‘হে নতুন প্রস্তুত হও, তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ’

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার বিজয় শিখা প্রজ্বলন

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

মুক্তিযোদ্ধাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে জয় বাংলা স্লোগানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার বিজয় শিখা প্রজ্বলন করা হয়েছে। একই সাথে বিজয় মঞ্চের কার্যক্রমের শুভ সূচনা করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধাদের জয় বাংলা স্লোগানের আনন্দঘন পরিবেশে প্রধান অতিথি অপারেশন জ্যাকপটের অধিনায়ক কমোডর এ. ডব্লিউ চৌধুরী বীর উত্তম ও বীর বিক্রম এবং বিশেষ অতিথি একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ মাসে গঠিত আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান নূর মোহাম্মদ চৌধুরী ও উপ-প্রধান শাহ বদিউল আলম বিজয় শিখা প্রজ্বলন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার প্রতিষ্ঠাতা এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর কনিষ্ঠ সন্তান বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইনামুল হক দানুর সন্তান কাজী রাজেশ ইমরান। এ সময় কমোডর এ. ডব্লিউ চৌধুরী নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, হে নতুন প্রস্তুত হও, তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ। বিজয় শিখা প্রজ্বলনের সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিগণ এবং বিজয় মেলার কর্মকর্তাগণ জাতীয় সংঙ্গীতের সুর মূর্চ্ছনায় জাতীয় ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার পতাকা উত্তোলন করেন। এর পরপরেই বিজয় মঞ্চে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্দীপনামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমোডর এ. ডব্লিউ চৌধুরী বীর উত্তম ও বীর বিক্রম বলেন, পৃথিবীর মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এত ত্যাগ, এত রক্তাঞ্জলি আর কোথাও নেই। এমনকি একটি ঘাতক অপশক্তি যাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি, যাদের কোনো সভ্যতা মর্যাদা ও সুস্থতা নেই; বর্বরতা, বিকৃতি, পাশবিক দস্যুতা তাদের রক্তের প্রতিটি কণায় মিশে গিয়েছিল বলেই আমরা মধ্যযুগীয় অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিলাম। এ থেকে ত্রাণ পেতে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র্ত্র হয়েছিল এবং হানাদারদের আত্মসমর্পনে বাধ্য করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।
তিনি আরো বলেন, পৃথিবীতে যুদ্ধ হয় মিলিটারি বনাম মিলিটারি, বাংলাদেশে যুদ্ধ হয় মিলিটারি বনাম সিভিলিয়ান। পৃথিবীতে কোনো যুদ্ধে ইউনিফর্মধারী মিলিটারি সিভিলিয়ানদের কাছে আত্মসমর্পনের নজির নেই। ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি মিলিটারি ফোর্স মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করলেও তারা ছিলেন সিভিলিয়ান রিপ্রেজেন্টেটিভ। সবচেয়ে বড় কথা একটি সশস্ত্র সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালি যুদ্ধ করতে করতেই সশস্ত্র হয়ে উঠে এবং তাদের কাছে হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক পরাজয় স্বীকার করাটা ইতিহাসেরই একমাত্র দুর্লভদৃষ্টান্ত। তিনি অপারেশন জ্যাকপট অভিযানের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা এবং কৌশলগত দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, একাত্তরের ১৪ আগস্ট সফল অপারেশন জ্যাকপট অভিযান ছিল টার্নিং পয়েন্ট অব দ্যা লিবারেশন ওয়ার। এই অপারেশনের আগে মুক্তিযুদ্ধের গতি কিছুটা শিথিল হয়ে পড়েছিল। এই অপারেশনের পর পরই পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। তারা বুঝে গিয়েছিল তাদের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ স্থল ও অন্তরীক্ষে হানাদার বাহিনী কোণঠাসা হলেও সমুদ্র নদীপথ ছিল তাদের জন্য অনেক নিরাপদ। কেন না সমুদ্রপথে তাদের বিদেশী দোসরদের সাপ্লাই লাইন নিরাপদ ছিল বলে যে ধারণাটি তাদের ছিল তাতেই জ্যাকপট ছিড় ধরিয়ে দেয়। তিনি উল্লেখ করেন অপারেশন জ্যাকপট একই দিন একই সময়ে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর এবং নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর নদী বন্দরে পরিচালিত হয়।
এই অভিযানে একই সঙ্গে ১৬০ জন নৌ কমান্ডো জীবনমৃত্যুর যুদ্ধে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। এই সফল অভিযানে অংশগ্রহণকারী কোনো নৌ কমান্ডো হতাহত না হলেও হানাদারদের নৌ বাহিনীর সিংহ ভাগ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল। এটাও পৃথিবীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় আমি বহুবার অতিথি হয়ে এসেছি। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের রাজনৈতিক শক্তির কঠিন দুঃসময়ে এই বিজয় মেলা আমাদেরকে ঘুরে দাড়াঁবার শক্তি দিয়েছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এখন জীবন সায়াহ্নে। তাই নতুন প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের কো-চেয়ারম্যান রাশেদ মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও এ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রথমে করোনাকালে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ।
বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি নূর মোহাম্মদ চৌধুরী, নৌ কমান্ডো যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আবু তাহের, নূরুন্নবী ও কামাল উদ্দিন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র।
সন্ধ্যায় বিজয় মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন খ্যাতিমান লোক ও গণশিল্পী ফকির সাহাবউদ্দিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাল-নালা খননে সাড়ে তিন বছর পর শুরু হচ্ছে কর্মযজ্ঞ
পরবর্তী নিবন্ধর‌্যাব ও এর ছয় কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা