কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে জানিয়ে গুজব না ছড়াতে অনুরোধ জানিয়েছে তার পরিবার। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা চলছে ফকির আলমগীরের। এর মধ্যেই শুক্রবার রাতে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ফকির আলমগীরের ছেলে মাশুক আলমগীর রাজিব জানান, তার বাবার শারীরিক অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে। তাকে প্লাজমা দেওয়া হয়েছে; তিনি কথাবার্তা ও হাঁটাচলা করতে পারছেন। তিনি বলেন, ‘বাবাকে নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করছি। সবার কাছে বাবার জন্য দোয়া চাইছি।’ খবর বিডিনিউজের।
ফকির আলমগীরের স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর জানান, তার স্বামী করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকাই নিয়েছেন। কিন্তু কয়েক দিন আগে তার উপসর্গ দেখা দেয়, পরে করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসে। শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ষাটের দশক থেকে গণসংগীতের সঙ্গে যুক্ত ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেব ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে শামিল হন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন ৭১ বছর বয়সী এ শিল্পী। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে। গানটি লিখেছেন আলতাফ আলী হাসু। কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীত শিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার।