জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে বিভিন্ন সেবা অনলাইন–ভিত্তিক করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খাজনা বা কর জমা দেয়া, জমির মর্টগেজের তথ্য যাচাই, ই–নামজারি, মৌজা সিট সংগ্রহ ও খতিয়ান উত্তোলন। অনলাইন ভিত্তিক এ সেবা কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে সেবাগ্রহীতা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা ভূমি মন্ত্রণালয় তথা সরকারের প্রশংসা করছে। পত্রিকায় ডিজিটাল ভূমি সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে পড়ে নির্ধারিত ওয়েবসাইট থেকে ‘স্মার্ট ভূমি ও রেকর্ড ম্যাপ সেবা’ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জেনেছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক হিল্লোল সাহা। এরপর তিনি একটি বিএস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি উত্তোলনের জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। স্মার্ট ভূমি সেবার স্মার্টনেস যাচাই করার পুরো বিষয়টি হিল্লোল সাহা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তুলে ধরেছেন। ৩০ মার্চের সেই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘২৬ মার্চ রাতে একটি বিএস খতিয়ান তোলার জন্য আবেদন করি। যেটার ফি দেখায় ৫০ টাকা। সাথে ডাক মাশুল বাবদ ৪০ টাকা (অফিস থেকে সংগ্রহ করলে ডাক মাশুল লাগবে না, আমি যেহেতু অফিস থেকে সংগ্রহ করব না তাই ডাক সেবা নিলাম)। আমার ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে ৯২.৯৯ টাকা (খতিয়ানের চার্জ ৫০ টাকা, ডাক খরচ ৪০ টাকা, কার্ডের ব্যাংক চার্জ ২.৯৯ টাকা) প্রদান করতে করতে সময় রাত ১২ টা পার, মানে ২৭ মার্চ ২০২৩। আবেদন প্রক্রিয়া এবং পেমেন্ট প্রক্রিয়া খুব সহজ মনে হল। অনলাইনে দেখালো ডাক বিভাগের মাধ্যমে আমি খতিয়ানটি ১০এপ্রিলের মধ্যে পেতে পারি। কিন্তু আজ (৩০মার্চ) সকালে আমাকে অবাক করে ডাক বিভাগের ‘ডাক সেবার মাধ্যমে ভূমি সেবা’ নামক বিশেষ খামে খতিয়ানটি হাতে পেয়ে ভূমি সেবার আধুনিকায়নের এই নজির দেখে খুব খুশি হয়েছি।’ তিনি আরো লিখেন, ‘আমি ভূমি সংক্রান্ত অন্য সেবাগুলোও অনলাইনে আবেদন করব। আশা করি ভূমি বিষয়ক সেবাগুলো মানুষের উপকারে লাগবে। হয়ত আরো কিছু সময় লাগবে তাও শুরুতো হল….।’ পোস্টের শেষে আইনের এই শিক্ষক লিখেন, ‘সকলের উচিৎ জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের সেবাগুলো অনলাইন তথা ডিজিটাল মাধ্যমে পাওয়ার চেষ্টা করা।’
আইনজীবীরা বলছেন, ডিজিটাল ভূমি সেবা সরকারের অন্যতম একটি উদ্যোগ। এর ফলে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা কিছুটা হলেও কমেছে। হয়রানি কমতে শুরু করেছে। সময়ও নষ্ট হচ্ছে না। ভবিষ্যতে হয়তো এই অনলাইনেই ভূমি সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ সেবা পাওয়া যাবে।
আইনজীবীরা বলছেন, এখনো অনেক মৌজা ডিজিটাল আপডেট হয়নি। যার কারণে নামজারি করতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া খাজনা দাখিলের
বিষয়টি এখনো পূর্ণাঙ্গ অনলাইন হয়ে ওঠেনি। শুরুতেই স্বশরীরে ভূমি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।
ফেসবুকে কাজী ইফাদ নামের একজন লিখেন, ‘ভূমি সেবা অনলাইন হওয়াতে অনেক সহজ হয়ে গেছে। রিয়েল স্টেট কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে আমাকে প্রতিদিন কয়েকটা খতিয়ান চেক করা লাগে। অনলাইন হওয়াতে অনেক সহজে করতে পারি। এনালগ সিস্টেম হলে ভূমি অফিসে গিয়ে তাদের হাতে পায়ে ধরে কাজ করাতে হতো।’
ডিজিটাল ভূমি সেবা সম্পর্কে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘ডিজিটাল ভূমি সেবা সরকারের একটি বড় ধরনের উদ্যোগ। এখন ঘরে বসেই সেবা প্রার্থীরা শতভাগ সেবা গ্রহণ করছেন। বিকাশ, নগদে ফি দিতে পারছেন। এখন কোনো হয়রানি নেই। কাউকে কোনো টাকা দিতে হয় না।’ কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই সেবা প্রার্থীরা সেবা পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জমিতে বসে ম্যাপের মাধ্যমে কার জমি কোথায় তা দেখা যাচ্ছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভূমি সেবায় আমূল পরিবর্তন করেছেন বলেও জানান জেলা প্রশাসক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে। তবে সেটি ১৪ এপ্রিল থেকে আর থাকছে না। পূর্ণাঙ্গ ভূমি সেবা ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া হবে ঘোষণা দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়েও জটিলতা নিরসনে কাজ করছে সরকার। ভূমি অপরাধ লাঘবে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১ নামের আইনের খসড়া বর্তমানে মতামত গ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। এছাড়া জালিয়াতি ঠেকাতে নতুন একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে যেটি দিয়ে, সাব–রেজিস্ট্রার যখন জমি নিবন্ধন করবেন তখন সেই তথ্য এসিল্যান্ড অফিসে চলে যাবে। তখন এসিল্যান্ড সেটা একবারে মিউটেশন বা নামজারি করে দেবেন। এই মিউটেশন সাথে সাথে হয়ে গেলে একই জমি বারবার বিক্রি করা যাবে না।