স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বিদ্বিষ্ট বিবর্ণ এক ভারত

কানাই দাশ

| মঙ্গলবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

দেশ ভাগ তথা ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের ৭৫ বছর পূর্ণ হল। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির divide and rule policy’i কারণে, তাদের ইন্ধনে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকে এই উপমহাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু হলেও জাতীয় কংগ্রেসের ক্রমাগত ব্যর্থতায় নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে চল্লিশের দশকে এসে তা শক্তি সঞ্চয় করে। হিন্দু মহাসভা ও জামায়াতে ইসলামী হিন্দ স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করে আর ইংরেজদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর মুক্তির নামে মুসলিম লীগের শুধু মুসলিমদের জন্য পৃথক আবাসভূমির দাবী এবং ইংরেজ সরকারের নিস্ক্রিয়তার ফলে কলকাতা, নোয়াখালী ও বিহারে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয় যাতে দেশ ভাগ অনিবার্য হয়ে উঠে। ১৯৪৭ সালের মধ্য আগষ্টে র‌্যাডক্লিফের পেন্সিলের দাগে ইংরেজরাই ভারতবর্ষকে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে বিভক্ত করে তাদের মতো করে দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে।
১৯৪৬ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত আইন সভার সদস্যদের দ্বারা দুই দেশে পৃথক দুটি গণপরিষদ গঠিত হয় ও এই দুই গণপরিষদ দুই দেশে সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার পরপরই বিভক্ত বাংলা ও পাঞ্জাব প্রদেশে প্রচন্ড হিংসা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চরমে উঠে। এই দুই প্রদেশে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়, ১ কোটির মত মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। ভারত ভাগের আইন অনুযায়ী লর্ড মাউন্টব্যটেনকে ১৯৪৮ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত উভয় দেশের গর্ভণর জেনারেল রাখার বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হয়। কিন্তু জিন্নাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে নিজেই পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেলের দায়িত্ব নেন। বাধ্য হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট করাচিতে পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল হিসেবে জিন্নাহকে ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লিয়াকত আলী খানকে শপথ পড়িয়ে সেদিনই দিবাগত মধ্যরাতে দিল্লি ফিরে লর্ড মাউন্টব্যাটেন রাজধানী দিল্লীর লাল কেল্লায় স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহেরুকে শপথ বাক্য পাঠ করান। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু “Tryst with destiny” খ্যাত এক আবেগপূর্ণ বক্তৃতায় বলেন- যখন সারা পৃথিবী ঘুমাচ্ছে তখন ভারত জেগে উঠেছে স্বাধীনতা ও মুক্তির আনন্দে। কিন্তু সেই মুহুর্তে বাংলা ও পাঞ্জাব মেতে উঠে ভ্রাতৃঘাতী রক্তাক্ত দাঙ্গায়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে মাউন্ট ব্যাটেন আইন অনুযায়ী ভারতের আলংকারিক সরকার প্রধান বা গভর্ণর জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব নেন।
ভারতের জাতির পিতা স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ হয়েও মহাত্মা গান্ধী কোন রাষ্ট্রীয় পদ বা দায়িত্ব নেননি। বরং ১৫ আগস্ট কলকাতার বেলেঘাটায় অবস্থান করছিলেন সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক হিংসা বন্ধ করতে। ১৫ আগস্টের পর পাঞ্জাবের সহিংসতা দিল্লী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতা, নোয়াখালী ও বিহার শান্ত করে মুসলিম সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য গান্ধী দিল্লী ছুটে গিয়ে আমরণ অনশনে বসেন। স্বয়ং মাউন্ট ব্যাটেন তাঁকে“One man boundary force” বলে অভিহিত করেন।
