হঠাৎ ধনী হতে গিয়ে বাড়ছে নানা অপরাধ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

সবাই বড়লোক হতে চায়। বড়লোক মানে মানুষ হিসেবে বড় নয়, টাকার হিসেবে বড়। কেউ কেউ পরিশ্রম করে সেই জায়গায় পৌঁছায়, তবে বেশির ভাগের ধৈর্যশক্তি অত নেই। তারা খোঁজে শর্টকাট রাস্তা। কেউ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে, কেউ ভণ্ড সাধু সন্ন্যাসীর বেশ ধরে, কেউ টোটকা ওষুধের রাস্তা খোঁজে, কেউ জিনের বাদশা সাজে। মোদ্দাকথা, ‘ধান্দার খাতায় নাম লেখায়’। আমরা সবাই কমবেশি ধান্দা খুঁজি। অল্প সময়ে যারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, তারা সব থেকে বড় ধান্দাবাজ। বড়লোক হওয়ার একশ একটা উপায় আছে। সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র নানা কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে অল্প সময়ে বেশি টাকার মালিক হচ্ছে। এ ধরনের প্রতারক চক্রের গডফাদার ও সদস্যরা গ্রেপ্তারও হচ্ছে। এরপরও থামছে না প্রতারণা। প্রতারক চক্রকে ধরতে পুলিশ র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতারণা মামলার ক্ষেত্রে দুর্বলতা, পুলিশের গ্রেপ্তার ছাড়া অন্য কোন কর্তৃত্ব থাকে না। প্রতারক চক্র শক্তিশালী। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতারণা করে। প্রতারক চক্র নানা কৌশলে প্রতারণা করে বা অন্যকে ঠকিয়ে অল্প সময়ে বেশি টাকার মালিক হচ্ছে। দেশে নৈতিক শিক্ষার অভাবে অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি প্রতারণার ফাঁদ পেতে লাভবান হচ্ছে। আর ভিকটিম (প্রতারিত) পক্ষ দুর্বল (সহজ সরল) হওয়ায় অনেক সময় কর্তৃপক্ষ নিয়ে টানাটানি হয়। এছাড়াও বহু মানুষ লোভে পড়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে।
বাহক থেকে মাদক সম্রাট হতে চেয়েছিলেন কর্ণফুলীর আজম। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কাজ করতো মাদকের বাহক হিসেবে। তবে তার ইচ্ছে ছিল মাদকের বাহক নয়, বড় ডিলার হয়ে চট্টগ্রামের সকল মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসা করবে। তবে সেই আশা পূরণ হওয়ার আগেই মাদক ব্যবসায়ী মো. আজম উদ্দিন চৌধুরীকে ধরা পড়তে হয়েছে র‌্যাবের হাতে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সাড়ে ৫টার দিকে নগরের কর্ণফুলী থানার শাহমিরপুর বাদামতল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। একই সময় তার আরেক সহযোগীকেও আটক করে র‌্যাব।
র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ এ প্রসঙ্গে বলেন, নগরের কর্ণফুলী থানার শাহমিরপুর বাদামতল এলাকার একটি বসত বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদক সম্রাট আজমসহ তার আরেক সহযোগীকে আটক করা হয়। পাশাপাশি গুদামঘরের মাটি খুঁড়ে ২ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা ও দেশিয় প্রযুক্তিতে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব।
তিনি বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগে থেকেই মো. আজম ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রাথমিক অবস্থায় সে ইয়াবা ট্যাবলেট সরবরাহের কাজ করতো। তার বসতবাড়ির টিনশেড বেস্টিত একটি ঘরের মধ্যে মাটিতে গর্ত করে ইয়াবা এবং দেশিয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ করে রাখে। পরে সেগুলো থেকে খুচরা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে ছোট ছোট প্যাকেটে করে চালান সরবরাহ করতো। ‘অল্প সময়ে কোটিপতি’ হতে এবং স্বর্ণের বার ও টাকার লোভে গলাকেটে হত্যা করা হয় বিমান ধর নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে। পটিয়া থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত রাজ মিস্ত্রী আইয়ুব আলীর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ খুনের রহস্য বেরিয়ে এসেছে।
জবানবন্দিতে আইয়ুব আলী জানায়, তার প্রতিবেশী রিকশাচালক জিল্লুর রহমান গত ৩ সেপ্টেম্বর তাকে অতি অল্প সময়ে কোটিপতি হয়ে স্বাছন্দ্যে জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখায়। এজন্য তারা উপজেলার জঙ্গলখাইন এলাকার বিটা ট্রেনিং সেন্টার এলাকায় গিয়ে পরিকল্পনা করে ধনী হতে একটি অপরাধ সংঘটিত করতে হবে। এতে তারা টার্গেট করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে। তারা জানত, চট্টগ্রাম নগরে বিমান ধরের ৭টি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন রাতে বিমান ধর দোকান বন্ধ করে নগদ টাকা ও স্বর্ণের বার নিয়ে বাড়িতে ফিরে। এমন ধারণায় তাকে আটকানোর পরিকল্পনা নেয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর ২ দিন বিমান ধরের অপেক্ষায় রাতে লড়িহরা নির্জন এলাকায় তারা ২ জন পাহারা দিয়ে আসছিল। ওই সময় রাস্তায় লোকজন থাকায় তাকে আটকানো সম্ভব হয়নি। গত ৬ সেপ্টেম্বর একইভাবে রাত ১১টায় বিমান ধর মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা রিকশা চালক জিল্লুর রিকশা দিয়ে বিমান ধরের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এ সময় হত্যাকারীরা তার নগদ টাকা ও স্বর্ণের বার খোঁজাখুঁজি করতে চাইলে বিমান ধর বাধা দেয়। এক পর্যায়ে জিল্লুর হাতে থাকা দা দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে। তাতে অপারগ হলে আইয়ুব আলীর হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে তার গলায় আঘাত করার জন্য বলে। আইয়ুব আলী বিমান ধরের গলায় ধারালো দা বসিয়ে দিলে ঘটনাস্থলে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এতে জোরালোভাবে বিমান ধরের গলায় ধারালো দা বসিয়ে তার গলা কেটে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে বিমান ধরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন আসতে দেখে আইয়ুব আলী ও রিকশা চালক জিল্লুর রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
মোটরসাইকেল চুরি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা (ডিবি)। পুলিশ জানায়, অপরাধীরা দ্রুত বড়লোক হওয়ার নেশায় গত আট বছরে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে। চুরি করা মোটরসাইকেলগুলোর মধ্যে অধিকাংশই সুজুকি ব্র্যান্ডের জিঙার মডেলের। ডিবি জানায়, বিভিন্ন এলাকায় সুজুকি জিঙার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করত নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগীরা। বাইক চুরির জন্য চক্রটি বিশেষভাবে মাস্টার-কি (নকল চাবি) তৈরি করে। সুযোগ বুঝে নকল চাবির মাধ্যমে টার্গেট করা বাইকটি স্টার্ট করা মাত্রই পালিয়ে যেত তারা। এভাবে গত কয়েক বছরে অন্তত ৫০০টির বেশি মোটরসাইকেল চুরি করেছে নুর মোহাম্মদ। এরপর চোরাই মোটরসাইকেল কম দামে বিক্রি করত তারা।
এ অপরাধে জড়িয়ে পড়া দলপ্রধান নূর মোহাম্মদ একদিন গলির এক চায়ের দোকানে রবিনের সঙ্গে পরিচিত হয়। দুজন মিলে পরিকল্পনা করে, কীভাবে দ্রুত সময়ে বড়লোক হওয়া যায়। নুর মোহাম্মদ রবিনকে বলে, তার কাছে করাত ধার দেওয়ার রেদ আছে যা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক রবিনের জিঙার মোটরসাইকেলের চাবি রেদ দিয়ে ঘষে পাতলা করে শারিঘাটে পার্ক করা একটি জিঙার মোটরসাইকেল পরীক্ষামূলকভাবে চুরি করে। এরপর থেকে এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দুই বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে।
ভোরের আলো ফোটার পর স্ত্রী রত্নাকে নিয়ে টেকনাফ থেকে ঢাকা রওনা হন স্বামী মুকুল ব্যাপারী। চেপে বসেন সেন্টমার্টিন পরিবহনের একটি বাসে। পাশাপাশি বসে গুল্প-গুজবে সময় কাটছিল তাদের। দুজনেই পাকস্থলীতে বহন করছিলেন হালের সবচেয়ে প্রচলিত নেশার বড়ি ইয়াবা। যা অন্য যাত্রীরা কল্পনাও করতে পারেননি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আটকা পড়েন গোয়েন্দা জালে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে মুকুল জানিয়েছেন, ২৫শ ইয়াবা ঢাকায় এনে পৌঁছে দিলেই তারা পেতেন ২৫ হাজার টাকা। আর পুরো চালানের দাম ব্যাংকিং চ্যানেলেই চলে যেত মহাজনের হাতে। নিষিদ্ধ ইয়াবা কারবারি (মহাজন) টেকনাফের কোটিপতি মনিউল্লাহ মনিরকে অল্প সময়ে বিত্তশালী হতে দেখে তারাও নামেন এ কারবারে। তাদের মতে, ইয়াবা কারবারিদের হাতে আছে ‘আলাদিনের চেরাগ।’ যারাই ১-২ বছর ইয়াবার পাইকারি কারবার চালাতে পেরেছেন তারাই বনে গেছেন বিত্তশালী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাকেন্দ্র
পরবর্তী নিবন্ধমাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর পরিদর্শনে সাবের হোসেন চৌধুরী