হাতে লাঠি মুখে বাঁশি, পাহারায় হাজারো স্বেচ্ছাসেবী

পাল্টে যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চিত্র

উখিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা প্রতিদিন কোনো না কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ক্যাম্পে ঘটে যায় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড এবং সিক্স মার্ডারের মতো আলোচিত নৃশংসতা। এতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে।
আলোচিত এসব ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের চেয়েও কঠোরতা অবলম্বন করছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে শত শত রোহিঙ্গা সেচ্ছাসেবীকে। এসব সেচ্ছাসেবীর লাঠি হাতে, মুখে বাঁশি, রাতে পালা করে ব্লক পাহারা দিচ্ছেন। ফলে অনেকটা পাল্টাতে শুরু করেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে এ পরিকল্পনার মূলে রয়েছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-৮ এর অধিনায়ক, পুলিশ সুপার মো. সিহাব কায়সার খান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম। এপিবিএন-৮ এর এ উদ্যেগ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় যুক্ত করেছেন ভিন্ন মাত্রা। তাদের এ উদ্যেগ বিভিন্ন মহলে প্রসংশিত হচ্ছে।
উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা ও ৮ এপিবিএন পুলিশের গণমাধ্যমের দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন জানান, উখিয়া ১৮ নাম্বার ক্যাম্পে সিঙ মার্ডারের পর গত ২৩ অক্টোবর প্রথমে শফিউল্লাহ কাটা (ক্যাম্প-১৬) ও জামতলী ক্যাম্পে (ক্যাম্প-১৫) রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে নিজ নিজ ব্লক এলাকা রাতে পাহারার আয়োজন করা শুরু হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন বলেন, চলতি মাসের ১০ নভেম্বর থেকে উখিয়ার ৮ এপিবিএনের দায়িত্বপূর্ণ ১১টি ক্যাম্পে এই পরিকল্পনা চালু করে নিরাপত্তা ছক সাজানো হয়। উখিয়াায় ২৩ ক্যাম্পের মধ্যে ১১টি ক্যাম্পে ৬৪টি ব্লক ও ৭৭৩টি সাব-ব্লক রয়েছে। এসব ক্যাম্পে ও ব্লকে ৩ লাখ ৬২ হাজার ২১৮ জন রোহিঙ্গার বসবাস। প্রতি রাতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে গড়ে ৩ হাজার ৮০০ জন রোহিঙ্গা তাদের ক্যাম্প পাহারা দিয়ে যায়।
৮ এপিবিএন অধিনায়ক বলেন, রোটেশন অনুযায়ী ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর একেকজনের পাহারার দায়িত্ব পড়ে। মোট পাহারা পোস্ট ১০১টি। প্রত্যেক পাহারাদার টিমের দলনেতার মোবাইল নম্বর পুলিশের কাছে রয়েছে। আবার তাদের কাছেও পুলিশের নম্বর রয়েছে। কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার আভাস পেলেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেন তারা।
উখিয়ার তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের মাঝি হামিদুল্লাহ বলেন, রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সবাই মিলে পাহারা দিচ্ছি। ভয়ে কোনো খারাপ লোক এলাকায় ঢোকার সাহস পাচ্ছে না। প্রথমে শুধু হাতে লাঠিসোটা নিয়ে পাহারা দিতাম। এখন বাঁশিও পেয়েছি। রোহিঙ্গারা জানান, অনেকে আরসার নাম ভাঙিয়ে ভয় দেখানোরও চেষ্টা করতো। এখন আর কেউ তেমন অন্যায় করার সাহস পায় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধটেকসই মানবসম্পদ তৈরি করলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল পাবে জাতি