সেচ সংকটে অনাবাদী ৩শ একর জমি

রাঙ্গনিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে খাল খননের দাবি

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২০ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় সেচ সংকটে ৩০০ একর জমি চাষাবাদ ব্যাহত হয়েছে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মুরাদনগর ও কুলকুরমাই গ্রামের শস্যভান্ডার খ্যাত টিব্বা বিল, মগ বিল, খিয়াং বিলসহ আশেপাশের এসব বিল সংশ্লিষ্টদের গাফলতির কারণে এবছর চাষাবাদ হয়নি। শুস্ক মৌসুমে প্রতি বছর বিলগুলো অনাবাদি থেকে যায় বলে অভিযোগ কৃষকদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিলগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়া কুলকুরমাই খাল ভরাট হয়ে গেছে। খালে পানি নেই। পানি না থাকায় চাষাবাদের জন্য থাকা দুটি স্কিম ঘর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। রোয়াজারহাট খালের প্রবেশ মুখেই স্লুইচ গেইট দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এতে ইছামতী নদী থেকে কুলকুরমাই খালে পানি প্রবেশ করতে পারে না। খালের বিভিন্ন স্পটে অপরিকিল্পত পাকা স্থাপনা নির্মাণ, আশেপাশের বসতবাড়ির বর্জ্য আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে কুলকুরমাই খালটি। এর বাইরেও গুমাইবিল থেকে পশ্চিমে অন্তত ৫ কিলোমিটার কুলকুরমাই খাল ভরাট হয়ে গেছে। একই অবস্থা পাশের চেংখালী খালেও। ফলে পৌরসভার মুরাদনগর ও কুলকুরমাই গ্রামের আশেপাশের ৩০০ একর জমি খরা মৌসুমে প্রতিবছর অনাবাদি থেকে যায় বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। খরা মৌসুমে অনাবাদী থাকা এসব বিলকে আবাদের আওতায় আনতে জরুরি ভিত্তিতে কুলকুরমাই খালে ৫ কিলোমিটার ও পার্শ্ববর্তী চেংখালী খালে এক কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করার প্রস্তাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর প্রেরণ করেছে পানি ব্যবস্থাপনা এসোসিয়েশনের ইছামতি ইউনিট। জরুরি ভিত্তিতে খালের খননসহ সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ কৃষকরাও। স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বোরো মৌসুমের শুরুতে টিব্বে বিল, মগ বিল, কিয়াং বিল, কুরমাই গ্রাম বিলসহ আশেপাশের বিলের কৃষকদের পানির জন্য হাহাকার করতে হয়। অথচ কৃষকদের সুবিধার্থে মওসুমের শুরুতে বিলের পার্শ্ববর্তী কুলকুরমাই খালে আশেপাশের বিভিন্ন নদী থেকে পানি সরবরাহ করা এবং বিভিন্ন স্কিম ম্যানেজারদের সহায়তায় কৃষি জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু গুমাই বিলের সাথে সংযুক্ত এই কুলকুরমাই খাল অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। তাছাড়া এসব খালের পাড় ভাঙন, খালের গতিপথ দখল করে স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে বোরো মৌসুমে খালে পানি প্রবেশ করতে পারে না। তাছাড়া এই খালের রোয়াজারহাট অংশে বিকল স্লুইচ গেইটের যথাযথ তদারকির অভাবে এসব বিলে প্রতি বছর অনাবাদি থাকে ৩’শ একর জমি। এভাবে বছরের পর বছর এসব বিল অনাবাদি থাকলেও এই নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটি পওর বিভাগের আওতাধীন এই জমি নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। উজ্জ্বল বড়ুয়া (৫৫) নামে এক কৃষক বলেন, এই বিলে তিনি গত আমন মৌসুমেও ২০ কানি জমিতে চাষাবাদ করেছিলেন। তবে বোরো মৌসুমে তার জমি সেচের অভাবে অনাবাদি রয়ে গেছে।
মাহাম্মদ আবু (৫০) নামে অপর এক কৃষক বলেন, তিনিও ১৫ কানি জমিতে প্রতিবছর চাষাবাদ করেন। তবে খরা মৌসুমে সেচের অভাবে তাদের জমিগুলো চাষাবাদ করতে পারেন না। এভাবে বেশ কবছর ধরে চলে এলেও এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তার।
স্থানীয় দৈবকীনন্দন কৃষি সমবায় সমিতির সদস্য আরিফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কুলকুরমাই খালের খনন, পাড় ভাঙন রোধ, প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় প্রায় প্রতিবছরই কুলকুরমাই খালে পানি শুকিয়ে যায়। এতে সেচের পানি সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে এই পরিস্থিতি আরও ব্যাপক আকার ধারণ করায় কুলকুরমাই খাল সংশ্লিষ্ট বিলগুলোতে খরা মৌসুমে একেবারেই চাষাবাদ সম্ভব হয় না। পানি ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসায় কৃষকরা চাষাবাদে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে।
কুলকুরমাই খালের স্কীম ব্যবস্থাপক ছৈয়দুল হক চৌধুরী বাদশা বলেন, গুমাই বিল থেকে কুলকুরমাই খালের প্রবেশ মুখেই ভরাট হয়ে গেছে। পশ্চিমে ইছামতি থেকেও প্রবেশ মুখেই একটি স্লুইচ গেইট বছরে পর বছর বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে।
এর ফলে খালে পানি প্রবেশ করতে পারে না। তাই অন্তত গুমাই বিল থেকে শুরু করে খালের ৫ কিলোমিটার অংশ খনন করা এবং বিকল স্লুইচ গেইট মেরামত করা হলে খালে পানির স্বাভাবিক গতিপথ সচল হবে। না হলে দিন দিন অনাবাদী জমির পরিমাণ বাড়বে এবং কৃষকরাও চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
পানি ব্যবস্থাপনা অ্যাসোসিয়েশন ইছামতি ইউনিটের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, কুলকুরমাই খাল ইছামতি নদীর শাখা। ৮০ দশকে খালটি খনন করা হয়েছিল। এই খালে স্কিম মেশিন বসিয়ে সেচ কাজ করা হয়। খালটি দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় আশেপাশের বিলের সেচকাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।
তাদের পক্ষ থেকে খাল খননের ব্যাপারে একটি প্রকল্প নেওয়ার কথা শুনেছি। কুলকুরমাই খালের হিন্দুপাড়া তিন খালের মুখ থেকে ৩ কিলোমিটার খাল কাটা শুরু করা হবে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, উপজেলায় অনেক খাল রয়েছে। যা অনেকাংশে ভরাট হয়ে গিয়ে পানিশূণ্য হয়ে পড়েছে। এতে সেচের অভাবে আশেপাশের জমিগুলো খরা মৌসুমে চাষাবাদ করা যায় না। খাল খনন আমাদের কাজ নয়। খননের বিষয়টি কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, খাল কাটার বিষয়ে আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসেছি। কুলকুরমাই খাল খনন করার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতিমধ্যেই খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অচিরেই মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে পানীয় জলের তীব্র সংকট
পরবর্তী নিবন্ধকরোনামুক্ত হয়ে ঘুরতে গেলেন তারা