সব মিলিয়ে হিন্দু মহাসভা ও আরএসএস প্রভৃতি সাম্প্রদায়িক হিন্দু সংগঠন গান্ধীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। শেষ পর্যন্ত আরএসএস তথা আজকের বিজেপি’র উগ্র কর্মী নাথোরাম গডসে প্রার্থনারত অবস্থায় ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গান্ধীকে হত্যা করে। সারা উপমহাদেশে নেমে আসে শোকের ছায়া। শোকাভিভূত নেহেরু ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে বললেন “The Light has gone out of our life and there is darkness everywhere”| । ধর্মান্ধতার সে আঁধার আজ ৮০ বছর পরে আবার নতুনরূপে ঘনীভূত হচ্ছে উপমহাদেশের জনজীবনে। নাথোরাম গডসের ফাঁসি হলো খুনের অপরাধে। হিন্দু মহাসভা ও আরএসএস কে বেআইনী করা হলো। পরে হিন্দু মহাসভা জনসংঘ নামে আত্মপ্রকাশ করে- যে ঘৃণ্য শক্তি আজ বিজেপি নাম ধারন করে ভারতের ক্ষমতায়।
স্বাধীনতা পরবর্তী এই ডামাডোলের মধ্যে নেহেরু আধুনিক ভারত গড়ে তোলার জন্য ভারতের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার জন্য সংসদীয় গণতন্ত্রকে ভবিষ্যত শাসন ব্যবস্থা হিসেবে বেছে নেন। তিনি মনে করতেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও বৈষম্য দূরীকরণে মানুষের ভোটাধিকার ও জবাবদিহিতা, আইনের শাসন একান্ত অপরিহার্য। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি শুধু সেকুলার ডেমোক্র্যাট ছিলেন না, ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে ছিলেন মূলতঃ একজন অজ্ঞেয়বাদী। জেলে বসে রচিত তাঁর গ্রন্থ “The Discovery of India” বলা যায়, তাঁর magnum opus। ভারতীয় জীবন ও দর্শন নিয়ে গভীর জ্ঞান ও প্রত্যয় থেকে চমৎকার ইংরেজিতে লেখা এই বই পড়লে প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত নেহেরুকে প্লেটো কথিত ‘King Philosopher’ বলেই মনে হয়। স্বাধীন দেশের দায়িত্ব নিয়ে সেই প্রত্যয় ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি নতুন ভারত গঠনে মনোনিবেশ করেন। ১৯৪৭ সালে গণপরিষদের প্রথম বৈঠকেই তিনি সংবিধান কমিটি গঠন করেন ড. আম্বেদকরের নেতৃত্বে। ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীন ভারতের সংবিধান গণপরিষদে গৃহীত হয় ও ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হয়। সেই সংবিধানের ভিত্তিতে ১৯৫২ সালেই লোক সভার অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারত সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে।
নেহেরু বেঁচে থাকা অবস্থায় আরো দুটি সাধারণ নির্বাচন যথাসময়ে ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৪ সালের ২৭ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় ১৭ বছরের সংসদীয় শাসনে তিনি যে গণতান্ত্রিক কাঠামো ও সাংবিধানিক বিধি ব্যবস্থা তথা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, আইন, বিচারবিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যান তাঁর মৃত্যুর পরেও নানা ত্রুটিও সীমাবদ্ধতা নিয়ে তা এখনো টিকে আছে। ফলে অবাধ ভোটাধিকারের কারণে, জবাবদিহি ব্যবস্থা থাকার কারণে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় নানা বৈষম্য এমনকি কংগ্রেস আমলে মাঝে মধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হলেও তাদের দৃশ্যমান দেশত্যাগের ঘটনা ১৯৫১ সালের নেহেরু-লিয়াকত চুক্তির পরে আর ঘটেনি। ফলে সংখ্যা ও শক্তির ব্যাপ্তিতে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। ঠিক বিপরীত কারণে আমাদের দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা প্রতিরোধ শক্তিহীন হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে টাটা, বিড়লা, গোয়েঙ্কাদের ব্যবসা ও শিল্প পরিকাঠামোর পাশাপাশি তিনি সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের পরিকল্পিত শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় খাত গড়ে তুলে মিশ্র অর্থনীতি চালু করেন। ঠান্ডাযুদ্ধের সেই কঠিন সময়ে এশিয়ার বৃহৎ দেশ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থাকা সত্ত্বেও তিনি পাকিস্তানের মত কোন মার্কিন যুদ্ধ জোট তথা সিয়াটো, সেন্টোতে যোগ দেননি বরং টিটো, নাসের, সুকর্নকে নিয়ে মর্মবস্তুগত দিক থেকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন গড়ে তুলেন। নেহেরু এভাবে বিশ্ব দরবারে ভারতকে মর্যাদাপূর্ণ আসনে উন্নীত করেছেন। সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল হিসাবে মাঝখানে কয়েক বছরের বিরতি ছাড়া কংগ্রেস প্রায় ৬০ বছরের মত দেশ শাসন করে। কিন্তু ১৯৮৪ সালে ইন্দিরার মৃত্যুর পর থেকে ভারত ধর্মনিরপেক্ষতা ও স্বনির্ভর অর্থনীতির পথ থেকে সরে আসতে থাকে। রাজীব, নরসীমা রাও ও মনমোহন সিং এর দুই দফা শাসনামলে বিশেষ করে ১৯৯০ এর দশকে কংগ্রেস গণবিরোধী নিউলিবারেল অর্থনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং লুটেরা অর্থনীতির অনুষঙ্গ হিসেবে রাজনীতিতেও নরম হিন্দুত্ববাদের দিকে অগ্রসর হয়। এতে আসল হিন্দুত্ববাদী বিজেপির উত্থান ঘটে। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা, লুটেরা কর্পোরেট পুঁজির প্রভাব বাড়তে থাকে। কংগ্রেসের রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা, দুর্বলতা, পারিবারিক শাসন ও সেকুলার আঞ্চলিক দলগুলো অনৈতিক অবস্থান, বামদের দুর্বলতার কারণে বিজেপি দ্রুত শক্তি অর্জন করতে থাকে। হিন্দুত্ববাদী শক্তির উগ্র সম্প্রদায়িক অংশ মোদির নেতৃত্বে এককভাবে ২০১৪ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসে।
মোদির ৮ বছরের শাসনে নেহেরু ইন্দিরার ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারত এক ধর্মান্ধ ফ্যাসিস্ট দানবীয় শক্তির কবলে পড়েছে। মূলত গান্ধী হত্যাকারী সংঘ পরিবার নাগপুর থেকে বিজেপির নামে ভারত শাসন করছে। দীর্ঘদিন থেকে গড়ে ওঠা স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ সহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্বের কারণে মোদি নগ্নভাবে হিন্দুত্ববাদকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রধর্ম করতে না পারলেও পুরো ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও বহুত্ববাদকে আকন্ঠ সাম্প্রদায়িকতায় ডুবিয়ে দিচ্ছে, ইসলামফোবিয়ার কল্পিত মিথ ছড়িয়ে বিষিয়ে দিচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ মানস। ক্ষমতার জন্য ন্যূনতম নৈতিকতা ও সাংবিধানিক বিধি ব্যবস্থার ধার ধারে না মোদি। শিক্ষাক্ষেত্রে চলছে গৈরিকীকরণ। ভারতীয় জাতীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে ধর্ম পরিচয়কে তুলে ধরে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচারের ঢক্কা নিনাদ চলছে বাংলাদেশের মতো। প্রকট নেতৃত্বশূন্যতা ও পারিবারিক আধিপত্যের কারণে কংগ্রেস দাঁড়াতে পারছে না। মোদি আজ ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতির একজন খলনায়ক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে স্বাধীনতার ৭৫ বছরের মাথায় এবং গান্ধী-নেহেরু ও ইন্দিরার গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে “পাকিস্তান” বানাবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। বিজেপি ভারতের ইতিহাসে এক নতুন বয়ান তৈরী করছে। বিকৃত করছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাজ্ঞ নেতা, আধুনিক ভারতের মূল নির্মাতা পন্ডিত নেহেরুকে যত ছোট করা যায়, তা করছে। গান্ধীর খুনি নাথোরামকে নির্লজ্জভাবে হিরো বানাচ্ছে।
নাগরিকত্ব আইনসহ নানাভাবে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন চালাচ্ছে। ৫০০ বছর আগের মুসলিম শাসকদের কিছু অপকর্ম বিজেপি আজকের রাজনীতির পুঁজি। অযোধ্যার পর কাশী ও মথুরায় মন্দির মসজিদ বিতর্ক সামনে নিয়ে আসছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ বলে খ্যাত একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ধর্মচর্চার অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচার করে মানুষের ধর্মীয় আবেগ উস্কে দিয়ে মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধ ভাবধারায় আধুনিক ভারত শাসনের অরুচিকর ঘৃণ্য পথ বেছে নিয়েছে মোদি। এতে করে প্রতিনিয়ত সংবিধান লংঘিত হচ্ছে। অন্যদিকে ধর্মান্ধতার পরিপূরক হিসাবে অর্থনীতিতে লুটেরা পুঁজির পোষ্টার বয় হিসাবে কাজ করছে মোদি। মানুষের দৃষ্টি আর্থিক লুটপাট, নজিরবিহীন বেকারত্বও চরম দুর্দশা থেকে সরিয়ে দেয়ার মোক্ষম অস্ত্র হলো সবদেশে ধর্মব্যবসা ও ধর্মান্ধ রাজনীতি। সমাজের সর্বত্র চলছে আর্থিক অনাচার, ঘুষ ও দুর্নীতি। আইন সভার সদস্য বেচাকেনার মতো রাজনৈতিক অনৈতিকতা, শিক্ষা ও রাজনীতির সাম্প্রদায়িকীকরণ ও অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়ন গত ৭৫ বছরে ভারতবর্ষের মানুষ দেখেনি। নির্যাতন শুধু সংখ্যালঘুদের উপর নয় মুক্তমনের বেশ কয়েকজন লেখক সাংবাদিক ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে শত শত মানবাধিকার কর্মী। বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও ভিন্ন মতের উপর চলছে বিরামহীন হামলা। আমাদের দেশের মত নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। বিচার বিভাগকে মোদি প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেছে। এটা ফ্যাসিস্ট শাসনের পূর্ব লক্ষণ। মোদির এই ফ্যাসিস্ট শাসন, ধর্মীয় ঘৃণা ও হিংসা শুধু বিশাল ভারতকে খন্ড বিখন্ড করবে না, সারা উপমহাদেশকে এক গভীর অন্ধকারে নিয়ে যাবে। এখানেই আমাদের উদ্বেগ। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও বাম শক্তির অমার্জনীয় ব্যর্থতা আজ বাংলাদেশের প্রগতিশীল শক্তি ও দুর্বল সংখ্যালঘুদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড় করিয়েছে, কেননা এদেশের মৌলবাদী ধর্মান্ধদের শক্তির অন্যতম উৎস হলো মোদির ভাবধারা ও সাম্প্রদায়িকতা।
কংগ্রেসের ব্যর্থতা ও সেকুলার শক্তির অনৈক্য ও দুর্বলতায় বিরক্ত হয়ে পরিবর্তনের প্রত্যাশায় বাক চতুর মোদির “আচ্ছে দিনের” শঠতাপূর্ণ প্রতিশ্রুতিতে বিভ্রান্ত ও ধর্মীয় আবেশে আচ্ছন্ন মানুষ ভোট দিয়ে উন্নত এক ভারতের আশায় বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছিল। গত ৮ বছর ধরে উন্নয়নের নামে তাদের সামনে এখন খড়গ হাতে দাঁড়িয়ে আছে মোদির ভারত। আজকের ভারত সেদিনের আত্মমর্যাদা সম্পন্ন, বিশ্বে সমীহ জাগানো, আত্মনির্ভর, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের শাশ্বত ভারত নয়। আজকের ভারত বিদ্বিষ্ট ও এক বিবর্ণ ভারত। সে ভারত আজ বিপন্ন, বিপন্ন আজ পুরো উপমহাদেশ। শুধু বলতে চাই : কার নিন্দা কর তুমি/মাথা কর নত /এ আমার এ তোমার পাপ।
লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধওষুধের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে করণীয় প্রসঙ্গে
পরবর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় ভুয়া কবিরাজকে জরিমানা