৩৭ বছর পর ডিডিটি পাউডার মুক্ত হচ্ছে দেশ

৫২০ টন পড়ে ছিল আগ্রাবাদে গুদামে ধ্বংসের জন্য কাল পাঠানো হচ্ছে ফ্রান্সে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে তিন যুগেরও বেশি সময় পর বাংলাদেশ থেকে মারাত্মক রকমের ক্ষতিকর রাসায়নিক পণ্য ডাইক্লোরো ডাফেনাইল ট্রাইক্লোরেথেন (ডিডিটি) পাউডার অপসারণের কাজ শুরু হচ্ছে। আগামীকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২৪ টিইইউএস কন্টেনার বোঝাই ৫২০ টন ডিডিটি পাউডার ফ্রান্সের উদ্দেশে পাঠানো শুরু হবে। বিভিন্ন দেশের ১৩টি বন্দরের অনুমোদন নেয়ার পরই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এসব কন্টেনার নিয়ে জাহাজ যাত্রা করার সুযোগ পাচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮৫ সালে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী মশা নিধনের উদ্দেশে পাকিস্তান থেকে ৫০০টন ডিডিটি পাউডার আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারিভাবে আমদানিকৃত ওই পাউডার অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় ওগুলো ব্যবহার করা হয়নি। সেই তখন থেকে পাউডারের চালানাটি নগরীর আগ্রাবাদে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের গুদামে রাখা হয়। কিন্তু জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় ১৯৯১ সালে দেশে ডিডিটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০১ সালে স্টকহোম সম্মেলনের চুক্তি অনুযায়ীও দুনিয়ার সবদেশই এই পাউডার নিষিদ্ধ করে।

বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো জানিয়েছে, ডিডিটি পাউডার ক্যান্সারের ঝুঁকি, আয়ুষ্কাল কমে যাওয়া, বংশবৃদ্ধিতে অস্বাভাবিকতা, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, শিশুর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত, প্রজননতন্ত্রের ক্ষতিসাধনসহ মানবদেহে নানাভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

কিন্তু দেশে এই ডিডিটি পাউডার ধ্বংস করার মতো অবকাঠামো নেই। তাই দীর্ঘদিন ধরে পাউডারগুলো ফ্রান্সে পাঠিয়ে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় অনুমোদনসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় এসব পাউডার পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে সব দেশের এবং সংস্থার অনুমোদনের পর ৩৭ বছর পর ডিডিটি ধ্বংস করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে। আগামীকাল শুক্রবার দেশ ডিডিটি মুক্ত হতে যাচ্ছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ব্যাপারে গতকাল বুধবার নগরীর ‘রেডিসন ব্লু’ হোটেলে ডিডিটি অপসারণ প্রকল্পের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডিডিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্যান্সার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে ক্যান্সার বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, একজন চিকিৎসক ক্যান্সার নিয়ে উপকূলীয় এলাকায় কাজ করতেন। তিনিও ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মায়ের দুধে ডিডিটির উপস্থিতি আমাদের প্রজন্মকে হুমকির মুখে ফেলেছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ডিডিটি ধ্বংসের দীর্ঘ প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এটা একটা যুদ্ধ ছিল। ডিডিটি মুক্তিযুদ্ধ। তিনি এই প্রকল্প নিয়ে যারা কাজ করেছেন তাদের প্রতি জাতি কৃতজ্ঞ থাকবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যারা এই প্রকল্পে কাজ করেছেন তাদের নাম পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে থাকা উচিত। এরাও নানা শারিরীক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। যদি এরূপ কিছু হয় তাহলে সরকার ও রাষ্ট্রকে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে ডিডিটি কিংবা ক্ষতিকর কোন রাসায়নিক দেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন নৌ পরিবহন সচিব।

ডিডিটি ধ্বংসের প্রক্রিয়া খুবই জটিল বলে উল্লেখ করে সভায় বলা হয় যে, ডিডিটি পুড়িয়ে যে ছাই হবে সেটিও সাবধানে সংরক্ষণ করতে হবে। শুধু তাই নয়, পুড়ানোর সময় যে গ্যাস বের হবে সেটিও সংরক্ষণ করতে হবে।

সভায় জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অরগানাইজেশন (এফএও) এর কীটনাশক বিশেষজ্ঞ মার্ক ডেভিস এতোদিন ধরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে ডিডিটির এত বিশাল একটি মজুদ এখানে পড়ে থাকাকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন। দুনিয়ার আর কোথাও এই ধরণের ক্ষতিকর রাসায়নিকের এত বড় মজুদ নেই বলেও মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ জানান, গ্লোবাল অ্যানভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) ও জলবায়ু ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ডিডিটি ধ্বংসের প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে এফএও এর সিনিয়র প্রযুক্তি কর্মকর্তা সাসো মার্টিনোভ, প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আহমেদ, এফএও প্রতিনিধি নূর আহমেদ খন্দকার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল হামিদ, বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস, পরিচালক মুফিদুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাউবোর প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পটিয়া হবে আরেকটি শহর
পরবর্তী নিবন্ধএমপিদের বিশাল শো ডাউনের পরিকল্পনা