৬৩ ঘণ্টা পর রাঙ্গুনিয়ার গহীন পাহাড় থেকে মুক্ত

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৯:২৭ অপরাহ্ণ

রাঙামাটির চন্দ্রঘোনা থেকে অপহরণের ৬৩ ঘণ্টা পর সেই নুরুল আলমকে (৩৬) ছেড়ে দিয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

আজ সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের গহীন পাহাড়ের অপহরণকারীদের আস্তানা থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর নুরুল আলমকে হেফাজতে নেয় চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ।

আজ সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় ভুক্তভোগী নুরুল আলম চন্দ্রঘোনা থানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন।

পুলিশের নানামুখী তৎপরতায় নুরুলকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া থানাধীন পদুয়া এলাকার দাগী সন্ত্রাসী একাধিক ডাকাতি, অপহরণ ও অস্ত্র মামলার আসামি মো. এমদাদ এ ঘটনার মূল হোতা। পদুয়ার ৫নং ওয়ার্ডের জয়নগর গ্রামের আব্দুল নবীর ছেলে এমদাদের দলে একাধিক পাহাড়ি সন্ত্রাসীও আছে।

এই ব্যাপারে চন্দ্রঘোনা থানার ওসি (তদন্ত) ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, “পুলিশের নানামুখী তৎপরতার কারণে নুরুলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা পাশের রাঙ্গুনিয়া থানাধীন পদুয়া এলাকার দাগী সন্ত্রাসী এমদাদকে এ ঘটনার নেপথ্য নায়ক বলে সন্দেহ করি। তাকে আমরা গত দুইদিন পর্যবেক্ষণ করি। এরপর পদুয়ায় তার বিভিন্ন আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। বাদীপক্ষের লোকজনও শুরু থেকে সন্ত্রাসী এমদাদকে সন্দেহ করে আসছিল। মামলার এজাহারেও তার উল্লেখ আছে। নুরুলকে ছেড়ে দিতে এমদাদের পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে চাপ দিতে থাকে বাদীপক্ষ। এক পর্যায়ে নুরুল আলমকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় অপহরণকারী এই দাগী সন্ত্রাসীর সহযোগীরা।”

এর আগে গত শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে ১০ থেকে ১২ জন সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী চন্দ্রঘোনা থানার বাঙ্গালহালিয়া ধলিয়া মুসলিম পাড়ার ‘মিম কৃষিজীবী খামারে’ ঢুকে নুরুল আলমকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

নুরুল আলমকে দ্রুত উদ্ধারের সহায়তা চাইতে আজ সোমবার সকাল দশটার দিকে র‌্যাব-৭ এর হাটহাজারী কার্যালয়ে যান তার পরিবারের সদস্যরা।

জানা গেছে, গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নুরুল আলমের মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের কল করে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সন্ত্রাসীরা। আজ সোমবার ভোর পাঁচটার দিকেও অজ্ঞাত স্থান থেকে তার মোবাইল ফোন থেকে তার পরিবারের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। মুক্তিপণ না দিলে নুরুল আলমকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছিল তারা।

অপহরণের শিকার মো. নুরুল আলমের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত ফয়েজ আহমদ। তারা তিন ভাই, তিন বোন। নুরুল আলমের সংসারে আছে স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্র সন্তান।

অপহরণের ঘটনায় নুরুল আলমের ভাই মো. কুতুব উদ্দিন গতকাল রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২জন পাহাড়ি সন্ত্রাসীকে আসামি করে চন্দ্রঘোনা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

এজাহারে বলা হয়, অপহৃত নুরুল আলম চন্দ্রঘোনা থানাধীন বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ধলিয়া মুসলিম পাড়া গ্রামে ‘মিম কৃষিজীবী খামারে বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে দেখাশোনা করেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর বেলা ২টা থেকে খামারে অবস্থান করছিলেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১টার দিকে অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী খামারে ঢুকে নুরুল আলমকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

ঘটনাটি গতকাল রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ভোর পাঁচটার দিকে বাদীকে জানান ভুক্তভোগীর সাথে থাকা খামারের কেয়ারটেকার সাইফুল ও নুরুল আলমের ভাগিনা আবদুল আওয়াল। একই দিন ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন থেকে বাদীর বড় ভাই কাতার প্রবাসী মো. নুর মোহাম্মদের মোবাইল ফোনে কল করা হয়। এসময় নুরুল আলম তার বড় ভাইকে জানান যে তাকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে এসেছে। সন্ত্রাসীরা তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করছে। মুক্তিপণ না দিলে তাকে জবাই করে হত্যা করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রাফিক পরিদর্শককে পরিবহন শ্রমিকদের ধাওয়া (ভিডিও দেখুন)
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে সাংসদ নদভীর ভাতিজার বিরুদ্ধে অপপ্রচার