সৈকতে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলায় প্রাকৃতিক সুরক্ষা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রলয়ংকরী সাইক্লোন ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কক্সবাজার সৈকতের একটি আদর্শ প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) বিজ্ঞানীরা। গত মাসে লঘুচাপজনিত পূর্ণিমার উচ্চ জোয়ারে কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্নস্থানে ভাঙন দেখা দিলে বোরি’র বিজ্ঞানীরা এর কারণগুলো অনুসন্ধানের পর সৈকতে একটি আদর্শ প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা সংরক্ষণের অপরিহার্যতার বিষয়টি অনুধাবন করেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।
তিনি জানান, গতমাসে লঘুচাপজনিত পূর্ণিমার উচ্চ জোয়ারের ধাক্কায় কঙবাজার সৈকতের বিভিন্নস্থানে ভাঙন দেখা দিলে বোরি’র বিজ্ঞানীরা এর কারণগুলো অনুসন্ধান শুরু করেন। অনুসন্ধানের অংশ হিসাবে বোরি’র ১৭ জন বিজ্ঞানী শনিবার বিকালে টেকনাফ সমুদ্র সৈকত এবং রোববার উখিয়া সৈকত পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, সৈকতের যেখানে উঁচু বাঁধ, পাকা স্থাপনা অথবা ঝাউগাছ রয়েছে, কেবল সেখানেই সৈকত ভেঙেছে। আর যেখানে সাগরলতা-বালিয়াড়ি ও কেয়া-নিশিন্দার বন রয়েছে সেখানে সৈকত মোটেও ভাঙেনি। বরং জোয়ারের ধাক্কায় সৈকত থেকে ময়লা-আবর্জনা এসে বালিয়াড়িগুলো আরো উঁচু হয়েছে। বোরি মহাপরিচালক বলেন, দুর্যোগ প্রতিরোধে সৈকতের সাগরলতা-বালিয়াড়ি ও কেয়া-নিশিন্দা-তুলসী বনের প্রাকৃতিক ক্ষমতা দেখে আমরা বিমুগ্ধ হয়েছি এবং সৈকতে একটি আদর্শ প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা সংরক্ষণের অপরিহার্যতার বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছি।
৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্র তীরের ভাঙন ঠেকাতে ঝাউবনের একক বায়োশিল্ড ব্যর্থ বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন স্থানীয় জনসাধারণসহ কিছু পরিবেশ বিজ্ঞানী। সৈকতের অগ্রবর্তী অংশে সাগরলতার পরিবর্তে দীর্ঘ উচ্চতার ঝাউগাছ লাগানোর কারণে বায়ুচাপে সৈকতের বালিয়াড়ি থেকে মাটি সরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
দেশের বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনসারুল করিম বলেন, ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে পারেনি ঝাউগাছ। বরং ঘূর্ণিঝড়ের সময় তীব্র বায়ুর ঘর্ষণে ঝাউগাছগুলোতে আগুন ধরে যায়। পরে সৈকতের প্রায় সব ঝাউগাছ মরে যায়। এ জন্য সৈকতের অগ্রবর্তী অংশে বালিয়াড়িতে ঝাউগাছের পরিবর্তে সাগরলতাসহ লতা জাতীয় উদ্ভিদ রাখা উচিত। আর বালিয়াড়ির পেছনে কেয়া-নিশ্চিন্দা-তুলসি-লনটানার একটি স্তরের পরেই কেবল ঝাউগাছসহ অন্যান্য দীর্ঘ উচ্চতার উদ্ভিদগুলো লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউট সৈকতে একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা তৈরির জন্য যে গবেষণা শুরু করেছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্থানীয় উদ্ভিদ দিয়ে কঙবাজার সৈকতে একটি আদর্শ বায়োশিল্ড প্রতিষ্ঠা করা হলে সৈকতের হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সুরক্ষার পাশাপাশি সৌন্দর্যও ফিরে আসবে। উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রায় ৩ বছর আগে সৈকতের একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা হিসাবে সাগরলতা-বালিয়াড়ির ভূমিকার বিষয়টি প্রথম তুলে আনে দৈনিক আজাদী। এরপর বোরির বিজ্ঞানীরাই প্রথম কক্সবাজার সৈকতে একটি আদর্শ বায়োশিল্ড নিয়ে কাজ শুরু করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনসিসি ক্যাডেটরা দেশ সেবায় অবদান রাখছে
পরবর্তী নিবন্ধদেশ বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া হবে : এমপি লতিফ