স্বল্পমূল্যে খেজুর আমদানি, চড়া মূল্যে বিক্রি

নেপথ্যে ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্ট এসো’র নেতা ফলমন্ডিতে অভিযান, তিন আমদানিকারককে জরিমানা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৬ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

খেজুরের দাম নিয়ন্ত্রণে নগরীর বিআরটিসি ফলমন্ডিতে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল দুপুর ১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অভিযান চলে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। অভিযানে খেজুর আমদানি থেকে শুরু করে পাইকারি বাজার ও কমিশন এজেন্টদের ব্যাপক অনিয়ম ভ্রাম্যমাণ আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। তিন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অংকের জরিমানাও করা হয়।

এর মধ্যে আল্লাহর রহমত স্টোর জাহিদি, নাসার, আল মাদাফ, ফারাহসহ মধ্যম জাতের খেজুর আমদানি মূল্যের চেয়ে তিনচার গুণ বেশি দামে বিক্রি করছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আলী জেনারেল ট্রেডিং ১৬৮ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করেছে কেজিপ্রতি ১০৪ টাকা মূল্যে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জাহিদি জাতের খেজুর ২৫০৩০০ টাকা দরে বিক্রির প্রমাণ মিলেছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ফ্রেশ ফ্রুট গ্যালারি নামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযান পরিচালনাকারী টিমের দেওয়া তথ্যমতে, এই পাইকারি দোকানটি ঢাকাভিত্তিক দেশের বৃহত্তম খেজুর আমদানিকারক অ্যারাবিয়ান ফ্রুট ফ্যাক্টরি লিমিটেড এবং মদিনা ট্রেডিংয়ের হয়ে চট্টগ্রামে চড়া দামে খেজুর বিক্রি করে আসছিল। আমদানি তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানটি মোট ৯২১১.৭৫২ মেট্রিক টন খেজুর কেজিপ্রতি ৮৪.৬৪ টাকা দরে আমদানি করেছে। একটি এইচএস কোড দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২৫৩০ জাতের খেজুর আমদানি করেছে। আজওয়া, মেজডুল, মাবরুক, সাফওয়া, মরিয়ম প্রভৃতি উন্নত জাতের খেজুর আমদানি করেও সেগুলো কম দাম দেখিয়ে দেশে প্রবেশ করানো হয়েছে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে। এরপর এই খেজুর ভোক্তাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে। জাতভেদে খেজুর প্রতি কেজি ৫শ টাকা থেকে হাজার টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। মদিনা ট্রেডিংও একইভাবে খেজুর স্বল্পমূল্যে আমদানি এবং চড়া মূল্যে বিক্রি করে আসছিল।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে ৪০ হাজার ২৪ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এগুলোর গড় মূল্য ৮৯ টাকা ৩৬ পয়সা। কিন্তু অভিযান টিম ফলমন্ডির আড়তে গিয়ে দেখতে পায় পাইকারি বাজারে বিভিন্ন জাতের খেজুর চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে আজওয়া ৭৫০১০০০ টাকা, মাবরুম ১২০০১৩০০ টাকা, মরিয়ম ৫০০৮০০ টাকা, দাবাস ৪০০৬০০ টাকা, জাহিদি ২০০২৫০ টাকা, মেজডুল ১২০০১৩০০ টাকা, আলজেরিয়া ২৫০৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আমদানি তথ্যমতে, ফলমন্ডি বাজারে খেজুরের আমদানিকারক আছেন ১২ জন। অভিযানে গিয়ে তিন আমদানিকারকের সন্ধান পাওয়া যায়। এদের মধ্যে আল্লাহর রহমত স্টোর ডিসেম্বর থেকে চলতি মার্চ পর্যন্ত ২,৫৭২ মেট্রিক টন খেজুর মোট ৩৩টি এলসির মাধ্যমে আমদানি করে; যেখানে একটি এইচএস কোড দেখিয়ে খেজুর আমদানি করা হয়েছে। গড় আমদানি মূল্য ৭০.১৪ টাকা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, পাইকারি ফল ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম চড়া দামে পাইকারি খেজুর বিক্রি করতে ব্যবসায়ী ও কমিশন এজেন্টদের বাধ্য করছেন। তিনি অ্যারাবিয়ান ফ্রুটস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের মালিকের পাশাপাশি সাথী ফ্রুটসেরও স্বত্বাধিকারী। অন্যদিকে রমজান এলে সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিনও দেশিবিদেশি ফল চড়া দামে বিক্রি করতে আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্টদের মাধ্যমে চক্র গড়ে তোলেন। তিনি জানান, যেসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়া যাবে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক মিনিট অন্ধকারে পুরো দেশ
পরবর্তী নিবন্ধমনোনয়ন নিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নোমানসহ ১৮ জন