দীর্ঘ ১৮ বছর পর বাবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বাবা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে আসেন তারেক রহমান। জিয়ারতের পর ৫টা ৪ মিনিটে তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেও জনস্রোতের কারণে সন্ধ্যার আগে পৌঁছাতে না পারায় তার পক্ষে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে অবশ্য রাত ১০টার দিকে তিনি নিজে স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
গতকাল বিকেল পৌনে ৫টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন তারেক রহমান। এসময় প্রথমে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া–মোনাজাত করা হয়। দলীয় নেতাদের সঙ্গে ফুল দেওয়া শেষে বাবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের সামনে একাকি নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারেক রহমান। এরপর মোনাজাত করেন তিনি। মোনাজাত শেষে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। চশমা খুলে অশ্রুসিক্ত চোখ মুছতে থাকেন। এ সময় তারেক রহমানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, নজরুল ইসলাম খানসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে বাবার করবের উদ্দেশ্যে রওনা হন তারেক রহমান। লাল–সবুজ রঙে সাজানো ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নামক বিশেষ নিরাপত্তা–বেষ্টিত বাসে চড়ে তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে আসেন। আগের দিন বৃহস্পতিবার এই বাসেই তিনি বিমানবন্দর থেকে গণসংবর্ধনাস্থলে যান। সেদিনের মতো গতকালও তারেক রহমানের বাসটি জনস্রোতের মধ্যে পড়ে। বাস ঘিরে কর্মী–সমর্থকদের প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে লেগে যায় পৌনে ২ ঘণ্টা। এসময় লাল–সবুজ পতাকার রঙে সাজানো বাসের সামনে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে তারেক রহমান কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে তারেক রহমান জিয়াউর রহমানের কবরে শেষবার শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন। এরপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও দীর্ঘ নির্বাসিত জীবনের কারণে আর আসা সম্ভব হয়নি।
রাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা : সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে একাত্তরের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৫টা ৪ মিনিটে জিয়া উদ্যান থেকে স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগে পাঁচ ঘণ্টার মতো। রাত ১০টার দিকে স্মৃতিসৌধে পৌঁছে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তারেক রহমান। এর আগে দুপুরে তারেক রহমান তার বাবা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে শেরেবাংলা নগরে যান। ২টা ২০ মিনিটে তার গাড়িবহর গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়ির সামনে থেকে জিয়া উদ্যানের পথে রওনা দেয়। আগের দিন যে বুলেটপ্রুফ বাসে করে তিনি বিমানবন্দর থেকে এসেছিলেন, সেই বাসে করেই তিনি শেরেবাংলা নগরে যান।
লাল–সবুজ পতাকার রঙে সাজানো বাসের সামনে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে তারেক রহমান কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। বাস ঘিরে কর্মী–সমর্থকদের প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে লেগে যায় পৌনে ২ ঘণ্টা। বেলা ৪টা ৩৬ মিনিটে বাস থেকে নেমে তিনি সমাধিস্থলে হেঁটে রওনা দেন। এরপর সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তাকে চোখ মুখতে দেখা যায়।
জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর ওই বাসে করেই বিকাল ৫টা ৪ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওনা হন তারেক রহমান। সড়কের দুই ধারে নেতাকর্মীদের ভিড় ডিঙিয়ে স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান পৌঁছান রাত ১০টার দিকে।
তার সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন।
সাভারের উদ্দেশে রওনা দিতে দেরি হওয়ায় দলের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আবদুল মঈন খানকে আগেই স্মৃতিসৌধে পাঠানো হয়। সূর্যাস্তের আগে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের বিধান থাকায় তারা তারেক রহমানের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।
তারেকের আগমন উপক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তার আগমনের খবরে বিপুল নেতাকর্মী আগেই ভিড় করেন স্মৃতিসৌধের বাইরে।












