৭ বছরে এলপিজির রেকর্ড মূল্য, ভোক্তাদের নাভিশ্বাস

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়ছে এলপিজির দাম। বর্তমানে এলপিজির অন্যতম উপাদান প্রোপেনের দাম প্রতি মেট্রিক টন ৮৭০ ডলার এবং বিউটেন ৮৩০ ডলার। এই মূল্য গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আবার গত বছর এই সময়ে দাম ছিল অর্ধেকে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে প্রতি মেট্রিক টন প্রোপেনের দাম ছিল ৪৩০ ডলার এবং বিউটেন ৪৪০ ডলার। সৌদি আরামকোর মূল্য অনুযায়ী বিশ্বে এলপিজির দাম নির্ধারিত হয়।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার প্রভাবে গত পাঁচ মাস ধরে দেশীয় বাজারেও একাধারে বেড়েছে বোতলজাত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপি) দাম। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ১২ কেজির বোতলজাত এলপি গ্যাসের দাম ১৩১৩ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এরমধ্যে ৩০ দিনের ব্যবধানে দুই বার দাম বাড়িয়েছে সরকারি জ্বালানি মূল্য নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটি। গত ১০ অক্টোবর প্রতি ১২ কেজির বোতলে ১০৩৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২৫৯ টাকা করা হয়। এর আগে গত ২৯ জুলাই আগের ৮৯১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯৩ টাকা দর নির্ধারণ করে। পরবর্তী ৩০ আগস্ট আবারো বাড়িয়ে ১০৩৩ টাকা করা হয়। অথচ এখনো সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপিজিএলের সাড়ে ১২ কেজির এলপি গ্যাসের দাম এখনো ৫৯১ টাকাই রয়েছে।
জানা যায়, এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরামকো। এটি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপি ভিত্তি মূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। ৩৫ অনুপাত ৬৫ হিসাবে প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণ করার পরে মূল একই হওয়ার কারণে গড় মূল্যও একই দাড়ায়।
সৌদি সিপির মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের শুরুতে বৈশ্বিক অতিমারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়ে সারা বিশ্ব। ২০২০ সালের এপ্রিলে গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে। ওই মাসে প্রোপেন প্রতি টন ২৩০ ডলার এবং বিউটেন ২৪০ ডলারে বিক্রি হয়। তবে পরের মাসেই দাম বেড়ে প্রোপেন-বিউটেন দুটোর দামই ৩৪০ ডলারে উঠে যায়। এরপর ধীরে ধীরে দাম বাড়লেও গত জানুয়ারিতে প্রোপেন ৫৫০ ডলার এবং বিউটেন ৫৩০ ডলারে দাঁড়ায়। গত পাঁচ মাসে হু হু করে বাড়তে থাকে এলপিজির দাম।
সৌদি আরামকোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসে প্রোপেন ৫৩০ ডলার ও বিউটেন ৫২৫ ডলারে থাকলেও জুলাই মাসে প্রোপেন-বিউটেন দুটোই ৬২০ ডলারে, আগস্ট মাসে প্রোপেন ৬৬০ এবং বিউটেন ৬৫৫ ডলার, সেপ্টেম্বর মাসে প্রোপেন ও বিউটেন ৬৬৫ ডলার, অক্টোবর মাসে প্রোপেন ৮০০ ডলার এবং বিউটেনের দাম উঠে ৭৯৫ ডলারে। গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি টনে গড়ে ৫০ ডলার বেড়েছে এলপিজির দাম। তথ্য মতে, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রোপেন ১০১০ ডলার এবং বিউটেন ১০২০ ডলারে দাম উঠে। পরবর্তীতে কমে ওই বছরের নভেম্বরে প্রোপেনের দাম প্রতিটন ৬১০ ডলার এবং বিউটেন ৬০০ ডলারে নেমে আসে।
এদিকে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বর্তমানে দেশে গৃহস্থালী, হোটেল, রেস্তোঁরায় একটি জনপ্রিয় জ্বালানি। বর্তমানে ৫৮টি অপারেটর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিলেও ২৮টি অপারেটর বাজারে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করেছে। বড় বড় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাল্ক এলপিজি আমদানি করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এই এলপি গ্যাসের ৯৮ শতাংশই আমদানি করতে হয়। যার পুরোটা আসে বেসরকারি মাধ্যমে। বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বছরে প্রায় ১২ লাখ টনের বেশি এলপিজি আমদানি করে বোতলজাত করে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করছেন। এখাতে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
এলপিজি গ্যাস পরিবেশক সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি খোরশেদুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এলপিজির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এতে এলপিজি ব্যবসার পরিধিও বাড়ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপিজিএল যদি উৎপাদন বাড়াতো তাহলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতো। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও বড় আমদানিকারকরা চাইলে বিইআরসি’র ঘোষিত মূল্য থেকে কম মূল্যে বিক্রি করতে পারেন। কারণ তারা বাল্কে বেশি আকারে আমদানি করে থাকেন। যে কারণে তাদের আমদানি খরচ কম।’ তিনি বলেন, ‘এখন তরল জ্বালানির মতো এলপিজির আমদানিও যদি সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে গ্রাহকরা সুফল পেতো।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধপানির দাম ৫ শতাংশ বাড়াচ্ছে ওয়াসা
পরবর্তী নিবন্ধবলী হবো আমরা সাধারণ যাত্রীরাই