চট্টগ্রামে পশুর বাজার শুরু হচ্ছে আজ

ভিড় এড়াতে তাঁবু ও অনলাইনে ঝুঁকছেন অনেকে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১২ জুলাই, ২০২১ at ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর বাজার আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত ছয়টি বাজারে এবার বসছে পশুর হাট। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওখানে বেচাকেনা চলবে। ক’দিন ধরে বাজারগুলোতে উত্তরবঙ্গসহ নানা স্থান থেকে পশু আনা হচ্ছে। গতকালও ট্রাকে ট্রাকে পশু আনা হয়েছে। অনুমোদিত ছয়টি বাজারের পাশাপাশি শহরের নানা স্থানে সীমিত পরিসরে তাঁবু টাঙিয়ে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনগত বৈধতা না থাকলেও ছোট পরিসরে গড়ে তোলা এসব তাঁবুতে বেচাকেনা চলছে। এদিকে করোনাকালে ভিড় এড়াতে এসব তাঁবু এবং অনলাইনে কেনার দিকে ঝুঁকছেন অনেকে।
নগরীতে স্থায়ী পশুর বাজার তিনটি। সাগরিকা, বিবিরহাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজারে বছরজুড়ে গরু-ছাগল, মহিষ, ভেড়ার বেচাকেনা চলে। এর বাইরে কোরবানি উপলক্ষে তিনটি বাজারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী বাজারগুলো হচ্ছে কর্ণফুলী গরু বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার এবং ৪১ নং ওয়ার্ড বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ। স্থায়ী ও অস্থায়ী ছয়টি বাজারে আজ থেকে গরু-ছাগলের বাজার শুরু হচ্ছে।
স্থায়ী-অস্থায়ী বাজারগুলোতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, ফরিদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, কঙবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর গরু আসতে শুরু করেছে। গতকাল সাগরিকা ও নুর নগর হাউজিংয়ের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজার তেমন জমেনি। ইজারাদার মোহাম্মদ সাইফুল হুদা জাহাঙ্গীর আজাদীকে জানান, এবার পশু কম। গত বছরের মতো এবারও বাজার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। অন্যান্য বছর এমন দিনে বাজারগুলো ভর্তি হয়ে যায়। একেকটি বাজারে বিশ-ত্রিশ হাজার পর্যন্ত পশু জড়ো করা হয়। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও পশু কম।
বাজারদর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো বেচাবিক্রি শুরু হয়নি। তবে কয়েকজন বেপারির সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে দাম বেশ চড়া। সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। তাই পশুর দামও স্বাভাবিকভাবে বেশি হবে। কোরবানির পশুর বাজার শেষ দিকে জমে উঠবে জানিয়ে তিনি বলেন, বেচাবিক্রি শুরু হলেও বাজার এখনো জমেনি। আগামী সপ্তাহের আগে বাজার খুব একটা জমবে বলে মনে হয় না। শহরে মানুষের কোরবানির পশু রাখার জায়গা নেই। তাই এক-দুদিন আগে সকলে গরু-ছাগল কিনবেন।
করোনাকালে প্রতিটি বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাস্ক ছাড়া কাউকে বাজারে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কেউ ভুলে মাস্ক না আনলে গেটে মাস্ক দেব। হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পশুর বাজার আজ শুরু হলেও বাজার পরিস্থিতি ভালো নয় উল্লেখ করে একজন ইজারাদার বলেন, বাজারে পশুর উপস্থিতি কম। মানুষের উপস্থিতি কেমন হবে তা আজ অনুমান করা যাবে।
এদিকে করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পশুর বাজারে গিয়ে কেনাকাটা কতটুকু সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করেছেন অনেকে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে অথবা পাড়ায় পশুর হাটকে অধিকতর নিরাপদ মনে করা হচ্ছে। তবে অনলাইন কিংবা এগ্রো ফার্ম চাহিদার সামান্য অংশের যোগান দিতে পারবে। ছয়টি পশুর বাজার কিংবা পাড়ায় পাড়ায় অস্থায়ী বাজার গড়ে তোলার মাধ্যমেই কেবল স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর যোগান নিশ্চিত করা যাবে।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে তাঁবু টাঙিয়ে সীমিত পরিসরে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। গতকাল মুরাদপুর মোড় ও চকবাজারে এই ধরনের দুটি বাজার দেখা গেছে। মুরাদপুরে রাস্তার পাশে বারোটি গরু নিয়ে তাঁবু টাঙানো হয়েছে।
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি গরু বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, এখনো তেমন বিক্রি হচ্ছে না। লোকজন আসছে। দাম জিজ্ঞেস করছে। কেউ কেউ কেনার পর এখানে রেখে যাবেন এবং কোরবানির আগের দিন নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, করোনাকালে মানুষ ভিড় এড়িয়ে চলছেন। তাই বাজারে না গিয়ে এখান থেকে গরু কিনতে চাচ্ছেন। অস্থায়ী এসব তাঁবুতে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে।
অনলাইন বাজারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, এতে শারীরিক সংস্পর্শ এড়ানো যাবে। বয়স্ক এবং শিশু-কিশোরদের বাজারে না নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার পরিচালনা করার জন্য আমরা পরামর্শ দিয়েছি, সুপারিশ করেছি। প্রতিটি বাজারে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং মাস্ক রাখার জন্য বলা হয়েছে। আমরা কোরবানির পশুর হাট বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছিলাম। হাট বেশি হলে মানুষের ভিড় কম হতো।
তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় ঝুঁকি বাড়বে। গত রমজানের সময় স্বাস্থ্য বিভাগের আশঙ্কার বিষয়টি সাধারণ মানুষকে বোঝানো যায়নি। ফলে এখন আমাদের এর মাশুল দিতে হচ্ছে। ঈদুল আজহায়ও যদি হাটে বেশি ভিড় হয় তবে করোনাভাইরাস আরো বেশি ছড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে। এ অবস্থায় হাটে যত বেশি স্বাস্থ্যবিধি মানানো যাবে তত মঙ্গল। পাশাপাশি হাটের বাইরে এক বা একাধিক ডিসপ্লে বোর্ড দেওয়া যেতে পারে, যেখানে পুরো হাটের একটি সামগ্রিক চিত্র থাকবে। কোন স্থানে কত বাজেটের পশু রাখা হয়েছে এই বোর্ড থেকে ক্রেতারা জানতে পারবেন। সর্বত্র ঘোরাঘুরির বদলে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে পছন্দের ও বাজেটের পশু কিনতে পারবেন। এভাবে কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ভিড় এড়ানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেলায় এবার ২০৬টি পশুর হাট বসানোর প্রস্ততি নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রামে সম্ভাব্য কোরবানি পশুর চাহিদা আছে ৮ লাখ ৯ হাজার। বিপরীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি। এর মধ্যে গবাদি পশু ৫ লাখ ১০ হাজার ৪০টি, মহিষ ৬৩ হাজার ১৩৬টি, ছাগল ও ভেড়া ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩টি এবং অন্যান্য ৯৫টি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল থেকে আবার গণ টিকাদান
পরবর্তী নিবন্ধঈদের আগে শিথিল হতে পারে বিধিনিষেধ