হাটহাজারীতে পানীয় জলের তীব্র সংকট

নলকূপেও পানি নেই, জনদুর্ভোগ

হাটহাজারী প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২০ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারী উপজেলার প্রায় প্রত্যেক জায়গায় সুপেয় পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানীয় জলের নলকূপে পানি না উঠার কারনে এ অবস্থা হয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় পানীয় জলের নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে ও নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে না। তাই উপজেলার আওতাধীন বিভিন্ন স্থানে পানীয় জলের জন্য হাহাকার চলছে।
হাটহাজারী উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা রয়েছে। এসব এলাকার লোকজন এক সময় পুকুর দীঘির পানি পান করত। পানীয় জলের পর্যাপ্ত নলকূপ না থাকায় কিছু সচেতন মানুষ এক প্রকার বাধ্য হয়ে পুকুর দীঘির পানিকে পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করত। আর্থিক সংকটের কারণে অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পানীয় জলের নলকূপ স্থাপন করতে না পেরে দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হত। কালক্রমে স্থান বিশেষে জনস্বার্থে সরকারিভাবে সুপেয় পানীয় জলের নলকূপের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। অপরদিকে এলাকার মানুষ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠলে কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে বাড়িতে পানীয় জলের জন্য নলকূপ স্থাপন করতে শুরু করে। বর্তমানে উপজেলার আওতাধীন প্রত্যেক এলাকায় বহুতল পাকা ইমারত ও পাকা আবাসন গড়ে উঠেছে। এলাকার বিত্তবান লোকজন নিজস্ব প্রয়োজনে নিজ নিজ বাড়িতে অনেকে একাধিক নলকূপ স্থাপন করেছেন। সরকারিভাবে শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য স্থাপিত কমিউনিটি সেন্টার এবং জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে পানীয় জলের নলকূপ স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। স্থানে স্থানে নলকূপ থাকায় পানির প্রাপ্যতা অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। নলকূপে সহজে পানি পাওয়ায় পানির ব্যাপক অপচয় হয়েছে।
অপরদিকে উপজেলার আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু সরকারিভাবে স্থাপিত গভীর নলকূপে সারাক্ষণ পানি পড়ে পানির সীমাহীন অপচয় হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনের তাগিদে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপনের কারণে বেশি পানির অপচয় হয়েছে। আর পানির অপচয় হওয়ার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে গেছে। ফলে এখন উপজেলার আওতাধীন কয়েক হাজার নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বৈদ্যুতিক মোটরেও পানি উঠছে না। বৈদ্যুতিক মোটরে পানি না পেয়ে অপেক্ষাকৃত বিত্তশালীরা সাব মারসিবল পাম্প কিংবা কমেপ্রসার দিয়ে ভূ-গর্ভস্তর থেকে পানি উত্তোলন করছে। বিত্তশালীরা পানির জন্য কমেপ্রসার বসাতে গিয়ে হাটহাজারীর বড় বড় বাজারে স্যানিটারী দোকান ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিক্রের দোকানে কমেপ্রসারের সংকট দেখা দিয়েছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক দোকানদার কমেপ্রসারের দাম দ্বিগুণ করে দিয়েছে। হাটহাজারীতে বর্তমানে একটি কমেপ্রসারের মূল্য ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। যার মূল্য পূর্বে ছিল ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা। অনেক দোকানে বাড়তি দাম দিয়েও পানি উত্তোলনের কমেপ্রসার মেসিন পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার রুপেন কুমার শীল জানান, তার ওয়ার্ডের বেশির ভাগ নলকূপের পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ার কারণে এ অবস্থা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে ১২নং চিকনদন্ডী ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. অশোক কুমার দেব জানান, তাঁর এলাকার বিভিন্ন স্থানে নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। এমনকি তার ঘরের নলকূপেও অনেক কষ্ট করে পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে। খুব ভোরে পানি পাওয়া গেলেও সারাদিন পানি পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার বলে তিনি উল্লেখ করেন। শফিউল আলম নামে এক প্রকৌশলী বলেন, দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি, পানির ব্যাপকহারে অপচয়সহ নানা কারনে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এখন বেশির ভাগ নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি এ সুযোগে মাটির নীচ থেকে পানি উত্তোলনের কমপ্রসারের মূল্য সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তবে তিনি আসন্ন বর্ষা মৌসুমে সংকট কিছুটা নিরসন হতে পারে বলে উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূগোলের গোল
পরবর্তী নিবন্ধসেচ সংকটে অনাবাদী ৩শ একর জমি