নগরের যানজট নিরসন ও অযান্ত্রিক যান নিয়ন্ত্রণসহ ফুটপাতে শৃঙ্খলা আনতে এক গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের অংশ হিসেবে শীঘ্রই চসিকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। এর আগে সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেয়রের কাছে একটি প্রস্তাবনা হস্তান্তর করেন। বৈঠকে প্রস্তাবনাটির বাস্তবায়নের বাস্তবতাও খুঁজে দেখা হবে।
চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, কাউন্সিলর মোবারক আলী নিজ উদ্যোগে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। সেটা আমরা পর্যালোচনা করব। তবে সামগ্রিকভাবে পুরো শহরকে কিভাবে যানজটমুক্ত রাখা যায়, ফুটপাতকে কিভাবে শৃঙ্খলায় আনা যায় তা নিয়ে সিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করব। কাউন্সিলর মোবারক আলী আজাদীকে বলেন, প্রধান নির্বাহী, সচিব, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাসহ বসার কথা রয়েছে। সেখানে প্রস্তাবনার ভালো-মন্দ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। প্রস্তাবনায় শহরের যানজটের কারণ হিসেবে বলা হয়, অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় শহরের অনেক রাস্তা প্রয়োজনের তুলনায় সরু। তার উপর সড়কে সড়কে অবৈধ রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়িসহ অযান্ত্রিক যান চলায় যানবাহনের গতি সীমিত করেছে। রাস্তার একটি অংশ দখল করে হকার ও স্ট্রিড ফুড ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছে। অনিবন্ধিত ও অবৈধ কিছু যান্ত্রিক যানও এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। এক্ষেত্রে অযান্ত্রিক যান, হকার ও যত্রতত্র প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিম্নগতির যান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যানজট নিরসনের পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বাড়বে।
প্রস্তবনায় বলা হয়, নগরে ৫৭ হাজার রিকশার লাইন্সেস থাকলেও নতুন ৭০ হাজার রিকশা লাইন্সেস প্রদানের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তা এক লক্ষে উত্তীর্ণ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যে এলাকায় লাইন্সেস কম দেওয়া হয়েছে বা রিকশার লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেই ওয়ার্ডে নতুন করে লাইন্সেস দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া রিকশার জন্য আলাদা রোড নির্ধারণ করা, মূল সড়কের বামে রিকশা চলাচলের জন্য আলাদা লেইন করা ও ভিআইপি রোডে অযান্ত্রিক পরিবহন চলাচলে প্রয়োজন অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
ভ্যান নিয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়, তিন চাকা ও চার চাকার ভ্যানকে লাইসেন্সের আওতায় আনা। এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহারের ভিত্তিতে ধরন নির্ধারণ করে লাইন্সেস দেওয়া। বঙ ভ্যানে কোনো প্রকার পণ্যের প্রচার করলে নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞাপন কর পরিশোধ করা এবং প্রতিটি ভ্যানের বিপরীতে নির্ধারিত কর পরিশোধ করে বারকোড সম্বলিত লাইন্সেস প্লেট প্রদান করা। উন্মুক্ত ভ্যান মালামাল পরিবহন করার কাজে ব্যবহারের জন্যও সরকার নির্ধারিত কর পরিশোধ সাপেক্ষে বারকোড সম্বলিত লাইন্সেস প্রদান করা।
খাদ্য সরবরাহকারী বা স্ট্রিট ফুড ভ্যান নিয়ে বলা হয়, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসার জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক নির্ধারিত স্থানের জন্য অনুমোদন সাপেক্ষে স্ট্রিট ফুডের জন্য ভ্যান লাইন্সেস দেওয়া। তবে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে তার জন্য নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে দাঁড়িয়ে ব্যবসা করতে পারবে না। এতে ভ্যানের অবস্থানের কারণে যানজটসহ জন ভোগান্তি সৃষ্টি হবে না।
ভ্রাম্যমাণ হকার ভ্যান নিয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়, দিনের একটি নির্ধারিত সময়ে যান চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে এমন সড়কে সীমিত সংখ্যক নির্ধারিত স্থানে ভ্রাম্যমাণ হকারগণকে ভ্যানের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য লাইসেন্স দেওয়া। নির্ধারিত সড়ক, স্থান ও ওয়ার্ডের বাইরে ভ্যানটি ব্যবহার করা যাবে না।
ঠেলাগাড়ি নিয়ে বলা হয়, নির্মাণ সামগ্রী ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত কর গ্রহণপূর্বক বারকোড সম্বলিত ঠেলাগাড়ির লাইন্সেস প্রদান করা। লাইন্সেস গ্রহীতা চালকের পরিচয় নিশ্চিত করবেন।
প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য মোবাইল অ্যাপ তৈরি ও পরিচালনা হালনাগাদের জন্য লোকবল নিয়োগ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কমিটি গঠন, একটি বিভাগের আওতায় অযান্ত্রিক যান নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণে লোকবল নিয়োগ, লাইন্সেসবিহীন অযান্ত্রিক যানকে রাস্তার আবর্জনা বিবেচনায় সকল ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন সুপারভাইজার কর্তৃক অপসারণ, জব্দকরণ ও সিটি কর্পোরেশনের স্টোরে জমাকরণ নির্দেশনা প্রদানের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগের সাথে যৌথভাবে সার্ভে করে ভ্যান বসার সময়, পার্কিং ও স্থান নির্ণয়ে কর্মকর্তার দায়িত্ব বণ্টনের প্রস্তাব করা হয়।