১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে বসন্ত ঋতুর এক মহাযোগ রয়েছে। বসন্ত এলেই মানুষের মনে বিদ্রোহের আলো জ্বলে উঠেছে বার বার। ১৯৪৮ মার্চের ভাষার জন্য লড়াই, ১৯৫২ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ এর মার্চ সেই সাক্ষীই দেয়।
ক্ষমতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার অভিপ্রায়ে যে রাজনীতি তা মানুষের সম্মিলিত প্রত্যাশা ও দাবির কাছে তা এক ফুৎকারে উড়ে যায়। এই দাবি যে কখন দানা বেঁধে ওঠে তা ঝানু রাজনীতিবিদদের হিসেব-নিকেষেও অনেক সময় ধরা পড়ে না। যেমনটি ধরা পড়েনি একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের সময়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্ত যখন সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গ্রহণ করলো তখনই প্রমাণিত হলো যে, তারা রাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়েই বেশি চিন্তিত ছিলেন। এই ১৪৪ ধারার ভাঙার সিদ্ধান্ত তখন গ্রহণ করেছিল তিনটি পক্ষ : সাধারণ ছাত্র ও কর্মীরা এবং ছাত্র নেতাদের কয়েকজন, পৃথকভাবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এসে। পরদিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসভায় এর যে প্রতিফলন ঘটেছিল তা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসেই শুধু নয় বাঙালি জাতির পরবর্তীকাল ও বর্তমানেও বাংলাদেশের যে কোন আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রেরণাদায়ী ও গুরুত্বপূর্ণ। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের যে প্রস্তুতি ছাত্ররা ৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে চালাচ্ছিলেন, যে কর্মসূচি তারা গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল নিয়মতান্ত্রিক। বরঞ্চ মুসলিম আওয়ামী লীগ ও গুপ্ত কমিউনিস্ট পার্টি চেষ্টা করেছিল এই আন্দোলনের রাশ নিয়ন্ত্রণ করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে পরিচালিত করতে। কিন্তু তাদের চিন্তায় ভুল ছিল। তারা অনুধাবন করতে পারেননি মানুষ বিস্ফোরণের জন্য কী রকম উন্মুখ হয়ে আছে।
২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারির গভীর রাতে ফজলুল হক হল আর ঢাকা হলের (বর্তমানে শহীদুল্লাহ হল) মাঝখানের পুকুরপাড়ে রচিত হয়েছিল আরেক ইতিহাস। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, যে কোন মূল্যেই হোক, ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে এবং তার জন্য কতগুলো কৌশল অবলম্বনের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছিল। যেহেতু আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৪৪ ধারা ভাঙার বিপক্ষে, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে ফেব্রুয়ারির ছাত্রসভায় সভাপতিত্ব করলে তিনি ১৪৪ ধারা ভাঙার বিরুদ্ধে মত দিতে পারেন এবং তাতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে, তাই গাজীউল হককেই ঐ আমতলার সভায় সভাপতিত্ব করতে হবে। তিনি যদি সভার আগেই গ্রেপ্তার হয়ে যান এম আর আখতার মুকুল সভাপতিত্ব করবেন, তিনি গ্রেপ্তার হলে কমরুদ্দিন শহুদ সভাপতিত্ব করবেন। সেদিনের সেই ঘটনা বিশদভাবে উঠে এসেছে বশীর আলহেলালের ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’ গ্রন্থে। সেখানে পুকুরপাড়ের সেই বৈঠকের বর্ণনা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান করেছেন এভাবে, ‘২০ ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যাটা আমার কাছে খুব থমথমে মনে হয়েছিল। কি রকম একটা বিপদসংকেতের মত শোনাচ্ছিল সরকারি গাড়ি থেকে ১৪৪ ধারা জারির সংবাদ-পরিবেশনটি। যখন শুনলাম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হই।… রাত ন’টা দশটার সময় আমরা সাত-আটজন বন্ধু মিলিত হই ফজলুল হক হলের পুকুরের পূর্ব পাড়ে। যতদূর মনে পড়ে সেখানে মুহম্মদ সুলতান, আবদুল মমিন, জিল্লুর রহমান, কামরুদ্দিন শহুদ, গাজীউল হক, আনোয়ারুল হক খান ও এম আর আখতার উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র শবে মেরাজ ১১ মার্চ
পরবর্তী নিবন্ধ৪৩৩টি আপিল নিষ্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন