স্বস্তিতে চট্টগ্রাম বন্দর

জাহাজ ভিড়ছে সরাসরি জেটিতে ।। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে প্রভাব ।। শিপিং সেক্টরে ইমেজ বৃদ্ধির আশা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সিঙ্গাপুর কিংবা কলম্বো থেকে আসা জাহাজ বহির্নোঙরে অপেক্ষা না করেই সরাসরি জেটিতে ভিড়ছে। গত এক মাসেরও বেশি সময়কালে ১৯৬টি জাহাজের উপর পরিচালিত সমীক্ষা শেষে সূত্র জানিয়েছে, উক্ত কন্টেনার জাহাজগুলোকে সর্বোচ্চ দুইদিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে একটি মাত্র জাহাজকে চারদিন অবস্থান করতে হয়েছিল।
সূত্র জানিয়েছে, করোনাকালে ঈদের ছুটি এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাসহ নানা কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে ভয়াবহ রকমের কন্টেনার জট তৈরি হয়েছিল। খালি কন্টেনারের অভাব, বেসরকারি আইসিডি থেকে পণ্য সরবরাহে সংকটসহ নানা কারণে জট কেবলই তীব্র হচ্ছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিল যে জাহাজ থেকে কন্টেনার খালাসে সংকট তৈরি হয়েছিল। ইয়ার্ডে দেখা দিয়েছিল স্থানাভাব। পরবর্তীতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বন্দরের সংকট সুরাহায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। এরমধ্যে ৩৮ ধরনের পণ্যের পাশাপাশি আমদানিকৃত সকল ধরনের পণ্যই গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বেসরকারি ১৯টি আইসিডি থেকে খালাসের অনুমোদন দেয়া হয়। এই ঘোষণার ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষ ইয়ার্ড থেকে বিপুল পরিমান কন্টেনার বেসরকারি আইসিডিতে সরিয়ে দেয়। একই সাথে জাহাজের বার্থিং সুবিধা বাড়ানোসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা কন্টেনার হ্যান্ডলিং থেকে শুরু করে পণ্য ডেলিভারি পর্যন্ত নানা বিষয় মনিটরিং শুরু করেন। এতে করে অভাবনীয় গতিশীলতা তৈরি হয় বন্দরে। লকডাউন এবং ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে দেখা দেয়া ভয়াবহ রকমের জটের অবসান ঘটে। মাত্র দিন কয়েকের ব্যবধানে পরিস্থিতি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি উন্নতি ঘটে। সিঙ্গাপুর কলম্বো কিংবা পোর্ট কেলাং থেকে আসা কন্টেনারবাহী জাহাজ সরাসরি জেটিতে ভিড়তে শুরু করে। সকালে বহির্নোঙরে পৌঁছার পর বিকেলের মধ্যে জেটিতে বার্থিং নেয়ার ঘটনা ঘটেছে অনেক। আবার কোনো কোনো জাহাজ একদিন অপেক্ষা করেই বার্থিং পেয়েছে।
গত ৮ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বমোট ১৯৬টি কন্টেনার জাহাজ ভিড়েছে। এসব জাহাজের অধিকাংশকেই বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হয়নি। গত ৮ আগস্ট বন্দরে দুইটি জাহাজ এসেছে। জাহাজ দুইটি বহির্নোঙরে অপেক্ষা না করেই বার্থিং পেয়েছে। ১৩ আগস্ট বন্দরে জাহাজ এসেছে ৫টি। এরমধ্যে ৪টি সরাসরি বার্থিং নিয়েছে। একটি জাহাজ একদিন অপেক্ষা করে পরদিনই জেটিতে ভিড়েছে। ১৯ আগস্ট জাহাজ এসেছে ৮টি। এরমধ্যে ৬টি জাহাজ সরাসরি বন্দরের জেটিতে ভিড়েছে। ২টি জাহাজ একদিন পরই জেটিতে নোঙর ফেলেছে। ১ সেপ্টেম্বর জাহাজ এসেছে ১১টি। এরমধ্যে ৪টি সরাসরি বার্থিং পেয়েছে, চারটি একদিন অপেক্ষা করে বার্থিং পেয়েছে অপর তিনটি জাহাজ দুইদিন অপেক্ষা করে বার্থিং পেয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর জাহাজ এসেছে ৬টি। এরমধ্যে ২টি সরাসরি, ২টি একদিন পর ১টি দুইদিন পর এবং একটি জাহাজকে চারদিন পর বার্থিং নিতে হয়েছে। গত অন্তত দুই মাসে চারদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে এমন জাহাজের সংখ্যা কেবলমাত্র ওই একটিই। এছাড়া অন্যান্য সব জাহাজই সরাসরি কিংবা এক দুইদিনের মধ্যেই বার্থিং পেয়ে কন্টেনার খালাস করেছে। জোয়ার ভাটা নির্ভর চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক সময় জোয়ারের জন্যও জাহাজকে বাড়তি অবস্থান করতে হয়। জোয়ারের আগে বহির্নোঙরে না পৌঁছলে ওই জাহাজকে ওইদিন ভিড়ানো সম্ভব হয় না।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক গতিশীলতা তৈরি হয়েছে। এই গতি চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য স্বস্তির উল্লেখ করে তিনি বলেন, একে ধরে রাখা সম্ভব হলে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সাথে বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের ইমেজ বাড়বে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাদা বাঘিনীর ঘরে হলুদ-কালো শাবক
পরবর্তী নিবন্ধইভ্যালির এমডি রাসেল ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার