সংকটে প্রগতি

এক বছরে ব্যয় ত্রিশ কোটি টাকা, আয় হবে চার কোটি টাকা ।। সরকারের ক্রয় নীতির কারণে কমে গেছে গাড়ি বিক্রি ।। আমদানি করা অনেক গাড়ির প্যাকেট খোলা হয়নি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩০ জুন, ২০২১ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

সরকারের গাড়ি ক্রয় নীতির কারণে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত গাড়ি তৈরির একমাত্র কারখানা প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। প্রগতির গাড়ি বিক্রি প্রায় বন্ধ বললেই চলে। এতে করে খোলা অবস্থায় (সিকেডি) আমদানিকৃত অনেকগুলো গাড়ির প্যাকেট খোলা সম্ভব হয়নি পুরো বছরে। উৎপাদন চালু রাখার জন্য পুরো বছরে মাত্র শ’খানেক গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে দেন দরবার করে ৫০টি গাড়ি বিক্রি করা হয়েছে। বাকিগুলো অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা আগামী বছরও অব্যাহত থাকলে প্রগতির চাকা ঘুরানো কঠিন হবে। প্রগতিকে চালু রাখতে গত বছর প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আর পুরো বছরে প্রগতি আয় করবে মাত্র চার কোটি টাকা। সূত্রে জানা যায়, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৬৬ সালে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে। ১৯৭২ সালে এটি জাতীয়করণ হয়। বিদেশ থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ খোলা অবস্থায় এনে এখানে সংযোজন করে বাজারজাত করা হয়। এছাড়া পুরো গাড়িও (সিবিইউ) আমদানি করে বিক্রি করেছে। গত বছর প্রগতির সামনে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। জাপানের বিশ্বখ্যাত মিৎসুবিশি মোটর্সের এল-২০০ মডেলের ডাবল কেবিন পিকআপ প্রগতিকে সংযোজনের অনুমোদন দেওয়া হয়। মিৎসুবিশির পক্ষ থেকে প্রগতিকে ট্রায়াল প্রোডাকশনের জন্য ৩২টি গাড়ি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রগতি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য সিকেডি অবস্থায় আরো ১০০ ইউনিট গাড়ি আমদানি করে। এর আগেরও কিছু গাড়ি ছিল প্রগতির কাছে। সব মিলে প্রগতির কাছে প্রায় ২শ গাড়ি ছিল। গত বছর তারা একশটির মতো গাড়ি উৎপাদন করেছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে রাখার জন্যই কার্যত কোনো রকমে উৎপাদন চালানো হয়। বাকি প্রায় একশ গাড়ির প্যাকেট খোলা হয়নি। একটি গাড়ির দাম চল্লিশ লাখ টাকা হলে প্রগতিতে প্রায় চল্লিশ কোটি টাকার গাড়ির প্যাকেট খোলা হয়নি।
প্রগতি পুরো বছরে একশটি গাড়ি উৎপাদন করলেও তা বিক্রি করতে পারছিল না। প্রগতির বড় ক্রেতা হচ্ছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু সরকারের অর্থ বিভাগ থেকে চলতি জুন মাস পর্যন্ত গাড়ি ক্রয় পুরোপুরি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর মাঝে প্রগতি দেন দরবার করে প্রথমে ৩৮টি, পরে আরো ১৮টি গাড়ি বিক্রি করেছে। এর বাইরে আরো পঞ্চাশটি গাড়ি তৈরি করেও বিক্রি করতে পারছে না। গাড়িগুলো কারখানায় পড়ে রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা গাড়ি ক্রয় বন্ধের নীতি যদি আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকে তাহলে প্রগতির চাকা চালু রাখা কঠিন হবে।
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান বলেন, প্রগতি খারাপ সময় পার করছে। আমরা একশটির মতো গাড়ি তৈরি করেছি পুরো বছরে। এর মধ্যে পঞ্চাশটির মতো বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলো এখনো অবিক্রিত। সরকারের গাড়ি ক্রয় নীতি পরিবর্তন না হলে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হবে।
তিনি বলেন, মিৎসুবিশি কোম্পানির নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমরা তাদের দুটি মডেলের গাড়ি সংযোজন এবং বাজারজাতের অনুমোদন পেয়েছি। কিন্তু এই অনুমোদনের সুফল ঘরে তোলা কঠিন হয়ে উঠেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্কুল-কলেজের ছুটি বাড়ল ৩১ জুলাই পর্যন্ত
পরবর্তী নিবন্ধ১৭ বছরের সোয়া ১১ কোটি টাকা বকেয়ায় চোখ বিপিসির