সড়ক-ফুটপাত দখলমুক্ত করতে মাঠে নামছে চসিকের ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’

সারা শহর ঘুরে বেড়াবে ২০ সদস্যের দলটি আলাদা পোশাক ও ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৫ জুলাই, ২০২২ at ৪:০৮ পূর্বাহ্ণ

সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দখলদারমুক্ত করতে প্রায় অভিযান চালায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সকালে অভিযান চালালে বিকেলে আবারো দখল হয়ে যায়। এ অবস্থায় উচ্ছেদকৃত জায়গা পুনর্দখল রোধে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ বা বিশেষ দল মাঠে নামাচ্ছে সংস্থাটি। দলটি উচ্ছেদ হওয়া জায়গাগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করবে। এ সময় কোথাও পুনর্দখল হতে দেখলে সাথে সাথে আবারো উচ্ছেদে ‘অ্যাকশন’ শুরু করবে। এ ছাড়া সারা শহর ঘুরে ঘুরে কোথাও সড়ক ও ফুটপাত দখল হয়েছে কীনা তা চিহ্নিত করবে নবগঠিত ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ এর সদস্যরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আলাদা বিশেষ দল গঠন করেছি। শীঘ্রই তারা মাঠে নামবে। সবসময় টহলে থাকবে দলটি। উচ্ছেদকৃত জায়গাগুলো মনিটরিং করবে। উচ্ছেদকৃত জায়গায় যদি কেউ আবারো স্থাপনা নির্মাণ করে তাহলে তারা সাথে সাথে অ্যাকশনে নামবে। উচ্ছেদ করবে। দলটির আলাদা ইক্যুপমেন্ট থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, শুধু উচ্ছেদকৃত জায়গা না। পুরো শহর ঘুরে ঘুরে কোথাও সড়ক এবং ফুটপাত দখল হয়েছে কীনা তা চিহ্নিত করে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্র্তাকে রিপোর্ট করবে বিশেষ দলের সদস্যরা। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, ফুটপাত ও রাস্তায় কোনো অবৈধ দখলদার থাকতে পারবে না। যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন আমরা উচ্ছেদ করবো এবং পুনরায় যাতে দখল না হয় সেটাও নিশ্চিত করব। শহরের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে যা যা করণীয় সবটুকই করব।
২০ সদস্যের স্ট্রাইকিং ফোর্স : চসিক সূত্রে জানা গেছে, পরিচ্ছন্ন বিভাগের এমন ২০ জন শ্রমিককে ইতোমধ্যে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’র জন্য বাছাই করা হয়েছে। যারা বয়সে তরুণ এবং স্বাস্থ্যবান বা সুঠাম দেহের অধিকারী। দলটির জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশেষ পোশাক এবং জুতা। বর্তমানে পোশাক ডিজাইনের কাজ চলছে। তাদের থাকবে আলাদা নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত উপকরণ।
জানা গেছে, বিশেষ এ দলটির জন্য ১৮ ধরনের সরঞ্জাম সংগ্রহের লক্ষ্যে একটি তালিকা করা হয়েছে। যা কেনার প্রক্রিয়া চলছে। তালিকা অনুযায়ী সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে- ২০ জনের জন্য মানসম্মত পোশাক ও জুতা (সেফটি সুজ), ১০টি হ্যামার (হাতুড়ি), দুইটি হ্যামার ড্রিল (জ্যাক হ্যামার), ২০টি খুন্তি, ১০টি গেথি, ইন্ড্রস্ট্রিয়াল গ্লাভস, ২০টি মাথার হেলমেট, চারটি কাটার, দুইটি বৈদ্যুতিক প্লাস, ১০টি বেলচা, ১০টি কোদাল, পাঁচটি দা, পাঁচটি কুড়াল, গাছ ও লোহা কাটার জন্য দুইটি করাত, ১০টি চোখের জন্য সেফটি গ্লাস এবং রেকর্ডিং সুবিধাজনক দুইটি হ্যান্ড মাইক।
কোথাও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সময় নিয়মিত শ্রমিকের পাশাপাশি ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ এর সদস্যরাও সহযোগিতা করবেন। এর সঙ্গে প্রয়োজনে যোগ দিবেন ওয়ার্ড ভিত্তিক বরাদ্দ থাকা শ্রমিকরাও। ফলে বড় ধরনের কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতেও সুবিধা হবে। এমনটিই দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন চসিকের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মোবারক আলী।
যে কারণে স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন : সড়ক ও ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করে শহরের সৌন্দর্য ফেরানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে চান সিটি মেয়র। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি উচ্ছেদ অভিযানও জোরদার করা হয়। পরিচ্ছন্ন বিভাগ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে নিয়মিত অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল রোববার পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের ডিসি রোডস্থ আফগান মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় চলাচলের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে রাস্তাটি সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া একইদিন শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন সড়কের ফুটপাত দখল করে দোকানের কাঠ রেখে চলাচলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার দায়ে চারজনকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার আরাকান রোডে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এ ছাড়া গত সপ্তাহে চান্দগাঁও খাজা রোডে এবং বায়েজিদ এলাকায় বড় ধরনের অভিযান পরিচালিত হয়। তবে বেশিরভাগ জায়গা আবারো পুনর্দখল হয়ে যায়। তাই উচ্ছেদ হওয়া জায়গা পুনর্দখল রোধে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় চসিক। যা সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
এ বিষয়ে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ উচ্ছেদ কাজে সহায়তা করবে। পাশাপাশি নতুন করে যেন বসতে না পারে বা দখল করতে না পারে সেটার জন্য মুভমেন্ট করবে। ইতোমধ্যে স্ট্রাইকিং ফোর্স এর জন্য ২০ জন সদস্য পদায়ন করে অফিস আদেশও হয়েছে। তাদের জন্য একজন দলপতিও বাছাই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, উচ্ছেদ করার পর আমরা ফুটপাত ও রাস্তার জায়গা চিহ্নিত করে মার্কিং করে দিচ্ছে। পরবর্তীতে যাতে দখলদাররা মার্ক করা স্থানে বা রাস্তা ও ফুটপাতের জায়গায় না আসে তার জন্য সতর্কও করছি। স্ট্রাইকিং ফোর্স টহল দেয়ার সময় মার্কিং দেখলেই বুঝতে পারবে পুনর্দখল হয়েছে কীনা।
কবে নাগাদ বিশেষ দলটি মাঠে নামবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল গঠন হয়ে গেছে। সরঞ্জাম ও পোশাক সংগ্রহ চলছে। আশা করছি সাত-আট দিনের মধ্যে সংগ্রহ হয়ে যাবে। এরপর মাঠে নামবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবায়েজিদে গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফের ইউএনওর ভাষা মাস্তানের চেয়েও খারাপ : হাই কোর্ট