৯ শিক্ষাবোর্ডে ৭ম চট্টগ্রাম

পাসের হার ৮০ দশমিক ৫০ জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৬৭ জন কমেছে দুটোই

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে এবার। আর জিপিএ৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৬৭০ জন। হিসেবে পাসের হার ও জিপিএ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা গতবছরের তুলনায় কমেছে চট্টগ্রামে। গতবার (২০২১ সালে) পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর জিপিএ৫ পায় ১৩ হাজার ৭২০ জন।

 

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের এ ফল ছিল আগের দশ বছরে (অটো পাসের বছর বাদ দিয়ে) সর্বোচ্চ। অর্থাৎ অটো পাসের বছর ২০২০ সালের ফল বাদ দিলে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ২০২১ সালে পাসের হার ও জিপিএ৫ প্রাপ্তিতে রেকর্ড গড়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। রেকর্ড ফলেও গতবার দেশের সকল (১১টি) শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে চট্টগ্রামের অবস্থান ছিল তলানিতে।

গতবার সারাদেশে গড় পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পাসের হার ছিল ৮৯.৩৯ শতাংশ। হিসেবে দেশের গড় পাসের হারের তুলনায় চট্টগ্রামের পাসের হার প্রায় ৬ শতাংশ কম ছিল গতবার। এবারও তেমন ব্যতিক্রম নয়।

এবার সারাদেশে গড় পাসের হার ৮৫.৯৫ শতাংশ। বিপরীতে চট্টগ্রামের পাসের হার ৮০.৫০ শতাংশ। হিসেবে সারাদেশের গড় পাসের হারের তুলনায় এবারও চট্টগ্রামের পাসের হার প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ কম। আর দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে চট্টগ্রামের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৭ম। ৮০.৫০ শতাংশ পাসের হারে কেবল দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ বোর্ডের তুলনায় সামান্য এগিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম।

৮ম অবস্থানে থাকা ময়মনসিংহ বোর্ডের পাসের হার ৮০.৩২ শতাংশ। আর সর্বশেষ (৯ম) অবস্থানের দিনাজপুর বোর্ডের পাসের হার ৭৯.০৮ শতাংশ।

ফলাফলে দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে ৭ম অবস্থানে থাকলেও এ ফল নিয়ে অসন্তোষ নেই চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথের। ফল প্রকাশ সংক্রান্ত বোর্ড মিলনায়তনে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি দাবি করেন, ২০২০ সালে মহামারীর কারণে পরীক্ষা হয়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলাফল বিশ্লেষণ করে ফল প্রকাশ করায় পাসের হার ছিল শতভাগ।

পরের বছর (২০২১ সালে) তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যাতে পাসের হার ভালো ছিল। তবে এবারের ফল নিয়েও আমরা অসন্তুষ্ট নই।

ফলে পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে যথারীতি পার্বত্য অঞ্চলের প্রসঙ্গ টেনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, তিন পার্বত্য অঞ্চল ও দ্বীপ অঞ্চলের মতো দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা ফলাফলে সবসময় পিছিয়ে থাকে। ভালো ফল হলেও বিশেষ করে এ কারণেই সার্বিকভাবে চট্টগ্রাম পিছিয়ে থাকে।

গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে এবার ৯১ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৭৪ হাজার ৩২ জন। আর জিপিএ৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৬৭০ পরীক্ষার্থী।

শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অটো পাসের বছর বাদ দিয়ে এইচএসসিতে আগের দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাসের হার ছিল ২০১২ সালে। ওই বছর ৭২.৭১ শতাংশ পাসের হারে জিপিএ৫ পেয়েছিল ৩ হাজার ১৫৫ জন। এরপর সর্বোচ্চ ৭০.০৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে ২০১৪ সালে। ওই বছর জিপিএ৫ পায় ২ হাজার ৪৪৬ জন। অন্যান্য বছরগুলোতে পাসের হার ছিল ৭০ শতাংশের কম।

২০১৩ সালে পাসের হার ছিল ৬১.২৮ শতাংশ। জিপিএ৫ পায় ২ হাজার ৭৭২ জন। ওই বছরও (২০১৩ সালে) এইচএসসির ফলাফলে সবকয়টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল চট্টগ্রাম। ২০১৫ সালে ৬৩.৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। জিপিএ৫ পায় ২ হাজার ১২৯ জন। ২০১৬ সালে ৬৪.৬০ শতাংশ পাসের হারে জিপিএ৫ পায় ২ হাজার ২৫৩ জন। ২০১৭ সালে ৬১.০৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে।

জিপিএ৫ পায় ১ হাজার ৩৯১ জন। ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৬২.৭৩ শতাংশ। জিপিএ৫ পায় ১ হাজার ৬১৩ জন। অটো পাসের বছরের আগে ২০১৯ সালে পাসের হার ছিল ৬২.১৯ শতাংশ। জিপিএ৫ পায় ২ হাজার ৮৬০ জন। আর ২০২০ সালে (অটো পাসের বছরে) শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করে। জিপিএ৫ পায় ১২ হাজার ১৪৩ জন।

গতকাল প্রকাশিত ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবারও বিভাগভিত্তিক ফলে এগিয়ে আছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগে পাসের হার ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এরপরই বেশি পাসের হার ব্যবসায় শিক্ষায়। এ বিভাগ থেকে পাসের হার ৮৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। মানবিকে পাসের হার সবচেয়ে কম। ৭৪ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মানবিক বিভাগ থেকে পাস করেছে।

পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে মহানগরের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম মহানগরে পাস করেছে ৮৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। মহানগর ছাড়া জেলায় পাসের হার ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। আর চট্টগ্রাম জেলায় হার ৮২ দশমিক ৭১ শতাংশ। যথারীতি এবারও ফলাফলে পিছিয়ে রয়েছে তিন পার্বত্য জেলা। রাঙামাটিতে এ বছর পাসের হার ৭৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। খাগড়াছড়িতে সবচেয়ে কম ৬৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অন্যদিকে বান্দরবানে পাসের হার ৮১ দশমিক ২০ শতাংশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপূর্ববাংলায় বিক্ষোভের প্রস্তুতি চলতে থাকে
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়া কলেজে মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ ঘোষণা