৪৩৩টি আপিল নিষ্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রস্তাবিত পৌরকর নিয়ে আপত্তি থাকলে ভবন মালিকদের আপিল করার সুযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে আপিল নিষ্পত্তিতে বিধিমতে রিভিউ বোর্ড গঠন করা হয়। শুনানি শেষে এ বোর্ডই চূড়ান্ত করে পৌরকর। করবিধি ১৯৮৬ এর আলোকে চসিক মেয়র রিভিউ বোর্ডের অনুমোদন দেন। এ ধরনের একটি রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে চসিকের রাজস্ব সার্কেল-৮ এর আওতায় ৪৩৩ টি আপিল নিষ্পত্তি করা হয় ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে। তবে নিষ্পত্তিকৃত প্রসিডিং খাতায় রিভিউ বোর্ড সদস্যদের স্বাক্ষর নাই। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। স্বাক্ষর না থাকায় রিভিউ বোর্ডের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। গুঞ্জন রয়েছে- রিভিউ বোর্ড দেখিয়ে আপিলগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। সেক্ষেত্রে ভবন মালিকের সাথে যোগসাজশ করে সার্কেলটির কর কর্মকর্তা মনগড়া পৌরকর ধার্য করেছেন কী না সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। ওই সময় সার্কেলটির কর কর্মকর্তা ছিলেন মো. ইউছুপ। বর্তমানে তিনি রাজস্ব সার্কেল-৫ এর কর কর্মকর্তা (লাইসেন্স) হিসেবে কর্মরত। স্বাক্ষরহীন রিভিউ বোর্ডের প্রসিডিং খাতার ছায়ালিপি দৈনিক আজাদীর কাছে সংরক্ষিত আছে। এতে রিভিউ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তৎকালীন মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের নাম আছে। এছাড়া সদস্য হিসেবে নাম আছে ৩৬নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর মো. হাবিবুল হক, প্রকৌশলী আবদুর রশিদ ও এডভোকেট চন্দন বিশ্বাসের।
প্রসিডিং খাতার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ও ২২ ডিসেম্বর এবং ২০১৭ সালের ১৫ ও ১৯ জানুয়ারি, ১৪ ও ২২ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং ২৪ মে উত্তর পতেঙ্গার আপিল শুনানি হয়েছে। এছাড়া ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি, ৮, ২২, ২৬ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২৪ মে দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের শুনানি হয়েছে। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজস্ব সার্কেল-৮ এর তৎকালীন কর কর্মকর্তা মো. ইউছুফকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম স্বাক্ষরিত নোটিশে মো. ইউছুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলা হয়, ‘দায়িত্বপালনকালীন ১৪টি আপিল শুনানির কার্যদিবসের মধ্যে ৪৩৩ টি রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ ৩৮৯ টি ফরম পাওয়া যায়। ৪৪টি ফরম পাওয়া যায়নি। আপিল নিষ্পত্তিকৃত তিনটি ফরমে ও প্রসিডিং খাতায় রিভিউ বোর্ডের সদস্যবৃন্দের নিকট থেকে স্বাক্ষর গ্রহণ করেন নি। স্বাক্ষর গ্রহণ না করার কারণে আপিলগুলো নিষ্পন্নকৃত না অনিষ্পন্ন তা বুঝা যাচ্ছে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রশাসনিক দক্ষতা, কর্মে অস্বচ্ছতা, কাজের প্রতি উদাসীনতা প্রমাণিত হয়।’ নোটিশে কেন চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আপিল নিষ্পত্তিকৃত প্রসিডিং খাতায় অ্যাসেসমেন্ট রিভিউ বোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষর ছিল না। হতে পারে সেখানে কোনো অনিয়ম হয়েছে। একজন কর্মকর্তা দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করেছি। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। ওই সময় যিনি কর কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন তাকে শোকজ করেছি। জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ইউছুফ দৈনিক আজাদীকে বলেন, যারা ডিটিও ছিল তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তারাই করেছিল। শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো অফিসিয়াল বিষয়। অফিসকে জবাব দিব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়
পরবর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে প্রথমবার ইভিএমে ভোটগ্রহণ