পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়াচ্ছে ওয়াসা

জানুয়ারি থেকে কার্যকর, বিলুপ্ত হচ্ছে গড়বিল

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ

পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়াতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। যা আগামী ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। নতুন দর অনুযায়ী প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির জন্য আবাসিক গ্রাহকদের দিতে হবে ১৩ টাকা ২ পয়সা। যার বর্তমান মূল্য ১২ টাকা ৪০ পয়সা। অনাবাসিক গ্রাহকদের দিতে হবে ৩১ টাকা ৮২ পয়সা। যার বর্তমান মূল্য ৩০ টাকা ৩০ পয়সা (এক হাজার লিটার পানির দাম)। এদিকে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম ওয়াসার গড়বিল প্রথা। গতকাল চট্টগ্রাম ওয়াসার ৬৪ তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে মিটার বিহীন সংযোগে বিল আদায় হবে মিটার থাকাকালীন সময়ের ৩ মাসের বিলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। তাও আদায় হবে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত। তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে নতুন মিটার দিতে হবে।
এছাড়াও এখন থেকে ওয়াসার মিটার পরির্দশকগণ গ্রাহকদের মিটার পরির্দশনকালে তাদের আইডি কার্ড পরিদর্শন করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে বাতিল হচ্ছে বদি আলম প্রথা (মিটার রিডার কর্তৃক নিযুক্ত দালাল)।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ওয়াসার ৬৪তম বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। এর আগে ২০১৯ সালে ৯ আগস্ট চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ পাঠায়। কিন্তু মন্ত্রণালয় রাজি না হাওয়ায় গত বছরের ১ মার্চ দ্বিতীয় দফা পানির দাম পুনঃনির্ধারণ করে। সে অনুযায়ী আবাসিকে পানির দাম ছিল ১২ টাকা ৪০ পয়সা এবং অনাবাসিকে ৩০ টাকা ৩০ পয়সা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভার ক্ষমতা রয়েছে পানির ৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির। বোর্ড সভার নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছরের মতো এই বছরও পানির ৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ আজাদীকে জানান, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন-১৯৬৬ এর ২২ (২) ধারা অনুযায়ী পানির ইউনিট প্রতি ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার। বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পানির নতুন দর ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও গড় বিলের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক উভয় খাতে ৫শতাংশ হারে পানির বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় গড় বিল নিয়ে বোর্ড সদস্য সাংবাদিক মহসীন কাজীর উত্থাপিত তদন্ত রিপোর্টের ৯ সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এই ব্যাপারে ওয়াসার বোর্ড সদস্য সাংবাদিক মহসীন কাজী আজাদীকে জানান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ইচ্ছে মতো গড়বিল আদায় বন্ধ হচ্ছে। তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত মতে এখন থেকে আদায় হবে অভিকর। ২০১৬ সালে জারিকৃত অফিস আদেশটি বাতিলপূর্বক পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন (পানি ও পয়ঃ অভিকর) বিধিমালা ২০১১ এর ৬ (২) উপবিধি মোতাবেক গড়বিল জারি করার সুপারিশ করা হলো ( পূর্বের তিন মাসের মিটার রিডিংয়ের গড়ের ভিত্তিতে পানির অভিকর বিল জারি)।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ওয়াসার ৬১ তম বোর্ড সভায় বোর্ড সদস্য মহসীন কাজী ওয়াসার গড়বিল বাতিলের প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবের ভিত্তিতে ওয়াসার ডিএমডিকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ৬২ তম সভায় গড় বিল বাতিলের ব্যাপারে সুর্নিদিষ্ট কোনো সুপারিশমালা পেশ করতে না পারায় ৬২ তম বোর্ড সভায় বোর্ড সদস্য মহসীন কাজীকে আহ্বায়ক এবং উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) মো. ছামসুল আলমকে সদস্য সচিব করে গড়বিল জারি সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। এই কমিটি গড়বিল বন্ধে ৯ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করে। গতকালের বোর্ড সভায় এই ৯দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়।
গতকালের বোর্ড সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ, বোর্ড সদস্যসহ ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফ্লাইওভারে ফাটল নেই : চসিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন
পরবর্তী নিবন্ধ৭ বছরে এলপিজির রেকর্ড মূল্য, ভোক্তাদের নাভিশ্বাস