কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সঙ্গে ‘ডকুমেন্টারি’ নির্মাণে যুক্ত স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মাদকের মামলায় অভিযোগের ‘সত্যতা পায়নি’ র্যাব। মামলা দুটির তদন্ত শেষে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি বিমান চন্দ্র কর্মকার গতকাল রোববার কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আদালত তা গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
সিফাত ও শিপ্রা স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী। ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য সিনহার সঙ্গে প্রায় এক মাস কঙবাজারের হিমছড়িতে ছিলেন তারা।
গত ৩১ জুলাই রাতে কঙবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা। ওই ঘটনার পর কঙবাজারের পুলিশ বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেকপাস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। পুলিশ সেদিন ঘটনাস্থল থেকেই সিফাতকে গ্রেপ্তার করে। পরে নীলিমা রিসোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শিপ্রাকে।
পরে গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের অভিযোগে টেকনাফ থানায় মামলা করে পুলিশ, যাতে সিফাতকে আসামি করা হয়। আর নীলিমা রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে গ্রেপ্তার করার সময় মাদক পাওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রামু থানায় মামলা হয়।
পুলিশের দেওয়া ঘটনার বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২ আগাস্ট উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যার’ অভিযোগগুলোও নতুন করে আলোচনায় আসতে শুরু থাকে।
এই ঘটনার পর কঙবাজারের পুলিশকে নতুন করে সাজানো হয়। এসপি থেকে কনস্টেবল প্রায় সব পুলিশ সদস্যকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার দশ দিন পর গত ১০ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান শিপ্রা ও সিফাত। তখনই মামলা দুটির তদন্তভার র্যাবকে দেওয়া হয়।
পরে এক সাক্ষাৎকারে সিনহার সঙ্গে পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, ডকুমেন্টারি নির্মাণের পরিকল্পনা, নওগাঁর আলতাদীঘিতে প্রথম ভিডিও শুটিং এবং এরপর কঙবাজারে গিয়ে সিনহার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঘটনার বিস্তারিত বলেন শিপ্রা। তবে সিনহা হত্যাকাণ্ড বা মামলা সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি। তার ভাষায়, কোনো কথার কারণে এ মামলার ক্ষতি হোক, তা তিনি চান না।
সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, আমি জাস্টিস চাই। সিনহাকে কেন মারা হলো, আমাদের কেন ধরা হলো, আমরা কেন অনিশ্চিত একটা সময় কাটাচ্ছি, যে স্বপ্নের জন্য আমরা এত কিছু হারালাম, এত ঝড়-ঝাপটা পেরুলাম, সেই স্বপ্নটাও আসলে সাম হাউ কেউ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই স্বপ্নটুকু বাঁচাতে চাই, জাস্টিস চাই।