হাটবাজার ইজারা প্রক্রিয়ায় ধীরগতি

চসিকের ২০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় অনিশ্চিত।। কৌশলে ‘কালেকশন’ সিস্টেম চালুর চেষ্টা সংঘবদ্ধ চক্রের

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৭ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) হাট-বাজার ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় অন্তত বিশ কোটি টাকার নিশ্চিত রাজস্ব আয় অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ইজারা না দিয়ে সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘কালেকশন’ করতে গেলে লাখ লাখ টাকা নয় ছয় হবে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। দুই দফা টেন্ডার আহ্বান করা হলেও গতকাল পর্যন্ত কাউকে কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। বড় বড় কয়েকটি বাজার টেন্ডার না হওয়ায় নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তবে সবকিছু ধীরগতিতে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় মাধ্যম হচ্ছে হাটবাজার ইজারা। নগরীতে সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন হাটবাজারগুলো ইজারা দেয়া হয়। এর মধ্যে কেবলমাত্র সাগরিকা গরুর বাজার থেকে রাজস্ব আয় হয় আট কোটি টাকারও বেশি। এ ভাবে বিবিরহাট গরুর বাজার, পোস্তার পাড় ছাগলের বাজার, রেয়াজুদ্দীন বাজার, কর্ণেল হাট, কাজীর হাট, বহদ্দারহাট, হাজী আবদুল আলী শপিং আর্কেড কাঁচাবাজার, দেওয়ানহাট কাঁচাবাজার, চকবাজার, কামাল বাজার, কমল মহাজন হাট, হামিদ উল্ল্যাহ খান বাজার থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করা হয়। প্রতি বছর বৈশাখ মাস থেকে নতুন ইজারাদার নিয়োগ দেয়া হয়। পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ইজারাদার বাজার থেকে ‘হাসিল’ কালেকশন করে থাকেন। ৩০ চৈত্র মেয়াদ শেষ হলে পহেলা বৈশাখ থেকে নতুন ইজারাদার দায়িত্ব নিয়ে কালেকশন করেন। আবার কোনো কারণে ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট বিভাগ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাসিল কালেকশন করে। সিটি কর্পোরেশন হাসিল কালেকশন করতে গেলেই লাখ লাখ টাকা নয় ছয় হয়ে যায় বলে অভিযোগ করে সূত্র বলেছে, সিটি কর্পোরেশনের সংঘবদ্ধ একটি চক্র বাজার ইজারা না দিয়ে কৌশলে ‘কালেকশন’ সিস্টেম চালু রাখার চেষ্টা করছে। যাতে বাজার থেকে যে পরিমাণ হাসিল তোলা হয় তার খুব সামান্য একটি অংশ কর্পোরেশনে জমা দিয়ে বাকিটা ভাগবাটোয়ারা করা যায়।
সূত্রটি জানায়, অতীতে বিভিন্ন সময় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কালেকশনের নামে লাখ লাখ টাকার হরিলুট হয়েছে। ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এ ভাবে হরিলুটের সুযোগ থাকে না। কারণ প্রকাশ্যে দরপত্রে অংশ নিয়ে ইজারাদার যে দর উল্লেখ করেন তা সিটি কর্পোরেশনে পে-অর্ডার মূলে জমা দিতে হয়। এর থেকে বেশি বা কম যা আয় হোক না কেন তা ইজারাদারের থাকে। কর্পোরেশনের আর কোনো মাথাব্যথা থাকে না।
বৈশাখ মাস থেকে নতুন ইজারাদার নিয়োগ দিতে ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় আরো অনেক আগে। অন্তত তিন মাস আগ থেকেই ইজারাদার নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। যাতে টেন্ডারে ইজারাদার নিয়োগ দেয়া সম্ভব না হলে যাতে সুষ্ঠুভাবে রি-টেন্ডার বা তৃতীয় দফায় টেন্ডার করা সম্ভব হয়। কিন্তু চলতি বছর ইজারা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ধীরগতি কাজ করছে বলে অভিযোগ করে সূত্র জানায়, এবার প্রথম টেন্ডার আহ্বান করা হয় ২ ফেব্রুয়ারি। দাখিলের সর্বশেষ সময় দেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি। এপ্রিলের ১৪ তারিখ থেকে নতুন ইজারাদার নিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ দেড় মাসেরও কম সময় আগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। যার খেসারত এখন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকেই দিতে হচ্ছে।
প্রথম দফা টেন্ডার আহ্বান করা হলে কয়েকটি বাজারে প্রত্যাশিত দর পাওয়া যায়। কিন্তু বেশির ভাগ হাটবাজারেরই প্রত্যাশিত দর উঠেনি। ফলে দ্বিতীয় দফা টেন্ডারের সিদ্ধান্ত হয়। দ্বিতীয় দফায় টেন্ডার আহ্বান করা হয় ২৪ মার্চ। এই টেন্ডার প্রক্রিয়ার কিছুই এখনো সম্পন্ন হয়নি। আগামী ১৩ এপ্রিল বছর শেষ হচ্ছে। এখন তৃতীয় দফায় টেন্ডার আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। কবে নাগাদ টেন্ডার সম্পন্ন করে হাটবাজারের জন্য ইজারাদার নিয়োগ হবে তা এখনো অনিশ্চিত। তবে এটুকু নিশ্চিত হয়েছে যে, এবার আর পহেলা বৈশাখ থেকে ইজারাদার থাকছে না। ফলে সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘কালেকশন’ করবে। আর এই কালেকশন নিজেরা করার জন্যই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
সূত্র বলেছে, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে অন্তত ২০ কোটি টাকা সিটি কর্পোরেশনের তহবিলে জমা হতো। নিশ্চিত এই রাজস্ব আয় থেকে কর্পোরেশনকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় কবে নাগাদ টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং ঠিক কবে নাগাদ ইজারাদার নিয়োগ হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তৃতীয় দফার টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে। অচিরেই তৃতীয় দফা টেন্ডার আহ্বান করে ইজারাদার নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি বিলম্ব বা কর্পোরেশনের ধীরগতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে দুই দফা টেন্ডার হয়েছে। কয়েকটি হাট বাজারের ব্যাপারে প্রত্যাশিত দর পেয়েছি। যেগুলো দর পাইনি সেগুলো রি-টেন্ডার করতে হচ্ছে। তিনি অচিরেই সবগুলো হাটবাজারে ইজারাদার নিয়োগ হয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করে ওরা
পরবর্তী নিবন্ধঅভিযান দেখে ‘পালিয়ে গেলেন’ ব্যবসায়ীরা