রথম ৫ উইকেট পড়েছিল ২৫ কিংবা এর নিচে। এমন জুটি গড়ে দলকে টেনে তোলার দিনে মুশফিক এবং লিটন দুজনেই তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। মুশফিক তুলে নিয়েছেন ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি। চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরির পর ঢাকা টেস্টেও তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। যা তার ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। অপরদিকে লিটন দাশ তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও ফিরে আসা লিটন এবার আর ভুল করলেন না। দলের চরম সংকটে দুজন পালন করলেন মহানায়কের ভূমিকা। এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি খেলে ফেলেছেন লিটন। গত বছর চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১৪ রান করেছিলেন লিটন।

যা এতদিন ছিল তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ। এখন ১৩৫ রানের ইনিংসটাকে আজ আর কতদূর টেনে নিয়ে যেতে পারেন লিটন সেটাই দেখার অপেক্ষা। পাশাপাশি দুজনের জুটিটা আরো কত বড় হতে পারে সেটাও দেখতে অপেক্ষায় বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীরা। ধসের পরের ঘটনা বাদ দিলে টেস্ট ক্রিকেটে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এটি বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ জুটি। আগের চারটির মধ্যে তিনটিতে জড়িয়ে আছে মুশফিকের নাম। সর্বোচ্চ জুটিটা ৩৫৯ রানের। যা করেছিলেন মুশফিক এবং সাকিব নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। পরের তিনটি যথাক্রমে ৩১২, ২৬৭ এবং ২৬৬। এখনো সুযোগ রয়েছে সেব টপকে যাওয়ার। এখন দেখার বিষয় নিজেদের কতদূর নিয়ে যেতে পারেন লিটন এবং মুশফিক। সে সাথে দলকেও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় কোয়ার্টার ফাইনাল সম্পন্ন
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ২৪.০০ কোটি টাকা