ফ্লাইওভারে ফাটল নেই : চসিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন

ফিনিশিং করে দেওয়ার সুপারিশ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

নগরের বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের কালুরঘাটমুখী আরাকান সড়কের সাথে সংযুক্ত র‌্যাম্পের দুটি পিলারের যেখানে ‘ফাটল’ মনে হয়েছে সেখানে ‘হাই স্ট্রেংথ থিন কংক্রিট’ দিয়ে ফিনিশিং করে দেয়ার সুপারিশ করা হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) গঠিত ‘নিরপেক্ষ তদন্ত’ কমিটির প্রতিবেদনে। তবে প্রতিবেদনে ‘কোনো ফাটল পরিলক্ষিত হয়নি’ বলেও উল্লেখ করা হয়। গতকাল বৃস্পতিবার চসিকের কাছে হস্তান্তর করা প্রতিবেদনটিতে তিনটি পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ রয়েছে।
এদিকে গতকালও আনুষ্ঠানিকভাবে র‌্যাম্পটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি। তবে গত রাত ৮ টায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, যান চলাচল বন্ধে চসিক যে প্রতিবন্ধক দিয়েছিল তার মাঝখানে কে বা কারা চলাচলের জায়গা তৈরি করেছে। সেখান দিয়ে মোটরসাইকেল চলতে দেখা গেছে। রিদুয়ানুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে দুয়েকটা সিএনজিও চলাচল করে।’
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে র‌্যাম্পটির দুটি পিলারে ফাটল দেখা দেওয়ার সংবাদ প্রচার হলে গত ২৫ অক্টোবর রাত ১১ টা থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। ইতোমধ্যে র‌্যাম্পটির প্রবেশমুখে একটি ‘হাইট ব্যারিয়ার’ (ভারী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধক) নির্মাণও করা হয়। কবে যান চলাচলের জন্য র‌্যাম্পটি খুলে দেওয়া হবে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকোশলী মো. রফিকুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। সেখানে তিনটি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই বলা হয়েছে যেখান থেকে ফোম সরে গেছে সেখানে হাই স্ট্রেংথ থিন কংক্রিট দিয়ে সিল করে দেওয়া হয়। বিষয়টি সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলীকে অবহিত করেছি। তারা সিল করে আমাদের জানালে গাড়ি চালু করে দিতে পারবো।
জানা গেছে, ফাটল সৃষ্টির খবর ছড়িয়ে পড়লে ২৬ অক্টোবর পিলার দুটি পর্যবেক্ষণ করে সিডিএ। সেদিন সকালে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য ফাটল হয়েছে মন্তব্য করলেও বিকেলে সিডিএ’র সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী দাবি করেন, কোন ফাটল হয়নি। এদিন চসিক দাবি করে, নির্মাণ অথবা ডিজাইনের ত্রুটির জন্য ফাটল হতে পারে। পরদিন ২৭ অক্টোবর পরিদর্শন শেষে র‌্যাম্পটির নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালটেন্টস লিমিটেড জানিয়েছিল, ‘এটা ফাটল নয়। কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট’।
পরবর্তীতে মেয়রের নির্দেশে ২৮ অক্টোবর ফাটল’ সৃষ্টির কারণ উদঘাটন ও প্রতিকার নির্ণয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে চসিক। কমিটির সদস্যরা হলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রহমান ভূঁইয়া এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান। তারা ২ নভেম্বর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ফাটল পাননি বলে জানান। সর্বশেষ গতকাল তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
বিষয়টি কমিটির সদস্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ওখানে কনস্ট্রকশন জয়েন্টে ফোম ছিল সেগুলো সরে গেছে। যার জন্য ক্র্যাকের মত মনে হচ্ছে। আসলে ওখানে কোনো ক্র্যাক নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ ফাটলের গুজব ছড়িয়েছেন বলেও সন্দেহ পোষণ করেন তিনি।
পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ : প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ও নন-ডেস্ট্রাকটিভ টেস্টের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে তিনটি পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ করে। প্রথম পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশে বলা হয়, পিলার দুটিতে আপাতদৃষ্টিতে সৃষ্ট ফাটল প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে কোন স্ট্রাকচারাল ক্র্যাক বা ফাটল হিসেবে পরিলক্ষিত হয়নি। এমতাবস্থায় পিলার দুটির ওই অংশটুকুতে বিদ্যমান ফোম সরিয়ে যথাযথভাবে পরিষ্কার করে সে অংশটুকু হাই স্ট্রেংথ থিন কংক্রিট ব্যবহার করে ঐ অংশে পুরোপুরিভাবে কংক্রিট পৌঁছানো নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে ফিনিশিং করে দিতে হবে।
দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশে বলা হয়, ডিপিএম কন্সালটেন্ট লিঃ ও ম্যাঙ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিঃ এর প্রতিনিধিগণের সাথে আলোচনায় তদন্ত কমিটি জানতে পারেন যে, ফ্লাইওভারের এ অংশটুকু লাইট ট্রাফিক (হালকা যানবাহন) ডিজাইন করা হয়েছিল। তদুপরি, একটি অংশে ১৪ দশমিক ৩৪৬ মিটার এর ‘কার্ভড ক্যান্টিলিভার স্প্যান’ও রয়েছে। ফলে, ফ্লাইওভারের এ অংশে শুধুমাত্র লাইট ট্রাফিক বা হালকা যানবাহন চলাচলের সুযোগ রাখা ও সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।
তৃতীয় পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার যেহেতু একটি লাইফলাইন স্ট্রাকচার ফলে এর স্ট্রাকচারাল হেলথ মনিটরিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ প্রেক্ষিতে সার্বক্ষণিক মনিটরিং সম্ভব না হলেও সময়ে সময়ে ব্রিজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনিটরিং (স্ট্রাকচারাল হেলথ মনিটরিং) করা অবশ্যই জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়ন সম্ভব
পরবর্তী নিবন্ধপানির দাম ৫ শতাংশ বাড়াচ্ছে ওয়াসা