১৯ বছর পর আজ নগর যুবলীগের সম্মেলন

চট্টগ্রামে উৎসবের আমেজ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩০ মে, ২০২২ at ৮:২০ পূর্বাহ্ণ

 

 

 

দীর্ঘ ১৯ বছর পর চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের বহুল প্রতীক্ষিত ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আজ। নগরীর কিং অব চিটাগং কনভেনশন সেন্টারে সকাল ১০টায় মহানগর যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আনুষ্ঠনিক উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নগর যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে চট্টগ্রাম জুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশী নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূলে লেগেছে উৎসবের আমেজ।

২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত সভাপতি চন্দন ধর ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন নগর যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে ২০১৩ সালের ৯ জুলাই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ১০১ সদস্যের সেই আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। এর মধ্যে সম্মেলন করে নিয়মিত কমিটি করার কথা বলা হলেও সেটি আর হয়নি। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নির্দেশে বহুল প্রতীক্ষিত নগর যুবলীগের সেই সম্মেলন আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

আজকের সম্মেলনে বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ এমপি, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ এমপি, সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ..ম নাছির উদ্দীন, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, ডা. আফছারুল আমিন এমপি, এম এ লতিফ এমপি, কেন্দ্রীয় যুবলীগ চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মুনির মো. শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল, আবদুর রহমান। সভাপতিত্ব করবেন মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু।

আজকের সম্মেলনকে সফল করতে নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, দিদারুল আলম দিদার, ফরিদ মাহমুদ ও মাহবুবুল হক সুমন সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

সভাপতিসাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী যারা: মহানগর যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে পদ প্রত্যাশী যুবনেতারা নিজ নিজ স্থান থেকে চেষ্টাতদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন।

নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনায় জানা গেছে, চট্টগ্রামে আওয়ামী রাজনীতিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ..ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীরা সংগঠনটির নেতৃত্বে আসতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরই মাঝে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জেগে ওঠেন।

পদ প্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় যুবলীগ চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতাদের পাশাপাশি নিজস্ব গ্রুপের মন্ত্রীএমপি এবং নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে ধরণা দিতে শুরু করেন। ফলে সভাপতিসাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তালিকা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক দীর্ঘ। এই দুই পদের জন্য শতাধিকের বেশি প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে পুরো নগর জুড়ে শত শত ডিজিটাল ব্যানারফেস্টুন, তোরণ নির্মাণ করেছেন।

কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ইচ্ছা করলেই সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজকের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে পারেন। তবে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ গত ২৮ ও ২৯ মে দক্ষিণ জেলা ও উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের পর দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রার্থীদের পরিচয় পর্ব শেষে কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলে ঢাকা থেকে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে কমিটি ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অধিবেশন শেষ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সুতরাং আজকের মহানগর যুবলীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনেও কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বলে জানান মহানগর যুবলীগে পদ প্রত্যাশীসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে যুবলীগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছেন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে যুবলীগের কমিটি করা হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদ পেতে দীর্ঘদিন যারা মাঠে সক্রিয় আছেন; তাদের মধ্যে রয়েছেন নগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মাহবুবুল হক সুমন অপর যুগ্ম আহবায়ক দিদারুল আলম দিদার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য ও নগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সাবেক সদস্য দেবাশীষ পাল দেবু, নগর যুবলীগের আরেক সভাপতি পদ প্রত্যাশী বিজিএমইএর প্রথম সহ সভাপতিযুবনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও নগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সাবেক সদস্য দিদারুল আলম দিদার, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম.আর. আজিম, ওমর গনি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য সুরনজিৎ বড়ুয়া লাবু, নগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সাবেক সদস্য ও ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন, গনি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ও পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর আঞ্জুমান আরা, ওমর গণি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস আরশেদুল আলম বাচ্চু, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সনত বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন, নগর যুবলীগের সাবেক সদস্য (চন্দনমশিউর কমিটি) ও সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সম্পাদক মন্ডলীর সাবেক সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন, নগর যুবলীগের বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম আইন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস সুমন দেবনাথ।

নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য হাফেজ কে.এম.শহীদুল কাওসার, সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি রাজীব হাসান রাজন, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম শিমুল, জাবেদুল আলম সুমন, নগর যুবলীগের সদস্য আসহাব রসুল জাহেদ, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি, নগর যুবলীগের সদস্য মাহবুব আলম আজাদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক সাইফুল আলম লিমন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সাজ্জাত হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ওমর গনি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ উদ্দিন, আবু সায়েম সাদাত সুমন, কর্মাস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী, ফসিউল আলম রিয়াদ, সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুমন ধর, সাবেক ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক আজমল হোসেন হিরু।

নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সাবেক মেয়র আ..ম নাছির উদ্দিনের নিজস্ব বলয়ের নেতারা নানা মাধ্যমে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। নগরীতে বিমানবন্দর, আগ্রাবাদ, লালখান বাজার, জিইসি মোড়, কাজির দেউড়ী মোড়, টাইগারপাস জিইসি মোড়, প্রবর্তক মোড়, পাঁচলাইশঅঙিজেন মোড়, কালুরঘাট ব্রিজ এলাকা, অপরদিকে শাহ আমানত সেতু এলাকা পর্যন্ত সম্ভাব্য সভাপতিসাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের নামের ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।

বলতে বলে নগর যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে নগর ও জেলার রাজনীতিতে নানানমুখি সমীকরণ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সভাপতিসাধারণ সম্পাদকের শীর্ষ পদ দুটি কোন গ্রুপের যুব ও ছাত্র নেতারা পাচ্ছেন তা নিয়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে এখন দিনরাত আলোচনা চলছে।

তবে এবারের যুবলীগের নতুন কমিটির সভাপতিসাধারণ সম্পাদকের ক্ষেত্রে মন্ত্রীএমপিদের কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার বা তদ্বিরে কাজ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের শীর্ষ নেতারা। এবারের যুবলীগের সভাপতিসাধারণ সম্পাদক হবেনসম্পূর্ণ ব্যক্তি ইমেজ (সাংগঠনিক ক্লিন ইমেজের) নিয়ে। রাজপথে দলের সক্রিয় ত্যাগী এবং পরিচ্ছন্ন সাবেকবর্তমান যুবনেতা এবং ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ নেতাদের মধ্য থেকেই মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতিসাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হতে পারে এমন আভাস দিয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্বাচনে যেতে বিএনপি এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে—- ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ
পরবর্তী নিবন্ধপল্লী উন্নয়নে সিরডাপের পুরস্কার পেলেন শেখ হাসিনা