স্বপ্নপূরণে আরো এক ধাপ

আনোয়ারা প্রতিনিধি | রবিবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় টিউব স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে টানেলের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে এই টিউবের কাজ শুরু হয়।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল ঘিরে বদলে যেতে শুরু করেছে পুরো এলাকা। চীনের সাংহাইয়ের ওয়ান সিটি টু টাউনের আদলে চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে এতদিন যে স্বপ্নের কথা বলা হচ্ছিল, টানেল নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতির মাধ্যমে সেই স্বপ্ন এখন পূরণ হতে যাচ্ছে। টানেলটি নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বে গড়ে উঠবে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গতকাল বেলা ১১টায় কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় ঢাকা থেকে সেতুমন্ত্রীর সাথে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সেতু বিভাগের সচিব মো. বেলায়েত হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আনোয়ারা প্রান্তে টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদসহ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম শহরে চীনের সাংহাই নদীর মতো ওয়ান সিটি অ্যান্ড টু টাউন মডেল গড়ে উঠবে। এর মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কঙবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পাশাপাশি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৬১ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। আনোয়ারা প্রান্তের প্রথম টিউব থেকে ১২ মিটার দূরে শেষ টিউবটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মাটির ১৮ মিটার থেকে ৪৩ মিটার নিচ দিয়ে যাবে টানেল বোরিং মেশিন। চীন থেকে আনা প্রায় তিনতলা সমান উঁচু বিশাল টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) এরই মধ্যে বসে গেছে আনোয়ারা পয়েন্টে। ১২ মিটার গভীরে বসানো হয়েছে মেশিনটি। সেখানে খনন শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৩ মিটার বা ১৪০ ফুট গভীর পর্যন্ত চলে যাবে। টিবিএম আনোয়ারা প্রান্ত থেকে নদীর তলদেশে ঢুকে আরেকটি দুই লেনের সড়ক খনন করে পতেঙ্গা অংশে বের হবে। এ কারণে কর্ণফুলী নদীর পানিপ্রবাহে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটাবে না।
এদিকে আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ সড়কের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কে ১২টি কালভার্ট, ১ কিলোমিটার ফ্লাইওভার, ৪টি আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ চলছে। মূল সড়কের বালু ফিলিংয়ের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে সংযোগ সড়কের ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে।
নির্মাণাধীন এই টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর নিচে প্রথম টানেল উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। মীরসরাই থেকে কঙবাজার পর্যন্ত আরেকটি মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
টানেল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় টিউবের খননকাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। নদীর তলদেশে হওয়ায় যথাসময়ে কাজ শেষ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি জানান, প্রথম টিউবের কাজ আগস্টের শুরুতে শেষ হয়।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেল নির্মাণে বোরিং অর্থাৎ খননকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক বেল্টেই সবকিছু
পরবর্তী নিবন্ধবিমান ও জাহাজ চলাচলে সমস্যা