কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা ও শিক্ষক মুহিবুল্লাহ (৫০) অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক নাইমুল হক।
জানা যায়, অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীদের গুলিতে প্রথমে মারাত্মকভাবে আহত হন মুহিবুল্লাহ। পরে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ক্যাম্প-১ ইস্ট এর ব্লক ডি-৮ এর বাসিন্দা বলে জানা যায়।
তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইট্স(এআরএসপিএইচ)-এর চেয়ারম্যান ছিলেন।
আজ বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এশার নামাজের পর নিজ অফিসে অবস্থানকালে অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীরা ৫ রাউন্ড গুলি করলে তিন রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে এবং উক্ত গুলির ফলেই নিহত হন এ রোহিঙ্গা নেতা।
বিডিনিউজ জানায়, মুহিবুল্লাহ ২০১৯ সালে ওয়াশিংটন গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় আসেন।
কারা এই রোহিঙ্গা নেতাকে খুন করেছে, সেই সম্পর্কে কোনো ধারণা তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
পুলিশ কর্মকর্তা নাইমুল বলেন, “রাতে মুখে গামছা পরিহিত একদল অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত অতর্কিত তাকে লক্ষ্য করে পর পর পাঁচটি গুলি ছোড়ে। তার শরীরে তিনটি গুলি লাগে।”
স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি।
নাইমুল হক বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে এপিবিএন-এর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মুহিবুল্লাহকে উদ্ধার করে কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”
উখিয়া থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এপিবিএন ও পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে মুহিবুল্লাহ বেশ আগে বাংলাদেশে আসেন বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়।
২০১৯ সালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের যে সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা উঠেছিল তার উদ্যোক্তা ছিলেন মুহিবুল্লাহ।
রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও ও বিদেশী সংস্থার সঙ্গে মুহিবুল্লাহর সম্পর্কও স্থানীয়দের মধ্যে আলোচিত ছিল। ইংরেজি জানার সুবাদে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশীদের সঙ্গে আলোচনা চালাতেন।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রচেষ্টা এখনও সফল না হওয়ায় বেশ কিছু সংখ্যককে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হলে তার বিরোধিতা করেছিল বিভিন্ন এনজিও।
ভাসানচরে যাওয়া নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরোধ দেখা গিয়েছিল। অন্তকোর্ন্দলে সংঘাতের খবরও পাওয়া গিয়েছিল বিভিন্ন সময়।
দুই বছর আগে রোহিঙ্গাদের সমাবেশের সময় তাদের জন্য ধারালো অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগও এসেছিল।
তখন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, “মুহিবুল্লাহ যদি অন্যায় করেন তবে শাস্তি দেওয়া হবে।”