সয়াবিনের দাম বৃদ্ধিতে রেকর্ড

বোতলজাতে লিটারে বেড়েছে ৩৮ টাকা পাম তেলে বেড়েছে ৪২ টাকা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৭ মে, ২০২২ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

দেশের বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের রেকর্ড দাম বৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ভোজ্যতেল মিল মালিকরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈঠক শেষে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ৩৮ টাকা ও পাম তেল লিটারে ৪২ টাকা বৃদ্ধির কথা জানান। অপরদিকে ঈদের আগে থেকে খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, অর্ডার দেয়ার পরেও সয়াবিনের সরবরাহ দিচ্ছে না কোম্পানিগুলো। হঠাৎ করে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ভোক্তারা বলছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তেল কোম্পানিগুলো আগে থেকে দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করেছে। তবে খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের দেশে সয়াবিন ও পাম তেল শতভাগ আমদানি নির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো ঊর্ধ্বমুখী ভোজ্যতেলের বাজার। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ ঈদের আগের দিন প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৩৫০ টাকায়। এছাড়া প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকায়। খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। তেল কিংবা অন্য পণ্য কেনাবেচায়ও ডিও স্লিপের মাধ্যমে আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এ সব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ৪৭ হাজার ৪৪ মেট্রিকটন পাম ও সয়াবিন তেল নিয়ে পৌঁছেছে ৪টি জাহাজ। জাহাজগুলোতে ২১ হাজার মেট্রিকটন নিয়ে এসেছে ওরিয়েন্ট চ্যালেঞ্জ, ৭ হাজার মেট্রিকটন নিয়ে এন এস স্টিলা, ৭ হাজার ৭৯৯ মেট্রিকটন নিয়ে মেঘনা প্রাইড জাহাজ ও ১১ হাজার ২৪৫ মেট্রিক টন নিয়ে সানজিন নামে ৪টি জাহাজ বিভিন্ন সময় বহির্নোঙরে ভিড়েছে। সিটি গ্রুপ, সেনা কল্যাণ এডিবল অয়েল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও বসুন্ধরা গ্রুপ এ সব পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি করে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফাচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়া ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হবে ৯৮৫ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেল ১৪০ টাকা থেকে বেড়ে ১ লিটার ১৮০ টাকা ও পাম তেল ৪২ টাকা বেড়ে ১ লিটার বিক্রি হবে ১৭২ টাকায়।

সংগঠনটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে তেলের মূল্য সমন্বয় করা হলো।

এক বছর আগেও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার ছিল ১৩৪ টাকা করে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তা নির্ধারণ করা হয় ১৬৮ টাকায়। ব্যবসায়ীরা মার্চ থেকে লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার রাজি না হওয়ায় সেদিন থেকে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। এরপর সরকার ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিক্রির ওপর থেকে ভ্যাট পুরোপুরি আর আমদানিতে ৫ শতাংশ রেখে বাকি সব ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়। পরে গত ২০ মার্চ লিটারে আট টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয় ১৬০ টাকায়। সেদিন ৫ লিটারে ৭৯৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৭৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের দাম ১৪৩ টাকা থেকে কমিয়ে ১৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজার দীর্ঘদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে গত ১০ দিনে প্রতি ডলারের দাম ৫ টাকা বেড়েছে। ফলে যারা কম দামে ঋণপত্র (এলসি) খুলেছেন, তাদের বাধ্য হয়ে বেশি দাম পরিশোধ করতে হবে। সয়াবিন ও পাম তেলের দাম শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী বেড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাকলিয়ায় ছুরিকাঘাতে তরুণ খুন
পরবর্তী নিবন্ধঘটনার মূল হোতা ইন্দ্রজিত এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে