সিনোফার্মের ৭৮ হাজার ৪০০ ডোজ চীনা টিকা এবং মডার্নার ১ লাখ ৫ হাজার ৬০০ ডোজসহ মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে চট্টগ্রামে। গতকাল সকাল ৭টার দিকে এসব টিকা চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পৌছাঁয়। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে ভ্যাকসিন গ্রহণ কমিটির সদস্যরা এসব টিকা গ্রহণ করেন। গ্রহণের পর এসব টিকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা মেনে সংরক্ষণে রাখা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ দেয়া সিনোফার্ম ও মডার্নার মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ডোজ টিকা আমরা পেয়েছি। টিকা পাওয়ায় সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা পর্যায়ে মঙ্গলবার থেকেই ফের গণটিকাদান শুরু হচ্ছে। তবে মডার্নার টিকা কেবল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দেয়া হবে। টিকার জন্য সিটি কর্পোরেশন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা এ টিকা পাবেন। আর সিনোফার্মের তৈরি চীনা টিকা দেয়া হবে উপজেলা পর্যায়ে। এ জন্য সিনোফার্মের তৈরি টিকা সোমবারই (আজ) উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হবে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
সিটি কর্পোরেশন এলাকায় টিকাদানে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চসিক ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। এবারও আগের নির্ধারিত ১১টি কেন্দ্রে এ টিকাদান কার্যক্রম চলবে জানিয়ে ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, নিবন্ধিতদের মধ্যে যারা এসএমএস পাবেন, তারা নির্ধারিত সময়ে নিবন্ধিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন। যে কেন্দ্রের জন্য নিবন্ধন, সে কেন্দ্রে গিয়েই টিকা নিতে হবে। কেন্দ্র পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে এসএমএস না পাওয়া পর্যন্ত অযথা কেন্দ্রে ভিড় না করার অনুরোধ জানান তিনি।
টিকা পাবেন প্রবাসী কর্মীরাও : প্রবাসী কর্মীদের মাঝে সুরক্ষায় যাদের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে, এসএমএস প্রাপ্তি সাপেক্ষে তারাও চট্টগ্রামে টিকা নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। সিভিল সার্জন বলেন, সৌদি আরব ও কুয়েতগামী কর্মীদের কেবল ফাইজার ও মডার্নার টিকা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আছে। ফাইজারের টিকা কেবল ঢাকার ৭টি কেন্দ্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে এই দুই দেশগামী (সৌদি ও কুয়েত) কর্মীদের মডার্নার টিকাও যেহেতু দেয়া যাবে, সেহেতু তারা চাইলে মডার্নার টিকাও নিতে পারবেন। মডার্নার টিকা নিতে হলে তাকে অবশ্যই সিটি কর্পোরেশন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে নিবন্ধন করতে হবে। উপজেলা হাসপাতাল কেন্দ্রে যারা নিবন্ধন করবেন, তাদের সিনোফার্মের টিকা নিতে হবে। অবশ্য অন্যান্য দেশের প্রবাসী কর্মীরা সিনোফার্মের টিকা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বিদেশগামী কর্মী যে দেশে যাবেন, সে দেশের নির্দেশনা ভালো মতো জেনে-বুঝে টিকা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন।
প্রসঙ্গত, এর আগে প্রথম দফায় সিনোফার্মের তৈরি ৯১ হাজার ২০০ ডোজ চীনা টিকা পেয়েছে চট্টগ্রাম। টিকা প্রাপ্তির পর গত ১৯ জুন থেকেই চীনা এ টিকার প্রয়োগও শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে এ টিকাদান শুরু হয়। পরে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত অন্যদের টিকাদান কার্যক্রমও শুরু হয়। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। তবে চমেক হাসপাতাল কেন্দ্রের বাইরে চট্টগ্রামের আরো দুটি (চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতাল) কেন্দ্রেও চীনা এ টিকাদান কার্যক্রম চলছে। এর আগে দুই দফায় সবমিলিয়ে ৮ লাখ ডোজের সামান্য বেশি (অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার) টিকা পায় চট্টগ্রাম। ৭ ফেব্রুয়ারি এই টিকার প্রথম ডোজ টিকাদান উদ্বোধনের পর গত ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ প্রদান শুরু হয় চট্টগ্রামে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে- চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৫ হাজারের মতো টিকাগ্রহীতা তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। এর আগে চট্টগ্রামের (মহানগরসহ জেলায়) মোট ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০ জন মানুষ এই (অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার) টিকার প্রথম ডোজ নেন। হিসেবে প্রথম ডোজ নেয়া আরো প্রায় লক্ষাধিক টিকা গ্রহীতা দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন। এরই মাঝে প্রথম ডোজ গ্রহণের পর অনেকের সময়ের ব্যবধান তিন মাস পার হতে চলেছে। অনেকের আরো বেশি। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
