৫ জেএমবি সদস্যের মৃত্যুদণ্ড

ঈশা খাঁ ঘাঁটির মসজিদে বোমা হামলা মামলার রায়

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৮ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির মসজিদে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে চার্জশিটভুক্ত ৫ জেএমবি সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তারা হলেন, নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য এম সাখাওয়াত হোসেন, বলকিপার ও টাঙ্গাইলের আবদুল মান্নান, দিনাজপুরের রমজান আলী, সাতক্ষীরার মো. বাবুল রহমান ওরফে রনি ও আব্দুল মান্নানের বড় ভাই আব্দুল গাফ্‌ফার। এর মধ্যে এম সাখাওয়াত হোসেন ঘটনার পর থেকে পলাতক। বাকীরা রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। গতকাল চট্টগ্রামের সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল হালিম এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে কাঠগড়ায় হাজির থাকা আসামিদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালত কক্ষে হাজির করা হয়। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের পিপি মনোরঞ্জন দাশ আজাদীকে বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়। ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেছেন। সন্দেহাতীতভাবে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৬ (২) ও ১২ ধারায় বিচারক ৫ জনকেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে একজন ছাড়া বাকীরা কারাগারে আছেন। পলাতক ওই একজনের প্রতি রায় ঘোষণা শেষে সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ঘোষিত এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ রায় জঙ্গি সংগঠনগুলোর জন্য একটি বার্তা। ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর জুমার নামাজের সময় চট্টগ্রামের বানৌজা ঈশা খাঁ ঘাঁটির ভেতরের বানৌজা পতেঙ্গা মসজিদ ও বানৌজা ঈশা খাঁ মসজিদে পৃথক দুটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সামরিক বেসামরিক মিলিয়ে মোট ২৪ জন আহত হন। এর মধ্যে এম জে রহমান, রিপুনজ্জামান, এম এ রহমান, এস এ রহমান, লুৎফুর রহমান, নেহারুল, এম এ আমিন, ইব্রাহীম, এম সাইফ, ইবতিশাম জাওয়াদ ছিলেন নৌবাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। যাদেরকে ঘটনার পর পর বানৌজা পতেঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নেভাল প্রভোস্ট মার্শাল কমান্ডার এম আবু সাঈদ সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে ইপিজেড থানায় মামলাটি করেন।
এজাহারে বর্ণনায় তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন আসামি আব্দুল মান্নান মুসল্লিদের ওপর পরপর দুটি বোমা (গ্রেনেড) নিক্ষেপ করে। এতে একটি বোমা বিস্ফোরণের কারণে হাসপাতালের গোল চত্ত্বরের ছাদের নিচে ও ফ্লোরে অগ্নিগোলকের সৃষ্টি হয় এবং আরেকটি বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় থেকে যায়। এক সময় আব্দুল মান্নান মুসল্লিদের হাতেই আটক হন। তার শরীর থেকে উদ্ধার করা হয় বোমাসহ সুইসাইডাল ভেল্ট। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সহযোগী হিসেবে আসামি রমজানের নাম বলেছেন।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, একই সময় অস্থায়ী বানৌজা ঈশা খাঁ মসজিদেও বোমা হামলা চালানো হয়। জুমার নামাজের দ্বিতীয় সেজদার সময় সামনের দিকে জামাতের প্রায় মাঝ বরাবর দুটি বোমা নিক্ষেপ করে এবং মুসল্লিদের মাঝে মিশে গিয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করে। পরে তাকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। ঘটনার পর ঈশা খাঁ ঘাঁটির সব গেট বন্ধ করে তল্লাশি চালোনো হয়। একপর্যায়ে এসএম-২ ব্যারেকের নিচতলার একটি টয়লেট থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বোমাসহ আরো একটি সুইসাইডাল ভেল্ট উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতরা জানায়, জেএমবি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরিকল্পনা অনুসারে উক্ত সংগঠনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার জোড়বাড়িয়া গ্রামের মো. নুরুল ইসলাম খানের ছেলে মো. রাইসুল ইসলাম খান নোমান ওরফে সিয়াম ওরফে ফারদিন ওরফে গিয়াস ওরফে নাসিফের নেতৃত্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ হামলা চালানো হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, হামলা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার আগে ২০১২/২০১৩ সালে আসামি মো. বাবলু রহমানকে পরিচয় ও শিক্ষাগত যোগ্যতা গোপন করে অস্থায়ী বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে নৌবাহিনীর অভ্যন্তরে কাপ্তাইয়ের বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জাম ঘাঁটিতে অনুপ্রবেশ করানো হয়।
আদালত সূত্র জানায়, মামলা দায়ের পরবর্তী ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর তদন্তে প্রাপ্ত দুইজনসহ ৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন ইপিজেড থানার পরিদর্শক মুহাম্মদ ওসমান গণি। পরে চলতি বছরের শুরুর দিকে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক। তারও পরে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী জালাল উদ্দিন রায় পরবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার এক বছর পর মামলা হয়। অথচ এর আগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এ এক বছর কোথায় ছিলেন? আসামিদের কারো ১৬৪ ধারার জবানবন্দি নেই। কোনো সাক্ষী এদের কারো নাম বলেন নি। আমরা এ রায়ে ক্ষুব্ধ। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আশা করছি, সেখানে প্রতিকার পাব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফের পানিবাহিত রোগের প্রকোপ
পরবর্তী নিবন্ধছয় কোম্পানি থেকে ৪৬২ কোটি টাকায় বার্থ অপারেটর কিনবে সরকার