বিনিয়োগে ব্যাপক সাড়া, অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে ধীরগতি

মীরসরাই প্রতিনিধি | রবিবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনী জেলার সোনাগাজী মিলিয়ে প্রায় ৩১ হাজার একর বিস্তীর্ণ জমিতে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। করোনা পরিস্থিতি উন্নয়নের সুবাদে এখন অবকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। তবে কাজ ঢিমে-তালে চলছে অভিযোগ করে গতি আনার ব্যাপারে তাগাদা দিচ্ছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও শিল্পোদ্যোক্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিল্পনগরে বিনিয়োগ-শিল্পায়নে রয়েছে ব্যাপক সাড়া। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। অথচ সেই তুলনায় রেডি শিল্পের প্লটসহ পরিপূর্ণ অবয়ব তৈরিতে ধীরগতি কাটেনি। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে উদ্যোক্তারা এখন শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠায় অবকাঠামো সুবিধার জন্য মুখিয়ে আছেন। ব্যাংক ঋণের সুদসহ বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। আংশিক অবকাঠামো দিয়ে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা যাচ্ছে না। তাই অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে আরও দ্রুততার তাগিদ দিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। অন্যথায় অর্থনৈতিক সম্ভাবনা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন।
তবে বেজা সূত্র জানায়, যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে তারা শিল্প স্থাপন করছেন কিংবা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিল্পোদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো চাহিদার মধ্যে রয়েছে- শিল্প প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা স্থাপনের উপযোগী করে বরাদ্দকৃত জমির মাটি ভরাটকাজ, ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির সংযোগ তথা ইউটিলিটি সার্ভিস নিশ্চিত করা, অভ্যন্তরীণ সড়ক রাস্তাঘাট নির্মাণ সম্পন্ন করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে ফোর লেইন বা বহু লেইন একাধিক সংযোগ সড়ক নির্মাণ, হাসপাতাল, শিল্প এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভাঙন ও লবণাক্ততা থেকে রক্ষায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্লুুইচ গেট তৈরি ইত্যাদি। এরমধ্যে পাউবোর সহায়তায় প্রকল্পের চারপাশে ডাইক নির্মাণ শেষের দিকে। সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে এক হাজার ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে এসব ক্ষেত্রে কাজ আংশিক হলেও পরিপূর্ণ অবকাঠামো প্রস্তুত হয়নি।
জানা যায়, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করেছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। এখানে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা প্রায় এক হাজার একর জমিতে শিল্প স্থাপন করবে। বেপজার বিশেষায়িত ইপিজেজেড নির্মিত হবে সোয়া এক হাজার একর জমিতে। বেশিরভাগই হচ্ছে রপ্তানিমুখী শিল্প। তাছাড়া গত ১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিশেষায়িত গার্মেন্টস পার্ক তৈরির জন্য ২৩৯ একর জমির ইজারা নিয়ে বেজার সঙ্গে চুক্তি করেন বিজিএমইএর সদস্য ৪১ জন তৈরি পোশাকের কারখানার মালিক। সবাই তাকিয়ে আছে অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ কবে সম্পন্ন হয় সেদিকে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের অবকাঠামো উন্নয়ন যত দ্রুত হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। শিল্পোদ্যোক্তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে শিল্প স্থাপনের অপেক্ষায় বসে আছেন। ব্যাংক ঋণের সুদ গুনছেন। মাটি ভরাট, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো সুবিধার সবকিছু সম্পন্ন হলেই শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী হবে। করোনার কারণে অনেক দেরি হয়েছে। এখন কাজে দ্রুততা প্রয়োজন।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোসহ ইউটিলিটি সার্ভিসগুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। বিনিয়োগকারীরা চান শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী কাঠামো তৈরি। শিল্প স্থাপনের জন্য এ মুহূর্তে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কাজ শেষ না হলে কীভাবে শিল্প স্থাপন হবে?
বেজার মীরসরাইস্থ কার্যালয়ের সহ-ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, শিল্পনগরে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো উন্নয়নের কিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, কিছু চলমান রয়েছে এবং অনেক বৃহৎ কাজ পরিকল্পনাধীন রয়েছে। বহু প্রতিষ্ঠান এরইমধ্যে শিল্প নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। আগামী জানুয়ারির দিকে প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে যাওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফুটপাতে দোকান বসানো নিয়ে সংঘর্ষ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চায় কল্যাণ পার্টি