খাল-নালা খননে সাড়ে তিন বছর পর শুরু হচ্ছে কর্মযজ্ঞ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর পর নগরের খাল-নালা খননে বড় ধরনের কর্মযজ্ঞ শুরু করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ লক্ষ্যে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বহির্ভূত ২৯৮টি খাল-নালার তালিকা তৈরি করেছে সংস্থাটি। নিজস্ব শ্রমিক ও খনন যন্ত্র দিয়ে এসব খাল-নালা খনন করা হবে। প্রয়োজনে নিজস্ব জনবলের বাইরেও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনা আছে সংস্থাটির। প্রস্তুতকৃত তালিকার মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চান্দগাঁও এবং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের খাল-নালাগুলোর খনন কাজ আজ শনিবার শুরুর কথা রয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ব্যাপক আকারে খাল-নালা খনন করেছিল চসিক। বর্ষাকে সামনে রেখে ওই বছরের ৭ জানুয়ারি খনন শুরু হয়েছিল। একই বছরের ৫ মার্চ জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত মেগা প্রকল্পের জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) পায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এরপর খনন কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় চসিক। পরবর্তীতে নগরের খালগুলো মেগা প্রকল্পের আওতায় সিডিএ খনন করবে, এমন অজুহাতে খনন কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখে চসিক। অবশ্য গত বছর খোরশেদ আলম সুজন প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকালে কয়েকটি খালে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালিয়েছিল সংস্থাটি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রণীত মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী নগরে ৫৭টি খাল রয়েছে। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। বিপরীতে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে মাত্র ৩৬টি। অর্থাৎ ২১টি খাল ভরাট হয়ে গেলেও খনন করা হচ্ছিল না দীর্ঘদিন। এছাড়া নগরে ৯৭২ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। যার বেশিরভাগ মেগা প্রকল্পের বাইরে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার দাবি থাকলেও মেগা প্রকল্প নিয়ে সিডিএ’র সঙ্গে দূরত্ব থাকায় খনন কাজ থেকে বিরত ছিল চসিক।
এ অবস্থায় আগামী বর্ষাকে সামনে রেখে তালিকা তৈরি করে মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা খাল-নালার খনন কাজ শুরুর নির্দেশনা দেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় কাউন্সিলরদের সহায়তায় ২৯৮ খাল-নালার তালিকা তৈরি করে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার তালিকাটি অনুমোদন দেন মেয়র। এর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শুরুর নির্দেশনাও দেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, অতীতে কি হয়েছে জানি না। নাগরিক স্বার্থে, মানুষকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষার জন্য আমরাও খাল-নালা পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবশ্য বড় বড় খালগুলো আমরা খনন করতে পারব না। সেগুলোতে সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। তাই আমরা ছোট ছোট খাল-নালাগুলোতে কাজ করব। তিনি বলেন, খাল-নালাগুলো কেবল আমরা পরিষ্কার করলে হবে না। জনগণকেও সচেতন হতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা-আর্বজনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। খাল-নালাগুলো পলিথিনে ভরে যাচ্ছে। তিনটি বাজারে পলিথিন বন্ধ করেছি। ধীরে ধীরে সব বাজারে করব।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, মেয়র গত অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত নবম সাধারণ সভায় খাল-নালা পরিষ্কারের সিদ্ধান্ত দেন। ওই সভায় তিনি বলেছিলেন, সিডিএ’র জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বাইরে অবস্থিত নালা-নর্দমা, খালগুলো দ্রুততার সাথে পরিষ্কার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের নিজ নিজ এলাকার প্রকল্প বহির্ভূত খাল-নালা, নর্দমার তালিকা প্রেরণের নির্দেশনা দেন। সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ১০ম সাধরণ সভায় মেয়র বলেন, গত বর্ষায় যে সব খাল-নালা ভরাট হয়ে জলজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। মেগাপ্রকল্প বর্হিভূত খাল-নালা থেকে চলতি শুষ্ক মৌসুমে মাটি উত্তোলন করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনের জনবলের বাইরেও শ্রমিক নিয়োগ করে কাজটি সম্পাদন করতে স্ব স্ব ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
৬ নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম আশরাফুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্পের কাজ চললেও জনগণ আমাদের ভুল বুঝে। সাধারণ সভায়ও এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেসব খাল-নালার জন্য জনগণের কষ্ট হচ্ছে মেয়র মহোদয় সেগুলো খননের জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এরপ্রেক্ষিতে কাল (আজ) থেকে মাটি উত্তোলন শুরু করব।
কোথায় কোথায় কাজ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে চাক্তাই এবং বির্জা খাল রয়েছে। চাক্তাই খালে সেনাবাহিনী কাজ করছে। র্বিজা খালে ময়লা-আর্বজনা জমে অবস্থা খারাপ হয়ে আছে। সেখানে কাজ করব। আভ্যন্তরীণ নালা পরিষ্কার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে আমাদের নিয়মিত কাজ চলে। পরিষ্কারও আছে। কিন্তু বড় খাল-নালা বন্ধ থাকায় পানি যেতে পারছে না।
চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, পূর্ব ষোলশহরের বহদ্দার বাড়ির পর বাদশা মিয়ার ঘাট এলাকায় এবং চান্দগাঁওয়ে বাস স্টেশন এলাকায় প্রথম দিন কাজ শুরু করব। উত্তোলনকৃত মাটি নূর নগর হাউজিং এবং কালুরঘাট এফআইডিসি রোডে ফেলা হবে।
চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ২৯৮টি খাল-নালার তালিকা পরিচ্ছন্ন বিভাগ থেকে পেয়েছি। চাহিদা অনুযায়ী দুইটি স্কেভেটর ও চারটি ড্রাম ট্রাক কাজের জন্য প্রস্তুত রেখেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবান্দরবানে ছাত্রলীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধ‘হে নতুন প্রস্তুত হও, তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ’