নগরীর ২৮নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডে নির্বাচনী সংঘাতে একজন নিহতের মামলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদের ওরফে মাছ কাদেরসহ তিনজনকে দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন আজ মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) তাদের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিডিনিউজ
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী সাহাবুদ্দিন আহমদ জানান, কাদেরসহ তিন আসামির সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত শুনানি শেষে একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া অপর দুই আসামি হলো কাদেরের সহযোগী এম কে কবির হেলাল উদ্দিন ও ইমরান হোসেন ডলার।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের (পশ্চিম) পরিদর্শক মো. শাহাদাত হোসেন খান বলেন, “এই মামলার অন্য দুই আসামি দিদার উল্লাহ দিদু ও আব্দুর রহমানের রিমান্ডের আবেদন করা হলেও শুনানি হয়নি। বাকি ছয়জনকে আর রিমান্ডে চাওয়া হয়নি। র্যাবের হাতে গতকাল সোমবার গ্রেপ্তার দেলোয়ার রশিদকেও রিমান্ডে চাওয়া হয়েছে। সেই বিষয়ে এখনও শুনানি হয়নি।”
প্রসঙ্গত, গত ১২ জানুয়ারি রাতে নগরীর মোগলটুলির মগপুকুরপাড় এলাকায় ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদেরের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আজগর আলী বাবুল (৫৫) নামে একজন নিহত এবং অপর একজন গুলিবিদ্ধসহ কয়েকজন আহত হন।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সেজান মাহমুদ সেতু বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদেরসহ ১৩ জনকে আসামি করে ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার রাতেই মোগলটুলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাদেরসহ অন্তত ২৫ জনকে আটক করে মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে।
পরে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে কাদেরসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাদের মধ্যে ছয়জনের নাম আছে মামলার এজাহারে।
আটকের পরদিন গত ১৩ জানুয়ারি কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদেরসহ ওই ১১ জনকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করলে তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন বিচারক।
এই মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলো ওবায়দুল কবির মিন্টু, আসাদুজ্জামান নূর রায়হান, মিনহাজ হোসেন ফরহাদ, শহীদুল আলম সাহেদ, জাহিদুল আলম জাহিদ ও শহিদুল ইসলাম।
সবশেষ সোমবার দেলোয়ার রশিদ (৪২) নামের এজাহারভুক্ত এক আসামিকে নগরীর চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
মামলায় নিহতের ছেলে লিখেছেন, “আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সাথে তিনি ও তার বাবাসহ অনেকেই মগপুকুরপাড় এলাকায় জনসংযোগে যান। সন্ধ্যা ৭টার দিকে মগপুকুর জব্বার সওদাগর বিল্ডিংয়ের সামনে পৌঁছালে কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা করা হয়।
এ সময় কাদেরের নির্দেশে হেলাল, আব্দুল ওয়াদুদ রিপন, আব্দুর রহিম রাজু, আসাদ রায়হান তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর, আজগর আলী বাবুল ও মাহবুবকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়ে। অন্য আসামিরা তাদের হাতে থাকা লাঠিসোঁটা নিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।
তাদের গুলি আমার বাবা আজগর আলী বাবুলের পিঠের বাম পাশে এবং মাহবুবের ডান পায়ের উরুতে লাগে। বাবাকে বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর মাহবুবকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”
২৮ নম্বর ওয়ার্ডের গতবারের কাউন্সিলর আব্দুল কাদের ওরফে মাছ কাদের নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এবার দল তাকে মনোনয়ন না দিয়ে বাহাদুরকে মনোনয়ন দেয়।
বাহাদুর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। কাদেরের আগে ২০০০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন তিনি।