সৌন্দর্য হারাবে নাফাখুম সাতভাইখুম

রেমাক্রি খালের উৎপত্তিস্থলে পাথর উত্তোলন

বান্দরবান প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২৫ মে, ২০২১ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানে রোমাঞ্চকর থানচি উপজেলা ভ্রমণের মূল আকর্ষণ হচ্ছে নৈসর্গিক সৌন্দর্য ছড়ানো অমিয়খুম, সাতভাইখুম, নাফাখুম এবং রেমাক্রি জলপ্রপাত। আর প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য পাথর এবং স্বচ্ছ পানির জলধারা। তবে প্রকৃতি ধ্বংস করে রেমাক্রি খালের আগায় উৎপত্তিস্থলের ঝিরি-ঝরণা পথের প্রাকৃতিক সম্পদ পাথর অবৈধভাবে উত্তোলনের কাজ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, থানচি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চলের অসংখ্য ছোটবড় পাহাড়ি ঝিরি, ঝর্ণা, ছড়া, খালের পানি বয়ে যুক্ত হয়েছে রেমাক্রি খালে। রেমাক্রি খালের আগায় উৎপত্তিস্থলে রয়েছে নৈসর্গিক সৌন্দর্য ছড়ানো দর্শণীয় পর্যটন স্পট অমিয়খুম, সাতভাইখুম, নাফাখুম। ঝর্ণাধারা গুলোর পানি পাহাড়, ছড়া খাল ডিঙ্গিয়ে রেমাক্রি জলপ্রপাত হয়ে মিশেছে সাঙ্গু নদীতে। রোমাঞ্চকর থানচি উপজেলায় ভ্রমণের মূল আকর্ষণ হচ্ছে নৈসর্গিক সৌন্দর্য ছড়ানো উল্লেখিত পর্যটন স্পটগুলো। দর্শণীয় ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতেই দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটক সারাবছর ভিড় জমায় থানচিতে। তবে বর্ষার শেষদিকে এবং শীতের শুরুতে পর্যটকের চাপ থাকে অন্যান্য সময়গুলোর তুলনায় বেশি। নামপ্রকাশে অনিশ্চুক ক’জন রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, থানচি উপজেলার উন্নয়নের মূলেই রয়েছে পর্যটন শিল্পের বিকাশ। আর পর্যটনের মূল আকর্ষণ হচ্ছে অমিয়খুম, সাতভাইখুম, নাফাখুম এবং রেমাক্রি জলপ্রপাত।
কিন্তু কিছু অসাধু পাথর খেকো পাহাড়ের এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য ধ্বংসের কাজ করে চলেছে। উন্নয়নের নামে পাথর খেকোরা রেমাক্রি খালের উৎপত্তিস্থল থেকে ছোটবড় পাথর উত্তোলনের রীতিমত প্রতিযোগীতায় নেমেছে। থানচি-লীক্রে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যবহারের অজুহাতে প্রাকৃতিক সম্পদ পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে মেশিনে ভেঙে কংক্রিট বানিয়ে বিক্রি করছে ঠিকাদারদের। নিরাপত্তার অজুহাতে নির্মাণাধীন সীমান্ত সড়কে জনসাধারণ এবং সরকারি সংস্থার লোকজনের যাতায়াতে বিধি নিষেধ থাকায় ফায়দা নিচ্ছে সংঘবদ্ধ পাথর খেকোরা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রকৃতি দেখার জন্যই, যদি মানুষ ভীড় করে থানচিতে, আর মানুষের সুবিধার্থেই যদি হয় এই উন্নয়ন। তাহলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই যদি ধংস হয়ে যায়, তবে মানুষ কেন আসবে থানচিতে, আর মানুষ নাই আসলে উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা কি?।
পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান অফিসের উপ-পরিদর্শক আব্দুচ সালাম জানান, থানচিতে পাথর উত্তোলন বন্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে কজনকে জরিমানা করা হয়েছে। পরিবেশ আইনে মামলা করা হয়েছে দোষীদের বিরুদ্ধে। রেমাক্রি খালের আগায় কয়েকটি স্থানেও অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলনের খবর পেয়েছি। কিন্তু থানচি-লিক্রে নির্মাণাধীন সড়কে চলাচলে কিছুটা বিধিনিষেধ থাকায় ঘটনাস্থলে পৌছাতে পারিনি। তবে ইউএনওর নেতৃত্বে সেখানেও অভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজি জানান, প্রাকৃতিক পাথর উত্তোলনের কোনো নিয়ম নেই। পরিবেশ ধংস করে পাথর উত্তোলন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। অপরাধীদের জেল জরিমানা ছাড়াও উত্তোলন করা পাথরগুলো নিলাম না দিয়ে পুনরায় ঝিরিতে ফেলতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাথরের নিলাম ও পারমিট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিনাজপুরে নদীতে গোসল করতে নেমে চবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধদূরপাল্লার গণপরিবহন চালু