২৬৩ দোকানের মধ্যে ২০৩টিরই ভ্যাট ফাঁকি

মিমি সুপার মার্কেটের ২৫৩ দোকানের বিরুদ্ধে মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ভ্যাট ফাঁকির বড় একটি ঘটনা উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। নগরীর অভিজাত বিপণি বিতান মিমি সুপার মার্কেটের ২৬৩টি দোকানের মধ্যে ২০৩টি দোকান বছরের পর বছর ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। ৬৩টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন করলেও পুরোপুরি ভ্যাট প্রদান না করে গোঁজামিলের আশ্রয় নিত বলে অভিযোগ ভ্যাট গোয়েন্দাদের। পুরো বিষয়টি উদঘাটন করে ২৫৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, মিমি সুপার মার্কেটে জরিপ চালিয়ে ভ্যাট গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, এখানে মোট ২৬৩টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসাবাণিজ্য করছেন অনেক ব্যবসায়ী। বিশ্বখ্যাত নানা ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি হয় এসব দোকানে। অনেকে আমদানি বাণিজ্যের সাথেও জড়িত। কিন্তু এই মার্কেটের অধিকাংশ দোকান নতুন ভ্যাট আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। স্বল্পসংখ্যক দোকান নিবন্ধন নিয়েছে। কিন্তু প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে ব্যবসা করছেন। এদের প্রায় সকলেই ক্রেতাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করে চলেছেন বলে ভ্যাট গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন।

ভ্যাট গোয়েন্দাদের জরিপে তথ্য উদঘাটিত হয়, মার্কেটের ২৬৩টি দোকানের মধ্যে নতুন ভ্যাট আইনে নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৬০টি দোকান। বাকি ২০৩টির নিবন্ধন নেই। তারা ভ্যাটও দেয় না। ভ্যাট গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, এরা ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট নেন। কিন্তু তা সরকারি কোষাগারে জমা দেন না।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইন খান জানান, প্রচলিত ভ্যাট আইন অনুযায়ী বাধ্যবাধকতা থাকলেও উক্ত ২০৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ভ্যাট অফিসে দাখিলপত্র জমা না দিয়ে ভ্যাট আইন লংঘন করে নিজেদের মর্জি মাফিক ব্যবসা পরিচালনা করছে। তিনি জানান, এই শপিংমলের ৬০টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনভুক্ত হলেও এদের অনেকেই তাদের দৈনন্দিন বিক্রয়ের প্রকৃত হিসাব রিটার্নে দেখান না এবং ভ্যাটও পরিশোধ করেন না। এদের মধ্যে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট সনদ ঝুলিয়ে রেখেছে। বাকি ৫০টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হলেও ভ্যাট সনদ দৃশ্যমান ছিল না। প্রচলিত ভ্যাট আইন অনুযায়ী নিবন্ধন সনদ দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

প্রচলিত আইন না মেনে ব্যবসা এবং ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ এনে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর গতকাল অনিবন্ধিত ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে মামলা করেছে। একইসাথে নিবন্ধিত ৬০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে ৫০টি প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন সনদ দৃশ্যমান রাখা হয়নি, তাদের বিরুদ্ধেও আইন লংঘনের অভিযোগ এনে মামলা করেছে। ব্যবসার শুরু থেকে প্রকৃত খরচের ভিত্তিতে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট হিসেব করে বকেয়া ও মাসিক দুই শতাংশ হারে সুদসহ জরিমানা অনিবন্ধিত ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায়ের জন্য চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থার উপপরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে মিমি সুপার মার্কেটে জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গোয়েন্দা দলটি ৭ সেপ্টেম্বর মার্কেটে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে উপরোক্ত ঘটনা উদঘাটন করে। অনুসন্ধানকালে মিমি সুপার মার্কেট মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে ভ্যাট গোয়েন্দাদের কাজে সহযোগিতা করেন বলে জানান ড. মইন খান।

যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা : ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে অনিবন্ধিত যেসব দোকানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, তুলি শাড়ী, পিন্ধন, মেসার্স আঁচল, মেসার্স তন্বী, নিউ আঁচল, আদরী, অপরূপা শাড়ী, মহসিন’স, মিস আর্ট, ফ্যামিলি ফুড, আল আয়েশা বোরকা, মিউজিক ক্লাব, ড্রিম গার্ডেন, আয়শা বোরকা ফ্যাশন, ইউটেন সিকো, জেএম স্টোর, ঠুমরী, লাইসিয়াম, অনন্যা, অংকুর, আফগান বোরকা, তুর্কি ফ্যাশন, তুর্কি ফ্যাশন ১, তুর্কি ফ্যাশন ২, নিউ তুর্কি ফ্যাশন, আরামদিনা বোরকা, ভিক্টোরিয়া, সাফা ফ্যাশন, কাশ্মির ফ্যাশন, মিনি ইন্ডিয়া, হুজুরের দোকান ১, হুজুরের দোকান ২, হুজুরের দোকান ৩, টাইম স্কয়ার, জেমস গ্যালারি, ব্লু স্টোন, আইসি, আল মদিনা বোরকা, অঙ্গনা, কটন ইন, স্টেপ ইন, লেডিস গ্যালারি, রেভলন, চ্যালিস, হিপস্‌ ওয়্যার, কে রহমান কালেকশন, হিজাব ১, হিজাব ২, কিডস এন্ড পপস, আরএঙ সুজ, আল মালেক ১, আল মালেক ২, বোবে, সুডেইজি, গার্লী সুজ, এমকে কালেকশন ১, এমকে কালেকশন ২, আরএঙ সুজ, এঙক্লুসিভ প্লাস, ফ্যাশন কালেকশন, সু গ্যালারি, ইউর চয়েস, হিল টুটু, নেঙট কালেকশন, লোটাস, ফ্যাশন ফেয়ার, নিউ অনন্ত সুজ, সু এঙপ্রেস, রাবা সুজ, কমপ্লিট ম্যান ১, কমপ্লিট ম্যান ২, মেসার্স অনিঙ, শৈশব, চেনাসুর, হান্টার চয়েস, দি সেল হাউজ, রবিন সুজ, পারি, পেন্টালোনস, মিনিমুন, স্টাইল কালেকশন, শুচি, থাইসপ, ওপাল হাউজ ১, ওপাল হাউজ ২, স্প্যালাস, আরিজা, ম্যাক, রং বে রং, নিউ চ্যান্সেলর, চলতি ফ্যাশন, ড্রাগন মার্ট, ফ্যাশন গার্ডেন, দিগন্ত বোরকা, এরাবিয়ান বোরকা, আঁচল স্যুট, জেলোজিয়া, নেঙটেল, পেন্ট ফেয়ার, প্রাইম স্টোর, অপ্সরা ফ্যাশন হাউজ, অর্চনা, কারেন্ট বুক সেন্টার, গ্লিমস, মায়াবী ফ্যাশন, আলো ফ্যাশন, রুৎমিলা, মিতা স্টোর, আফগান বোরকা, শাওন মনি, নাহার আইটি পার্ক, উইং প্লেনেট, মিতা স্টোর, মীম ফ্যাশন, নিউ মনি, ফ্রেন্ডস ফুড, রূপনগর, দি চিক লেদার, আলম কর্ণার, জিপি ধর, ময়ুরাক্ষী, মনে রেখ, মোঃ আবুল কাশেম, ওমেন্স গ্যালারি, সৌদিয়া বোরকা, আঁচল স্যুট, আজিজ কর্নার, লা বেলে রোব, সুবর্ণা, জ্যুতিকা ফ্যাশন, তৃষাজ ক্লজেট, স্টিচ ইন স্টাইল, স্মার্ট ওমেন্স কালেকশন; টেইলার্সের দোকানগুলোর মধ্যে তৃষা, পাপ্পু, মিমি লেডিস, রিয়া, আবির লেডিস, পপস্‌, প্রাবন, ফেয়ারী লেডিস, প্রিয়া, ললনা, প্রেনা, সাগর, নিউ কৃষ্ণা, নকশী, নিউ মাস্টার, রিমিঙ, অনিক, অঙ্গসাজ, সানি, অন্তর, পুতুল, দেবদূত লেডিস, হ্যাপী, স্টার অন্তর, নিউ প্রিয়া, আশরাফিয়া, পরী লেডিস, চৌধুরী লেডিস, নোহা লেডিস, জৈতা, শান্তা লেডিস, অঙ্গনা, নিশা, নবরূপা, নিরব, আবরণ, পারু, রূপায়ন, সালাম, সেলাইঘর লেডিস, হাফসা, নিপা, চিনা, চিক, সূচি এবং এম এম টেইলার্স।

স্বর্ণের দোকানগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউ মডার্ন মাহী জুয়েলার্স, নিউ কনক মালা, নিউ কনক বাহার, নিউ কনক বাহার, নিউ কনক বাহার, বনরূপা, রূপমহল, মোহনা, তরঙ্গ, আল ফারিয়াল, এসপি আশালতা, আল ফ্যাশন, সন্দ্বীপ, আরব, ইয়ারা, মডার্ণ আমানত, পূরবী, নিউ পূণম, বধূবরণ, পূরবী, পূরবী, গ্যালাঙি এবং মিমি জুয়েলার্স।

ভ্যাট নিবন্ধন করলেও দৃশ্যমান স্থানে সনদ না ঝুলানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে যে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সেগুলো হচ্ছে, সাথী, রূপসী, রজনীগন্ধা, সাদমান, মেসার্স তিশা, কানন, জেন ডিপার্টমেন্ট স্টোর, নিউ শাওন ভাদো ১, নিউ শাওন ভাদো ২, কাকন, আঁচল, লাগান, সেন্ট্রাল, বধূ, নিউ আকর্ষণ ১, ইয়াং লেডি, নিউ আকর্ষণ ২, নিউ জারা, জারা, নিপুন, মুম্বাই ফ্যাশন, সবিষা, নিউ কানন, মানসী, সামস্‌, বন্ধন, সেভওয়ে, মুফতী, হুজুরের দোকান, জান্নাত, কনকচাঁপা, বেস্ট আইসিটি, প্রাচী টেইলার্স। সনদ না ঝুলানো জুয়েলারির মধ্যে রয়েছে ডায়মন্ড, অনামিকা, আছমি, সানন্দা, রাজলক্ষ্মী, মন্দিরা, প্যারাডাইস, চন্দ্রিমা, চন্দ্রিকা, রূপশ্রী, রূপরাজ, তানিশক, পূরবী, নিউ বসুন্ধরা, বিশাল, সঙ্গিনী ও এসবি জুয়েলার্স।

ভ্যাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইন খান বলেন, একটি শপিং মলের এই অবস্থা আমরা উদঘাটন করেছি। ক্রমান্বয়ে চট্টগ্রামের অন্যান্য শপিং মলগুলোতেও অনুসন্ধান চালাব। কাস্টমারদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা হলেও সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ার এই প্রবণতা ঠেকানোর সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্রুত এগুচ্ছে নির্মাণ কাজ
পরবর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন আজ