সৌভাগ্যের দুয়ার খুলছে বঙ্গোপসাগর

বিশ্ব মহাসাগর দিবস আজ

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৮ জুন, ২০২৩ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর এক পঞ্চমাংশ দেশের কোন সমুদ্রসীমা নেই। এ দেশগুলো ল্যান্ডলক্‌ড বা স্থলসীমাবেষ্টিত ভূখণ্ড হিসাবে পরিচিত। কিন্তু বাংলাদেশ সাগরবেষ্টিত এমন এক ভূখণ্ড, যার রয়েছে স্থলভাগের প্রায় সমান সমুদ্রখণ্ড। আর এ সমুদ্রকে ঘিরে সুনীল অর্থনীতির নামে দেশে স্বপ্নের নতুন নতুন দুয়ার খুলছে। তাই সমুদ্রের গুরুত্ব তুলে ধরতে আজ ৮ জুন বিশ্ব সমুদ্র দিবসে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিচার্স ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে কক্সবাজারে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জানান, ৮ জুন বিশ্ব সমুদ্র দিবস উপলক্ষে বোরির উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টায় বোরি মিলনায়তনে ‘গ্রহ মহাসাগর, পরিবর্তন হচ্ছে উর্মিমালা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সেমিনার ও বিকালে সমুদ্র সৈকতে সমুদ্র সাক্ষরতা সংক্রান্ত প্রচারণা। আর এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

তিনি জানান, পৃথিবীর মোট ৬৪টি লার্জ মেরিন ইকোসিস্টেম বা সমুদ্রের মধ্যে অন্যতম আমাদের বঙ্গোপসাগরও। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম রিভার সিস্টেম গঙ্গাব্রহ্মপুত্রমেঘনা বা পদ্মাযমুনামেঘনা বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিপুল পরিমাণ স্বাদু পানি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। যার ফলে বাংলাদেশের উপকূল ও সাগরের পানি পৃথিবীর অন্যতম উর্বর জলরাশি হিসাবে স্বীকৃত, যেখানে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ জীববৈচিত্রসহ বিশ্বে বিপন্নপ্রায় বিরল কয়েকটি সামুদ্রিক জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাসস্থল (হট স্পট)। বঙ্গোপসাগর হল ভারত মহাসাগরের উত্তরপূর্ব অংশ, যার পশ্চিম ও উত্তরপশ্চিমে ভারত, উত্তরে বাংলাদেশ এবং পূর্বে মায়ানমার এবং ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দ্বারা আবদ্ধ। এর দক্ষিণ সীমা হল সঙ্গমান কান্দা, শ্রীলঙ্কা এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার উত্তরপশ্চিমতম বিন্দুর মধ্যে একটি রেখা। এটি বিশ্বের বৃহত্তম জল অঞ্চল যাকে উপসাগর বলা হয়। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বঙ্গোপসাগরের ওপর নির্ভরশীল দেশ রয়েছে। যারমধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ অন্যতম। এর প্রাথমিক প্রবাহ ভারত মহাসাগর, আর অববাহিকার দেশ হল বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৯০ কিমি (,৩০০ মাইল) এবং সর্বোচ্চ প্রস্থ ১ হাজার ৬১০ কিমি (,০০০ মাইল)। এর উপরিভাগের আয়তন ২৬ লক্ষ কিমি (১০ লাখ বর্গ মাইল)। বঙ্গোপসাগরের সর্বোচ্চ গভীরতা ৪ হাজার ৬৯৪ মিটার বা ১৫ হাজার ৪০০ ফুট। তবে গড় গভীরতা ২ হাজার ৬০০ মিটার (,৫০০ ফুট)। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরের পূর্ব তীরে এবং বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন ও বেঙ্গল টাইগারের প্রাকৃতিক আবাস সুন্দরবন বঙ্গোপসাগরের উত্তর তীরে অবস্থিত।

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের নিজস্ব জলসীমার আয়তন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। সম্প্রতি দেশের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া, ২২০ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল ও ৬১ প্রজাতির সিগ্রাস চিহ্নিত করেন। আমাদের বঙ্গোপসাগরে রয়েছে মহাসাগরীয় জায়ান্ট হিসাবে পরিচিত বিশ্বের বিরল প্রজাতির তিমি ও ডলফিন।

ওয়ার্ল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির সর্বশেষ জরিপ মতে বাংলাদেশে ১৩ প্রজাতির সিটাসিয়ান বা জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে, যার মধ্যে ৫ প্রজাতির তিমি, ৭ প্রজাতির শুশুক (ডলফিন) ও এক প্রজাতির হুছুম (পরপইস)

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ বঙ্গোপসাগরের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্লাস্টিকসহ নানা দূষণের কারণে আগামী ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সাগর ব্যবহার অযোগ্য হয়ে ওঠতে পারে বঙ্গোপসাগর। এছাড়া সাগরের পানিতে মাইক্রোবায়াল পলিউশন বা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূষণ বেড়ে যাওয়ার কারণে পর্যটন শিল্পও হুমকির মুখে পড়তে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকজনের ১২ বছরের কারাদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধইপিজেডে অপহরণ, নিয়ে যায় মিয়ানমার