১৭ বছরের সোয়া ১১ কোটি টাকা বকেয়ায় চোখ বিপিসির

ফ্রেইটপুল চার্জ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩০ জুন, ২০২১ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

একটি এলপিজি সিলিন্ডার পরিবহনের জন্য সমান পরিবহন ব্যয় (ফ্রেইটপুল চার্জ) নির্ধারিত ছিল ৫২ টাকা ১০ পয়সা। ক্ষেত্রবিশেষে আরও কম ছিল। প্রায় ১৭ বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্টান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে (এসএওসিএল) এ হিসেবে টাকা জমা পড়ে প্রায় ১১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। ১৭ বছর পরে এসে বিপিসির সেই হিসেবে চোখ পড়ে। তথ্য অনুযায়ী ২০০৩-০৪ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত ফ্রেইটপুল চার্জ হিসেবে এসএওসিএলের কোষাগারে ১১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা জমা পড়ে। বিপিসি বলছে, এলপিজি উৎপাদন করে বিপিসি। এসব এলপিজি বিপণন করার জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে পরিবহন বিল হিসেবে ফ্রেইটপুল চার্জ হিসেবে একটি অর্থ দেয়া হয়। আবার প্রত্যেক সিলিন্ডারে আলাদা মুনাফা প্রদান করা হয়। ২০২০ সালের ৫ নভেম্বরের ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেকটি এলপিজি সিলিন্ডারের জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ২৩ টাকা হারে মুনাফা (মার্জিন) দেয়া হয়।
জানা যায়, শুরু থেকে জ্বালানি বিপণনের জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে প্রত্যেক পণ্যের আলাদা আলাদা মুনাফা ও ফ্রেইটপুল চার্জ প্রদান করে বিপিসি। ২০১৯ সালের ১ জুলাই তারিখে বিপিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাড়ে ১২ কেজির প্রত্যেকটি এলপিজি সিলিন্ডারের ফ্রেইটপুল (সমান পরিবহন ভাড়া) চার্জ হিসেবে ব্যয় দেখানো হয় ৫২ টাকা ১০ পয়সা হারে। তখন থেকে প্রত্যেকটি সিলিন্ডারে ২৩ টাকা হারে বিপণন কোম্পানিগুলোকে মার্জিন হিসেবে প্রদান করে আসছিল বিপিসি। তখন একটি সিলিন্ডারের ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য নির্ধারিত ছিল ৭০০ টাকা। ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর তারিখে সাড়ে ১২ কেজির প্রত্যেকটি এলপিজি সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিপণন কোম্পানিগুলোর ফ্রেইটপুল চার্জ ও মার্জিন একই রাখা হয়। বিপিসির বিপণন কোম্পানিগুলোর মধ্যে পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানির চট্টগ্রামের বাইরে ডিপো ও ডিলার থাকাতে সিলিন্ডার পরিবহন খাতের তাদের ব্যয় হলেও এসএওসিএলের চট্টগ্রামের বাইরে কোন ডিলার না থাকায় এলপিজি সিলিন্ডার পরিবহনে তাদের কোন খরচ হতো না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ফ্রেইটপুল চার্জ খরচ না হলেও প্রায় ১৭ বছর ধরে বিপিসির কিছু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। তাছাড়া বেশ কয়েকবছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল না বিপিসির। এখন বিপিসি প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে একের পর এক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র বের হতে থাকে। ১১ কোটি টাকা ফ্রেইটপুল চার্জ বকেয়া তারই একটি অংশ। বিপিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু প্রত্যেক সিলিন্ডারের জন্য আলাদা মুনাফা দেয়া হয়। সেখানে পরিবহন ব্যয়ের জন্য দেয়া অর্থ যেহেতু ব্যয় হচ্ছে না, সেহেতু ফ্রেইটপুল চার্জ হিসেবে দেয়া টাকাগুলোর দাবিদার বিপিসি। যে কারণে ফ্রেইটপুল চার্জ হিসেবে ১৭ বছরে হিসাবভুক্ত প্রায় ১১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ফেরত দেয়ার জন্য এসএওসিএলের কাছে দাবিনামা পাঠানো হচ্ছে।
জানা যায়, দেশিয় গ্যাস ক্ষেত্র ও ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ক্রুড অয়েল পরিশোধনে উপজাত হিসেবে পাওয়া এলপিজি বোতলজাত করে বিপিসির বিতরণ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিক্রি করে আসছিল। এখানে বিতরণ কোম্পানিগুলোর চাহিদা মোতাবেক এলপিজি সিলিন্ডার বিতরণ করে পরবর্তীতে বিপিসির ঘোষণাকৃত মূল্যকাঠামো হিসেবে বিল করে বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে অর্থ আদায় করতো এলপিজিএল। একইভাবে নির্ধারিত ফ্রেইটপুল চার্জের টাকা জমা হয় এসএওসিএলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) এ টি এম সেলিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এসএওসিএলের ফ্রেইটপুল চার্জ বকেয়ার একটি হিসাব বিতরণ বিভাগ থেকে দেয়া হয়েছে। এলপিজি পরিবহনের জন্য একটি পরিবহন ব্যয় দেয়া হয়। কিন্তু আগে থেকে বিপিসির সিদ্ধান্ত ছিল নির্ধারণ করা চার্জের চেয়ে বেশি বিপিসি বহন করবে না। কিন্তু কম খরচ হলে কী হবে, সেটি উল্লেখ ছিল না। এসএওসিএল শুধু চট্টগ্রামে বিপণন করে সেক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে চার্জগুলো আদায়ের বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’
এ বিষয়ে এসএওসিএলের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক মোরশেদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি বিপিসির একান্ত। ফ্রেইটপুল চার্জের বিষয়টি এখনো আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে। বিপিসি থেকে দাবি করা হলে নিশ্চয়ই বকেয়াটি পরিশোধ করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংকটে প্রগতি
পরবর্তী নিবন্ধওসি প্রদীপ ও স্ত্রীর সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্বে ডিসি